সরকারের বর্বরতা যেকোনো স্বৈরাচারের নির্মমতাকেও হার মানিয়েছে: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জুলাই ২০২৪, ১৮:৩৮
অ- অ+

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজীর স্থাপন করেছে তা দেশ-বিদেশের সব স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অবৈধ সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে গ্রেপ্তার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন খোকনকে ৩ দিন পর আদালতে তোলা হয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘অব্যাহত গতিতে দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মী বাড়ি বাড়ি তল্লাশী হচ্ছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বাসায় তল্লাশী চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দকে গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন/চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে, যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদেরকে গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে। সরকারকে এ ধরণের রোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশে সরকারের দায়িত্ব হলো-রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া, গত কিছুদিন যাবত কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনরত তখন সেই মুহূর্তে সরকার প্রধানসহ সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরা তাদেরকে তাচ্ছিল্য করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরকে নির্দেশ দেয় তাদেরকে নির্মূল করার। সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে জনগণের টাকায় কেনা গুলি, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদেরকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আহত করেছে যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী অবলক্ষণ করেছে।’

ফখরুল বলেন, ‘এই নির্মম অত্যাচারে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ হতবাক ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারাদেশে কর্মসূচীও পালন করেছে। কিন্তু অবৈধ সরকার মরিয়া হয়ে রাষ্ট্রের সব বাহিনীসহ দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে সাধারণ মানুষ, বিএনপি নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ব্লক রেড দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। এখন পর্যন্ত তাদের হিসাবে প্রায় ৩ হাজার গ্রেপ্তার করছে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্র জনতার ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বরাবরই আওয়ামী লীগ লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় গেছে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গত কয়ক দিন যে পরিমাণ নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষকে গুলি চালিয়ে পাখির মতো হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে তা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।’

‘গত কয়েকদিনে কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে জনগণ তার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে চায়। এছাড়া জনগণের টাকায় কেনা কী পরিমাণ গোলাবারুদ, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাবও জনগণ জানতে চায়। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নিবে জনগণ’- বলেন ফখরুল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্মমভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তাই এই অবৈধ সরকারকে বলবো- অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন।’

বিএনপি মহাসচিব এই গণহত্যা, নির্যাতন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সব দেশ প্রেমিক মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভয়াবহ ফ্যাসীবাদী শাসক গোষ্ঠীকে পরাজিত করে জনগণের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দূর্বার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তারকৃত বিএনপির উপরোল্লিখিত নেতৃবৃন্দসহ গ্রেপ্তারকৃত সব নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সকলের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব৷

(ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/জেবি/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ পৌরসভায় শেষ হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ: অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল মারল কে?
কিছু ঘটলেই যমুনায় যাওয়ার প্রবণতা সহ্য করা হবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ 
সিলেট থেকে ৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনায় গেল প্রথম হজ ফ্লাইট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা