শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা: ঢাবিতে একদিনের শোক ঘোষণা, অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একদিনের শোক ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস সব ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
তিনি বলেন, নিহত ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্যর স্মৃতির প্রতি সম্মান স্বরূপ বৃহস্পতিবার সারাদিন শোক দিবস ঘোষণা ও অর্ধদিবস ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
এসময় এ হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন উপাচার্য।
উপাচার্য বলেন, আমরা সাম্য হত্যার ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। শিক্ষক হিসেবে এটা আমাদের জন্য বেদনার। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহ থেকেই নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌগোলিক অবস্থান মাথায় নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এখানে বহুমাত্রিক সমস্যা রয়েছে যা দীর্ঘদিনের। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন নয়, এটি গণপূর্ত অধিদফতরের অধীনে। আমরা শিক্ষার্থীদের সরাসরি দাবির প্রেক্ষিতে বাস্তবসম্মত আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কিছুটা সফলতা এসেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সব সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা পাইনি।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটা জনপরিসর, সেক্ষেত্রে এখানে বহিরাগত যান নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন মহলের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি এবং আমাদের স্বদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক কিছু করতে পারিনি।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথমত রাজুর পেছনের যে গেইটটি রয়েছে সেটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরও এক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। শিগিরই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।
তিনি আরও জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পর্যাপ্ত লাইট ও সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ডিএমপি যৌথ প্রক্রিয়ায় করবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সহযোগিতা করবে। রমনাকে মাথায় রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে একটা আধুনিক পার্কে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এছাড়া ডিএমপির সঙ্গে আলোচনা করে একটা ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমাদের তরফ থেকে নিরাপত্তা ইস্যুতে আমাদের সীমাবদ্ধতা থেকেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা সাম্যের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি, পুলিশ তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, অলরেডি তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যদেরও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলমান আছে।
নিয়াজ আহমেদ খান আরও বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ছাত্র সংগঠনগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আমাদের একটা বৃহত্তর কনসেনসাসে আসা প্রয়োজন। মৌলিক কিছু প্রশ্নে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এরপর বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা সাম্যের ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম রাজধানীর শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৪মে/এমআর)

মন্তব্য করুন