নির্মাণসামগ্রী বিক্রিতে দীর্ঘদিনের ‘সিন্ডিকেট প্রথা’ ভেঙে দিলেন বিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২০ মে ২০২৪, ২০:৫৮| আপডেট : ২০ মে ২০২৪, ২১:২১
অ- অ+

বরিশাল নগরীতে বাড়ি কিংবা স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মাণসামগ্রী কিনতে হয়; তা না হলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন বাড়ির মালিক বা ঠিকাদার। দীর্ঘদিন নগরীতে চলছিল এই অঘোষিত প্রথা। এবার সেই প্রথা ভেঙে দিয়েছেন বিএমপি (বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ) কমিশনার জিহাদুল কবির। তার ঘোষণা-বরিশাল নগরীতে এ ধরনের কার্যক্রম আর চলবে না। কেউ যদি ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী জোর করে কোনো বাড়ির মালিকের কাছে বিক্রির চেষ্টা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার এই ঘোষণার পর সোমবার চিত্র অনেক পাল্টে গেছে। এরই মধ্যে বিএমপি কমিশনারের বার্তা সংবলিত পাঁচ শতাধিক পোস্টার শহরের বিভিন্নস্থানে সাঁটানো হয়েছে।

নগরীর একাধিক বাড়ির মালিক ও ঠিকাদার ঢাকা টাইমসকে জানান, বরিশালে দীর্ঘদিন একটি রেওয়াজ ছিল কেউ বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান গড়তে হলে নির্মাণসামগ্রী নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিনতে হবে। এক্ষেত্রে ইট, বালি, সিমেন্ট, রডসহ সবকিছুই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হতো। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে থেকে কোনো কিছু কেনা যেত না। আবার নির্মাণসামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এসে অর্ডার নিয়ে যান; এক্ষেত্রে তারা তাদের মন মতো জিনিস সরবরাহ করেন। এতে বেশি দামে জিনিস কিনতে হয়। যদি কেউ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মাণসামগ্রী না নিতেন তাহলে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো। এসব বন্ধে বর্তমান পুলিশ কমিশনার এবার কঠোর হয়েছেন।

এদিকে নগরীর বিভিন্ন নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে কমিশনার জিহাদুল কবিরের নির্দেশনায় পোস্টার সাঁটিয়েছে পুলিশ। তাতে স্লোগান দেওয়া হয়েছে- ‘এ বাড়ির নির্মাণ কাজ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে।’

মাঠ পর্যায়ে এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে নগরীর প্রতিটি বাড়ির মালিককে সচেতন করতে কাজ করছে পুলিশ। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেওয়া হয়েছে নির্দেশ, যা মেনে চলতে বলা হয়েছে। কমিশনারের এমন বার্তা সরাসরি মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছেন ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তারা।

পোস্টারে আরও বলা হয়েছে, ‘বাড়িওয়ালা নিজ পছন্দমত সুবিধাজনক জায়গা থেকে ইট, বালু, রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করবেন। কেউ ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় ও বিক্রয়ের চেষ্টা করলে অথবা চাঁদা দাবি করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে কোনো চাঁদাবাজ সংক্রান্তে কোনো অভিযোগ থাকলে, সংশ্লিষ্ট থানায় বা ব্যানারে থাকা নিম্নলিখিত নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিভিন্ন সময় এসব সমস্যার কথা (বাড়ি নির্মানে হয়রানী) পুলিশকে বলেছেন। কিন্তু এতোদিন কেউ কার্যকর ভূমিকা নেয়নি।

একাধিক বাড়ির মালিক বলেন, একটা বাড়ি করতে ইট, বালি, সিমেন্ট ছাড়াও অনেক কিছু প্রয়োজন। সবই সিন্ডিকেট সরবরাহ করত। নিজেদের দাম যাচাই-বাছাইয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। দরজা, জানালা, ইলেক্ট্রিক জিনিসও সিন্ডিকেট সরবরাহ করত। এতে বাড়তি টাকা দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। বড় ঠিকাদাররাও তাদের কাছে জিম্মি। বরিশাল শহরে সেতু, কালভার্ড বা বড়বড় ভবন নির্মাণেও নির্মাণ সামগ্রী নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হতো। না হলে মারধর, চাঁদা আদায়সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো।

নির্মাণসামগ্রীর সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে বিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শওকত আনোয়ার ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ী বাড়ি নির্মাণকারী মালিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে; যা একপ্রকার চাঁদাবাজদের মতো চাপ প্রয়োগ করে। যেমন- রড, বালু, সিমেন্ট তাদের কাছ থেকেই কিনতে হবে। না হলে বাড়ি করতে বাধা দেয়, চাঁদা দাবি করে। এসব যেন বন্ধ হয় একারণে পুলিশ কাজ করছে। কেউ এধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে যাতে পুলিশি সেবা পান সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কমিশনার স্যারের নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা মাঠে কাজ করছি। কোনো অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।

পুলিশ বলছে, ব্যবসায়ীদের এধরনের আচরণ একপ্রকার নীরবে চাঁদাবাজির মতো হয়ে গেছিলো। এসব নিয়ে কেউ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন না। তারা স্থানীয়ভাবে কাউন্সিলর বা মেম্বারকে ম্যানেজের চেষ্টা করেন। তবে তাতে সুফল কমই পান। দীর্ঘদিন পুলিশের নজরে এসব বিষয় আসছিল, এরপরই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সরকারি অনেক ব্রিজ কালভার্ট করতে গিয়ে ঠিকাদার হয়রানির শিকার হয়েছেন। নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করেন এমন অনেক ব্যবসায়ী কাজের ওখানে গিয়ে বলেন, ‘তোমাদের সব আমাদের কাছ থেকে নিতে হবে। আমার সঙ্গে বসো, এরপর কাজ করো’-এমন অভিযোগও পুলিশ পেয়েছে।

বিএমপি কমিশনার জিহাদুল কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বরিশালে যোগ দেওয়ার পর বিষয়টি জানতে পেরে কাজ শুরু করি। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচশতাধিক নির্মাণাধীন ভবনে পুলিশের পক্ষ থেকে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। যারা ভবন নির্মাণ করছেন তারা আমাদের এই কাজে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছি। এধরনের কাজ আর হতে দেয়া হবে না। যারা ভবন নির্মাণ করছেন বা ঠিকাদার আছেন তারা এখন থেকে তাদের সুবিধা মতো জায়গা থেকে নির্মাণ সামগ্রী কিনবেন, কেউ তাদের বাধা দেবে না।’ এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চান জিহাদুল কবির।

কেউ হয়রানির শিকার হলে পুলিশ কর্মকর্তাদের নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

যেসব নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে-

অফিসার ইনচার্জ (এয়ারপোর্ট থানা): ০১৩২০-০৬৫৬৩৪, সহকারী পুলিশ কমিশনার (এয়ারপোর্ট থানা): ০১৩২০-০৬৫৫৭৪ এবং উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর): ০১৩২০-০৬৫৫৫০। এছাড়া বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুম নম্বরে (০১৩২০০৬৬৯৯৮) অভিযোগ জানানো যাবে।

(ঢাকাটাইমস/২০মে/এসএস/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা