বিশেষ দূত এরশাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটইমস
| আপডেট : ১১ মার্চ ২০১৮, ০৭:৫৭ | প্রকাশিত : ১১ মার্চ ২০১৮, ০৭:৫৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা ছিল না গত সোয়া চার বছরে। পর্দার আড়ালেও তিনি কিছু করেছেন, এমন কথা জানেন না জাতীয় পার্টির নেতারাও।

তবে ভূমিকা না রাখলেও এরশাদ ঠিকই সরকারি ‍সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। আর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ হওয়ার সময় প্রতি মাসে তার পেছনে খরচের একটা হিসাব পাওয়া যায়, যা গত কয়েক বছরে আরও বেড়েছে। ওই সময়ের হিসাব অনুযায়ী গত সোয়া চার বছরে বিশেষ দূত এরশাদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে আড়াই কোটি টাকারও বেশি।

সংসদে প্রধান বিরোধী দল আবার সরকারের অংশীদারও জাতীয় পার্টি। চার বছর এভাবে পার করে এসে সম্প্রতি সংসদে ‘লজ্জা’ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এরশাদও চলতি মাসেই দুই বার জানিয়েছেন মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন তার দলের নেতারা, আর তিনিও আর বিশেষ দূত থাকবেন না।

বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা ছিল লেজেগুবরে। হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ছেড়ে এরশাদ নির্বাচন বর্জনেরও ঘোষণা দেন। তবে রওশনের নেতৃত্বে দলের একাংশ আবার ভোটে যায়।

এক পর্যায়ে এরশাদকে ভর্তি করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ৫ জানুয়ারির ভোট পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। আবার এরশাদ তিনটি আসন থেকে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করলেও লালমনিরহাট ও রংপুরের দুটি আসনে তার প্রার্থিতা রয়ে যায় সময় মতো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন না করায়। আর লালমনিরহাটে হারলেও রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি।

‘অনিচ্ছায়’ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ নেবেন না বলে প্রথমে জানান এরশাদ। তবে ভোটের ছয় দিন পর ১১ জানুয়ারি অনেকটা নাটকীয়তার সঙ্গেই শপথ নেন তিনি।

পরদিন বঙ্গভবনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী। শপথ নেয় মন্ত্রিসভা। একই দিন এক প্রজ্ঞাপনে এরশাদকে মন্ত্রী মর্যাদায় বিশেষ দূত করা হয়।

বিশেষ দূত হওয়ার পর জাতীয় সংসদ ভবনে একটি অফিস বরাদ্দ পান এরশাদ। একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং দুই জন অফিস স্টাফও নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশেষ দূত হিসেবে বেতন-ভাতাসহ সরকারি সুবিধাও পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ার পর এরশাদ বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আর এ সম্পর্ককে কাজে লাগাতেই প্রধানমন্ত্রী তাকে এ পদে নিযুক্ত করেছেন। তিনি এ দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে কাজ করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন।

কিন্তু সরকারের সোয়া চার বছর শেষ হয়ে গেলেও বিশেষ দূতের বিশেষ কোনো ভূমিকার কথা শোনা যায়নি। মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদনও এসেছে, কিন্তু এরশাদ তার ভূমিকার বিষয়টি পরিস্কার করেননি।

এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হয়ে বিদেশে সফর কিংবা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কন্নোয়নের ক্ষেত্রেও এরশাদকে কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

এই সোয়া চার বছরে এরশাদ চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। তবে এর কোনোটিই বিশেষ দূত হিসেবে নয়।

ঢাকাটাইমসকে এরশাদের একান্ত সচিব খালেদ আক্তার বলেন, ‘স্যার যে বিদেশ সফরে গিয়েছেন সেগুলো মূলত ছিল ব্যক্তিগত ও চিকিৎসার জন্য।’

এরশাদ বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এই পদের কোনও কার্যকারিতা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি আজ পর্যন্ত।

মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির একজন সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে কিছুই করেননি। তবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন।’

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পরে এরশাদের প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূত ছাড়া আর কোনো পদই বাকি ছিল না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী এরশাদকে তার সঙ্গে ভিড়িয়ে রাখতেই এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন।’

সংসদ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত নিয়োগের সময় এরশাদের মাসিক বেতন ছিল ৫৩ হাজার ১০০ টাকা, যা সম্পূর্ণ করমুক্ত। এরপর সংসদ সদস্য এবং সরকারে থাকা ব্যক্তিদের বেতন ভাতা বাড়ার পর এরশাদের বেতনও বেড়েছে।

আবার বিশেষ দূত হিসেবে এরশাদ পুলিশ প্রটোকল, চলাফেরার জন্য জাতীয় পতাকাবাহী সরকারি পাজেরো গাড়ি পাচ্ছেন। এছাড়া বিশেষ ভাতাসহ বিদেশ ভ্রমণ, বিমা, সরকারি খরচে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা, দেশ-বিদেশে যোগাযোগে বাসা ও কার্যালয়ে ল্যান্ড ফোন এবং মুঠোফোনের খরচ দিচ্ছে সরকার। সব মিলিয়ে ২০১৪ সালের শুরুতে এরশাদের পেছনে সরকারের মাসিক খরচ ছিল কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা।

সম্প্রতি সরকারে জাতীয় পার্টির অংশীদারত্ব বা এরশাদের বিশেষ দূতের প্রসঙ্গটি এসেছে রওশন এরশাদের একটি বক্তব্যকে সামনে রেখে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে রওশন বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আসলে সরকারি দলে নাকি বিরোধী দলে- কেউ এমন প্রশ্ন রাখলে এর সদুত্তর দিতে পারি না। ফলে জাপা তার প্রাপ্য সম্মানের জায়গায় নেই।’

এরপর ২ মার্চ এরশাদ রংপুরে বলেন, ‘বর্তমান মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির যে তিনজন মন্ত্রী আছেন, আমিও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় আছি। আমরা কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করব। কারণ মন্ত্রিত্ব নিয়ে আমরা সমালোচনার মুখে পড়েছি। দেশের মানুষের কাছে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।’

দুই দিন পর গাইবান্ধায় গিয়ে এরশাদ আবার বলেন, তার দল সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চায়। এজন্য শিগগিরই দলীয় মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। তাদের পদত্যাগের পর তিনিও বিশেষ দূতের আসন থেকে পদত্যাগ করবেন।

অবশ্য এরশাদের এমন বক্তব্য এর আগেও এসেছে। বহুবার তিনি ও দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন জানিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। ২০১৭ সালের ৩ আগস্টও রাজধানীর বনানীতে দলীয় এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভা থেকে তার দলের সদস্যদের এবং বিশেষ দূতের পদ থেকে তার নিজের পদত্যাগের কথা বলেন এরশাদ। কিন্তু এরপর আর কিছুই হয়নি।

এবার মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির সদস্যরা পদত্যাগ করবেন-এমন কোনো আভাস এখনও নেই। এ নিয়ে দলে বা একজন মন্ত্রী ও দুইজন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/এমএম/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

সাকিবের বিএনএমে যোগ দেওয়ার ছবি প্রসঙ্গে যা বললেন মেজর হাফিজ

পৃথিবীতে কোনো দেশের গণতন্ত্র পারফেক্ট না: ওবায়দুল কাদের

সাকিবের বিএনএমে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানি না: ওবায়দুল কাদের

বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতার পদোন্নতি

দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণ ছাড়া আ.লীগের আর কোনো অর্জন নেই : এবি পার্টি

‘দেশে ইসলামবিদ্বেষী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে’

ক্ষমতাসীনদের কেউ ভালো নেই: গয়েশ্বর

সিন্ডিকেটকে কোলে বসিয়ে বিরোধীদলের ওপর দায় চাপাচ্ছে সরকার: গণতন্ত্র মঞ্চ

ইফতার পার্টিতে আল্লাহ-রাসুলের নাম না নিয়ে আ.লীগের গিবত গায়: প্রধানমন্ত্রী

বাংলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার সাধ্য কারো নেই: ওবায়দুল কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :