বিএনপিতে আগে পুনর্বাসন, পরে পুনর্গঠন

বোরহান উদ্দিন
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:২৬
সংবাদ সম্মেলন করছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা

নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ যখন বিএনপিতে, তখন দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার বিষয়ে দল ও জোট থেকেই উঠছে নানা কথা। কিন্তু বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে কাউকে বাদ বা পাল্টানোর সুযোগ নেই। বরং দীর্ঘদিন ধরে যেসব ফাঁকা রয়েছে, সেগুলো পূরণ করে তারা এগোতে চান।

তবে তার আগে হামলা-মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও ঘরে ফেরাতে চান দলের দায়িত্বশীল নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলের মধ্যম সারির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এ নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। দফায় দফায় বৈঠক করছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের জন্য করণীয় ঠিক করছেন।

একই সঙ্গে বছরখানেক ধরে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার চিন্তা করা হচ্ছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি তার কারাবন্দিত্বের বছরপূর্তি ঘিরে কর্মসূচি প্রণয়নে কাজ করছেন নেতারা।

তবে আগের মতো এবারও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘ঠান্ডা’ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে কারাগারে যাওয়ার পর গভীর সংকটে পড়া বিএনপি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট গড়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল সুদিন ফেরার আশায়। কিন্তু গত ৩০ ডিসেম্বর নিজেরা মাত্র ছয়টি এবং জোটগতভাবে আটটি আসনে জয় পেয়ে উল্টো চাপে তারা।

দলটির চার দশকের ইতিহাসে আর কখনো এত বাজে ফল হয়নি। অন্যদিকে রেকর্ড ভোটে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোটের পর ‘কিছুই হয়নি’ উল্লেখ করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের কথা বলেছেন। আর দলের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদ তুলেছেন নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার দাবি।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শীর্ষ নেতারা যা বলছেন তার সঙ্গে কোনো দ্বিমত নেই। আমরাও পুনর্গঠন চাই। কিন্তু যেই নেতাকর্মীদের নিয়ে দল পুনর্গঠন করা হবে তারা তো কেউ জেলে, কেউ পলাতক। তাদের মামলার হাত থেকে বাঁচাতে হবে, মুক্ত করতে হবে কারাগার থেকে। এটাই এখন প্রধান কাজ। আমরা তা নিয়ে কাজ করছি।’

বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। এতে দলের চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়া এবং জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান পদে তার ছেলে তারেক রহমান পুনর্র্নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মাত্র কথা হলো এ নিয়ে। যেহেতু ম্যাডাম এখন কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে আছেন, তাই হুট করে চিন্তা না করেই কিছু করা তো সম্ভব নয়। কাউন্সিল হলে তো অবশ্যই একটা পরিবর্তন হবে। কিন্তু তাই বলে সবাই সরে যাবেন, তেমন তো কোনো কথা নেই।’

দলের পুনর্গঠনের বিষয়ে নেতাদের মনোভাব কী, জানতে চাইলে সেলিমা বলেন, ‘সবাই বলছেন তরুণ ও ত্যাগীদের সামনে আনতে হবে। তার মানে এই নয় যে সবাই তরুণ থাকবেন দলে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে দল পুনর্গঠন করতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। তুলনামূলকভাবে ত্যাগী, যারা পরীক্ষিত নেতাকর্মী, তাদের নেতৃত্বে আনতে হবে। আমরা যারা ব্যর্থ বলে পরিচিত হয়েছি, আমাদের পদ ছেড়ে দিতে হবে তরুণদের জন্য। তাহলেই বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে।’

কাউন্সিল নয়, ফাঁকা পদ পূরণ

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ নেতার মতো তারেক রহমানও কারাবন্দি চেয়ারপারসনের মুক্তির আগে কাউন্সিল করার পক্ষে নন। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যেসব পদ ফাঁকা আছে, সেগুলো পূরণের উদ্যোগ সহসাই নেওয়া হতে পারে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী মার্চে শেষ হবে বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ। তবে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমানদের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই। তবে দলের চেয়ারপারসন যখন কারাগারে, নেতাকর্মীরা এখনো মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে ব্যস্ত, তখন হঠাৎ করে প্রয়োজনে কাউন্সিল করে দল পুনর্গঠন করতে স্থায়ী কমিটির দুই প্রভাবশালী সদস্যের বক্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি দলের অনেকে।

সম্প্রতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যের পর এ নিয়ে দলের মধ্যে নানা ধরনের কথাবার্তা, সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এরই জেরে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে তাদের জায়গায় গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আবদুল মঈন খানকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আপনার মতো আমিও বিষয়টি জেনেছি। তবে এমনটা হলেও হতে পারে। আর এটা তো তাদের পার্টির সিদ্ধান্তে হবে।’

২০১৬ সালের মার্চে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের চার মাস পর ৫০২ সদস্যের কমিটি করে দলটি। তখন থেকে স্থায়ী কমিটিসহ সম্পাদকীয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ আজও ফাঁকা। পরে যুক্ত হয়েছে নেতাদের মৃত্যুজনিত কারণে শূন্যপদের সংখ্যা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির পাঁচটি পদ ফাঁকা, ৩৭ সদস্যের মধ্যে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পদত্যাগ করেছেন, ইনাম আহমেদ চৌধুরী দল ছেড়েছেন, ৭৩ সদস্যের মধ্যে সাতজন মারা গেছেন, ছাত্র ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, যুববিষয়ক সম্পাদক পদ ফাঁকা। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন মারা গেছেন।

বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা সারা দেশের গ্রেপ্তার, আহত ও মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছি। তাদের কীভাবে পাশে থাকা যায়, সেই চেষ্টা করছি। আর পুনর্গঠনের বিষয়টি যেভাবে বলা হচ্ছে, সেভাবে হওয়ার সুযোগ কই। তবে ফাঁকা পদ পূরণের একটা উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

অসুস্থ তাঁতীদল নেতা রেজাউল করিমকে দেখতে গেলেন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ

শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ছাত্রলীগের কর্মসূচি

জাপাকে বিক্রি করে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা হয়েছে: কাজী মামুন

আ.লীগই ষড়যন্ত্র করে: সালাম

দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের কিছুই অবশিষ্ট নেই: জামায়াত

ডোনাল্ড লু প্রসঙ্গে বেশি কথা বলতে চান না মির্জা ফখরুল

বিএনপির আরও পাঁচ নেতা বহিষ্কার

ইসরায়েলি লবির সঙ্গে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি: হাছান মাহমুদ

ডোনাল্ড লু'র আগমনে সরকার ভীত: ববি হাজ্জাজ

গণতন্ত্রের আস্থার মূল জায়গা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে: গয়েশ্বর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :