শাড়িতে সুতার নকশা তুলে ভাগ্যবদলের চেষ্টা

আজহারুল হক, হোসেনপুর থেকে ফিরে
 | প্রকাশিত : ২৭ জুলাই ২০১৯, ০৮:৪৯

পুঁথি ও সুতা দিয়ে শাড়িতে বাহারি রঙের নকশা তুলে ভাগ্যবদলের চেষ্টা করছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার অর্ধশত গ্রামের নারী। তাঁদের সঙ্গে স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েরাও সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে শাড়িতে নকশা তোলার কাজে হাত লাগাচ্ছে। নিপুণ হাতে তৈরি করা এসব পোশাকে লাগানো হচ্ছে নামিদামি প্রতিষ্ঠান আর ব্র্যান্ডের স্টিকার। পরে এসব শাড়ি নেয়া হবে রাজধানীর বড় বড় মার্কেটে। সামনে ঈদুল আজহা থাকায় কাপড়ে নকশা তোলায় ব্যস্ত সময় কাটছে হোসেনপুরের নারীদের।

সরেজমিনে জানা যায়, হোসেনপুর উপজেলার কুড়িমারা, দিপেশ্বর গাঙ্গাটিয়া, পুমদি, ডাংরি, পানান, সৈয়দপুর, কেশেরা, গোবিন্দপুরসহ প্রায় ৫০টি গ্রামের নারীরা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে শাড়িতে নকশা তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সংসারে অভাব অনটন ঘোচাতে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন তারা। তাদের যেন দম ফেলার কোনো ফুরসত নেই।

স্থানীয় কারিগররা বলছেন, উপজেলায় ১০ হাজারের বেশি নারী শাড়িতে নকশার কাজ করেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তারা নিজ বাড়ির আঙিনায়, উঠানে ও ঘরের মেঝেতে এসব কাজ করেন। ঈদ এলে এসব পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। সুই-সুতার বেশিরভাগ কাজ করেন নারীরা। সারা দেশেই তাদের হাতের এই নিপুণ কাজের কদর রয়েছে।

কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও মনোরম ডিজাইনের পুঁথি ও সুতা দিয়ে বাহারি রঙের শাড়িতে নকশার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের কারিগররা। তাদের সহযোগিতা করছে শিশুরাও। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে রাত দিন একটানা অর্থ উপার্জনের জন্য শাড়িতে নকশা করে যাচ্ছেন তারা।

উপজেলার শাহেদল কুড়িমারা, রহিমপুর, আশুতিয়া, দ্বীপেশ্বরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি বাড়িতে এখন পুরোদমে শাড়িতে পুঁথি ও সুতা দিয়ে বিভিন্ন নকশা বাহারি রঙের শাড়িতে কাজে ব্যস্ত রয়েছেন কারিগররা।

এসব শাড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী ও মহাজনদের কাছ থেকে এরং এর ডিজাইন আঁকা অবস্থায় নামমাত্র মজুরির চুক্তিতে নিয়ে আসেন তারা। এরপর দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুরা মিলে শাড়ির ডিজাইন মতো সুতা ও পুঁথি দিয়ে নকশা প্রস্তুত করে থাকেন। যেসব শাড়িতে ডিজাইন থাকে বেশি সেসব শাড়িতে নকশা তৈরিতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। একেকটা শাড়ির ডিজাইন ও প্যাটার্ন ভিত্তিক মজুরি ভিন্ন হয়ে থাকে। বেশি ডিজাইনকৃত শাড়িতে নকশার মজুরি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পান তারা। ওইসব শাড়ি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নামিদামি মার্কেটে বিক্রি হয়।

বেশ কয়েকজন নকশা কারিগর বলেন ‘আমাদের হাতে তৈরি পোশাকের কদর আমরা তেমন বুঝি না। যখন মানুষজন এই পোশাকগুলো বড় বড় শোরুম থেকে কিনে ব্যবহার করেন, তখনই আমরা বুঝতে পারি এগুলো আমাদের হাতে তৈরি।’ শাড়িগুলো খুচরা বিক্রেতারা ৮ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন।

কথা হয় দ্বীপেশ্বর গ্রামের নকশা কারিগর রহিমা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, সংসারের দিনমজুর স্বামীর পক্ষে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য ছিল। ফলে বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্য শাড়ির নকশাতে কাজ করছি। এইসব শাড়ির কাজে যে মজুরি পাই তা অতি সামান্য। শাড়ি ব্যবসায়ী ও মহাজনরা শাড়িগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি করে অথচ আমরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত।’

শাহেদল গ্রামের নকশা কর্মী সালেহা বলেন, ‘পারিবারিক অস্বচ্ছলতার দরুন শাড়িতে কাজ করি। শাড়িতে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতে পারছি।’

কুড়িমারা গ্রামের বিলকিস বলেন, অভাবের তাড়নায় সব শাড়িতে নকশা তৈরির কাজ করি। তবে মহাজনরা যদি আরও বেশি মজুরি দিত, তাহলে ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারতাম। এজন্য তারা সুই সুতার কারিগরদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেন।

ঢাকার শাড়ি ব্যবসায়ী আবদুল কালামসহ অনেকে জানান, পুঁথি-সুতার মূল্য বেশি। পরিবহন খরচ ও আনুসাঙ্গিক ব্যয়ে তাদের খুব বেশি লাভ থাকে না। তাই সুই সুতার কারিগরদের পারিশ্রমিক বাড়ানো আপাতত সম্ভব নয়।

হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমল কুমার ঘোষ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তাঁদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :