ফাহিমের ৬৪ জেলা ভ্রমণ!

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৩৬| আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৪৭
অ- অ+

বহু দিন ধ'রে বহু ক্রোশ দূরে বহু ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু। রবীন্দ্রনাথের এই কবিতার মত অনেকেই বাইরের দেশে ঘুরতে যান অথচ নিজের দেশের রুপ সৌন্দর্য দেখেন না। কিন্তু মাতৃভূমির রুপ সৌন্দর্য ঠিকই অবলোকন করেছেন ফাহিম।

নারায়ণগঞ্জ দিয়ে ভ্রমণের শুরু আর সীতাকুন্ড দিয়ে শেষ। মধ্যখানে পেরিয়েছে দুই বছর ২৪ দিন। এই সময়ের মধ্যে দেশের ৬৪টি জেলা ঘুরেছেন সিলেটের তরুণ মোমিনুল হক ফাহিম। ভ্রমণের মধ্যেই জীবনের মানে খুঁজে পেতে সারা দেশ ঘুরেছেন তিনি।

মোমিনুল হক ফাহিম সিলেট নগরীর মাছুদিঘীরপাড়ের ৬৪/বি নং এর বাসিন্দা। পিতা মোহাম্মদ আব্দুল হক ও মাতা সুলতানা পারভীন লাভলী। স্বর্ত্বাধিকারী সিটি ওভারসীজ,২/২২ মিতালী ম্যানসন, জিন্দাবাজার, সিলেট। ফাহিম মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

পড়াশোনার ফাঁকে যখনই ছুটি পেয়েছেন, বেরিয়ে পড়েছেন কোনো জেলা ঘুরতে। মোমিনুল হক ফাহিম জানান, ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি দেশভ্রমণ শুরু করেন। সিলেটের ছেলে হিসেবে এখানে ঘুরেছেন। সিলেটের বাইরে তার প্রথম ভ্রমণ ছিল নারায়ণগঞ্জে। আর সর্বশেষ জেলা হিসেবে ভ্রমণ করেছেন সীতাকুন্ড।

১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে শেষ হয় তার পুরো বাংলাদেশ ঘোরা। সারাদেশ ভ্রমণ করতে তার লেগেছে দুই বছর ২৪ দিন। কেন এই দেশভ্রমণ? ফাহিম জানান জীবনের তাগিদে, সময়ের প্রয়োজনে, মানুষের ভালোবাসার খুঁজে, লক্ষ্য অর্জনের জন্য আর ভ্রমণের মাঝে জীবনের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায় বলেই এই দেশভ্রমণ।’

৬৪ জেলা ঘুরতে গিয়ে বাবা ও মায়ের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছেন ফাহিম। ভ্রমণে উৎসাহ দেওয়া, প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান সবই দিয়েছেন বাবা-মা। ফলে ফাহিম বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। কয়েকজন বন্ধুর প্রতিও আছে তার কৃতজ্ঞতার ঢালি।

ফাহিম বলেন, ‘আমার বন্ধু ইমদাদুল হোসাইনের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তার জেলা থেকেই আমার দেশভ্রমণ শুরু। সে আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টি জেলা একা এক ঘুরেছি। রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগ ভ্রমণে সঙ্গী ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু রুমেন আহমেদ রাজু আর জুনেল আহমেদ। আর ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই ইকবাল হোসাইন সঙ্গী ছিলেন। বাবা-মা আর বন্ধুদের সহযোগিতা ছাড়া আমার এই ভ্রমণ অসম্ভব ছিল।’

৬৪ জেলা ঘুরার অর্জনকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ আর সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন মোমিনুল হক ফাহিম। তার ভাষায়, ‘মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ আর মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই আমরা এই দেশ পেয়েছি। যে কারণে আমি দেশ ঘুরতে পেরেছি।’

ঘুরে বেড়ানো বা ভ্রমণ মানেই নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চয়। মোমিনুল হক ফাহিমেরও আছে সেরকম সঞ্চয়ের ভান্ডার। ফাহিম এটাকে বলতে চান ‘প্রাপ্তি’। তার মতে, ‘প্রতিটি জেলার মানুষের সাথে মিশতে পারা, তাদের জীবন, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে কাছ থেকে দেখা, ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনই আমার প্রাপ্তি।’ তবে ফাহিমের অভিজ্ঞতায় নেই কোনো অপ্রীতিকর সঞ্চয়।

৬৪ জেলা ভ্রমণে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি তাকে। অবশ্য ভ্রমণের শুরুতে অনেকেই তাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন ফাহিম, ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যার ফলে শেষ করতে পেরেছেন পুরো দেশভ্রমণ।

এই দীর্ঘ ভ্রমণকে স্মৃতিময় করে রাখতে ফাহিম দেশের ১৫টি জেলায় বৃক্ষরোপণ করেছেন। আর রূপময় বাংলাদেশকে বিশ্বে তুলে ধরতে ‘বিউটি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক ফটোগ্রাফি করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ভিজিট বাংলাদেশ’ নামে পেইজ ও গ্রুপ খুলে ছবি আর তথ্য সরবরাহ করে বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে ঘুরতে উৎসাহ যুগিয়েছেন ফাহিম।

কিছুদিনের মধ্যে ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট খোলার পরিকল্পনা আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ ঘুরা শেষ, এবার লক্ষ্য কী? এমন প্রশ্নে ফাহিম জানান, তিনি বিশ্বভ্রমণ করতে চান। ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশ ঘুরার লক্ষ্য নিয়েই এখন তার পথচলা।

ঢাকাটাইমস/০২ফেব্রুয়ারি/এসএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চিকিৎসায় অবহেলা: ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সনদ ৫ বছরের জন্য স্থগিত
ঢাকায় এক্সিকিউটিভ স্টাডি আব্রোড আয়োজিত অস্ট্রেলিয়ান এডুকেশন এক্সপো
নববর্ষ উৎসব হিসেবে মহররম উদযাপন: ইসলামের আদর্শবিরোধী চক্রান্ত
পিএসজির বিরুদ্ধে এমবাপে মামলা করলেন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা