ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া না করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, বুঝবেন যেভাবে

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০২৫, ০৯:২৭| আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, ১২:০০
অ- অ+

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আবারও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, করোনা ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। জ্বর এলেই আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন মানুষ, ভাবছেন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া না করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বেশি দুশ্চিন্তায় আছেন ছোট্ট শিশুর অভিভাবকরা। নিজেদের নিরাপদ রাখতে তারা কেউ নজর দিচ্ছেন মশারির দিকে; কেউবা মশা নিধনে, আবার কেউ-বা মাস্ক ব্যবহারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসজনিত এই তিনটি রোগের লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় সচেতনতা এবং আগেভাগে সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি।

বর্ষায় বৃষ্টি আর গরম আবহাওয়ার তারতম্য শরীরের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলছে। এই সময়ে বর্ষা আর গরমে জ্বর সর্দি কাশি দেখা দিতে পারে। জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। কোনো সংক্রমণ হলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে জীবাণু তাড়ানোর চেষ্টা করে। তাই জ্বর হয়।

বর্ষাকালে একাধিক ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয় মানুষ। কিন্তু বর্তমানে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাসের দাপটে প্রায় একই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে মানুষের শরীরে। করোনাকালে সাধারণ জ্বর সর্দি কাশির লক্ষণ দেখেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ভেবে অনেকেই ভুল করেন। জ্বর হলেই আবার করোনার আতঙ্ক। কিন্তু সত্যিই কি করোনা হয়েছে। নাকি ডেঙ্গু জ্বর। বুঝবেন কীভাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে যা দেখে প্রাথমিকভাবে বোঝা যেতে পারে মৌসুমের অসুস্থতা নাকি করোনায় আক্রান্ত আপনি। মনে রাখবেন, জ্বর প্রতি ক্ষেত্রেই আসবে। কিন্তু তারও তারতম্য রয়েছে।

ডেঙ্গু: হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রচণ্ড ব্যথা।

চিকুনগুনিয়া: ধীরে ধীরে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। অবসাদ, ঠান্ডা লাগা, ত্বকে ফুসকুড়ি, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, দুটি চোখের পিছনের অংশে অসহ্য যন্ত্রণা, তলপেটে ও পেশিতে ব্যথা অনুভব।

ম্যালেরিয়া: প্রচণ্ড জ্বর, কখনো কমবে বা কখনো বেড়ে যাবে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা বেদনা, খুব ঘাম হবে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাবে, ডায়রিয়া ও জন্ডিসের বেশকিছু লক্ষণও দেখা দেবে।

ভাইরাল জ্বর: গায়ের তাপমাত্রা কখনো বাড়বে আবার কখনো কমে আসবে। প্রচণ্ড দুর্বল লাগবে। ডিহাইড্রেশন দেখা দেবে। একেবারেই খেতে ইচ্ছা করবে না।

জ্বর-সর্দি-হাঁচি-কাশি হলে ঘরে শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেবেন। হালকা খাবার খাবেন। হালকা গরম পানি খাবেন পর্যাপ্ত। দরকার মতো প্যারাসিটামল, কাশির ওষুধ খাবেন একটু আধটু। নরমাল স্যালাইন ড্রপ দেবেন নাকে। হাঁচি-কাশির সময় পরিষ্কার রুমাল ব্যবহার করবেন। শিশু, বয়স্ক, রুগ্ন ও গর্ভবতীদের থেকে দূরে থাকবেন। এটুকু করলেই ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমেই ভাইরাসকে কাবু করা যাবে। তখন বুঝতে হবে এটা সাধারণ ফ্লু-ই ছিল।

চিকিৎসকের মতে, ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসের জ্বরের কিছু তফাৎ আছে। একটু সচেতন হলেই দুই জ্বরকে আলাদা করা খুব কঠিন নয়। ডেঙ্গু জ্বর হলে বিভিন্ন গাঁট-সহ শরীর জুড়ে খুব ব্যথা হয়। তাই আগে ডেঙ্গুর প্রচলিত নাম ছিল হাড়ভাঙ্গা জ্বর। সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক লাল হয়ে প্রদাহ হতে পারে।

করোনাভাইরাসের জ্বরেও গা-হাত-পায়ে ব্যথা হতে পারে। তবে ডেঙ্গুর তুলনায় কম। করোনায় ত্বক লাল হয়ে প্রদাহও বিশেষ হয় না।

চিকিৎসকের মতে, ডেঙ্গু বা করোনার কারণে জ্বর হলে প্রথম দিকে রোগ নির্ণয় করা বেশ মুশকিল। শিশুদের জ্বর হলে গোড়াতেই অ্যান্টিবায়োটিক বা আইব্রুফেন জাতীয় জ্বর কমানোর ওষুধ দেওয়া অনুচিত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, জ্বর কমানোর সেরা দাওয়াই রোগীকে হালকা গরম পানিতে গোসল করানো।

করোনাভাইরাসের জ্বরের লক্ষণ

গলা ব্যথা, সর্দি, শুকনো কাশি, জ্বর ভাব, দুর্বলতা, গা ম্যাজম্যাজ, মাথা, গা-হাত-পা ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের বোধ চলে যাওয়া, চোখ লাল হয়ে পানি পড়া, ডায়রিয়া ও পেটে ব্যথা, আঙুলের রং বদলে যাওয়া, বুকে চাপ ধরা ভাব ও যন্ত্রণা, নিঃশ্বাসের কষ্ট, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া। ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনার লক্ষণ শুরু হয়। এই সময়ে ১ থেকে ৪ দিনের মধ্যে করোনার জ্বর দেখা দিতে পারে। হাচি, কাশি শুরু হবে ১ থেকে ৩ দিনে।

এক্ষেত্রে আপনি স্বাদ ও গন্ধ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, জ্বর জ্বর ভাব। এক থেকে দু দিন জ্বরের তাপমাত্রা ১০৩° ছুঁয়ে গেলেও মোটের উপর ৯৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকবে শরীরে। শ্বাস নেওয়া সমস্যা হবে। প্রচণ্ড ক্লান্তি ঘিরে ধরবে। সব সময় মনে হবে ঘুম পাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে গলায় ব্যথা হতে পারে।

সুস্থ থাকতে প্রথম থেকেই গরম পানিতে গার্গল করুন। পুষ্টিকর খাবার খান। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন টাটকা সবজি, ফল, আমলকি। তুলসি পাতা ফুটিয়ে মধু দিয়ে পান করুন। ভেষজ চা পান করার বিকল্প নেই। দিনে অন্তত দুইবার করে গরম ভাপ নিন। কারণ সামান্য ভুলের জন্য পরিবারের সবাই আক্রান্ত হতে পারেন। যদি কোনো উপসর্গ দেখা যায়, প্রথমেই করোনা আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেট করতে হবে। প্যানারয়েড হওয়াটাই সেরা কৌশল। কারণ করোনা খুবই সংক্রামক ব্যাধি। প্রথম উপসর্গেই আলাদা করতে হবে। সবসময় মাস্ক ব্যবহার করুন।

আপনি যদি অসুস্থ বোধ করার পর নিশ্চিত না হন যে কী হয়েছে তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন৷

(ঢাকাটাইমস/২৫ জুন/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার
আজকের বিশ্ব বিভিন্ন সংকটে জড়িত: প্রধান উপদেষ্টা
কুমিল্লা-২ আসন বহাল রাখতে মানববন্ধন ইসিতে
দৌলতদিয়ায় নিজ ঘর থেকে যৌনকর্মীর মরদেহ উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা