স্বাস্থ্য আর আলোয় ভরা 'হলুদের জাদু', ভাইরাল ‘ইয়োলো গ্লোয়িং ওয়াটার’ ট্রেন্ড

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০২৫, ১০:০৪| আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১১:২৮
অ- অ+

সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন এক ট্রেন্ড ঘুরে বেড়াচ্ছে—‘ইয়োলো গ্লোয়িং ওয়াটার’। এক চিমটে হলুদের গুঁড়া, একটি কাচের গ্লাসে পানি এবং একটি মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট—এই তিনটি উপাদানে তৈরি হচ্ছে মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য, যা ইতোমধ্যেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবজুড়ে ভাইরাল।

সেই সঙ্গে সামনে এসেছে হলুদের গুঁড়ার স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়টিও, যেটি দীর্ঘদিন ধরেই আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

কীভাবে তৈরি হয় ‘ইয়োলো গ্লোয়িং ওয়াটার’?

এই ট্রেন্ডে অংশ নিতে হলে প্রয়োজন—

একটি মোবাইল ফোন, যার ফ্ল্যাশ লাইট থাকবে

একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাস

এক চিমটে হলুদের গুঁড়া

অন্ধকার ঘর বা আলো নিভিয়ে রাখা পরিবেশ

প্রথমে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট চালু করে তা উল্টে রাখা হয়। এরপর কাচের গ্লাসে পানি ভরে সেই আলো চালু ফোনের ওপর রাখা হয়। তারপর গ্লাসের পানিতে ধীরে ধীরে ফেলা হয় হলুদের গুঁড়া। ধীরে ধীরে হলুদের গুঁড়া পানিতে মিশতে থাকে এবং সৃষ্টি হয় এক সোনালি ফ্লুরোসেন্ট আভা—যা দেখে বিস্মিত হচ্ছেন শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করাও।

এই দৃশ্যকে অনেকেই বলছেন একপ্রকার ‘মিনি সায়েন্স ডেমো’, আবার কেউ বলছেন, “চোখ জুড়িয়ে দেওয়া রঙের খেলা”।

বিজ্ঞান বলছে, হলুদের গুঁড়ো কিংবা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ক্যাপসুলে থাকা রাইবোফ্লেভিন (Riboflavin) নামক পদার্থটি একটি প্রাকৃতিক ফ্লুরোসেন্ট উপাদান। এটি অতিবেগুনি (UV) বা উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে এলে সোনালি আলো বিচ্ছুরণ করে। এর আণবিক গঠন এমনভাবে তৈরি, যা আলো শোষণ করে পুনরায় ছড়িয়ে দিতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যই এই ট্রেন্ডকে চোখ ধাঁধানো করে তুলেছে।

শুধু আলো নয়, হলুদে রয়েছে স্বাস্থ্য রক্ষার শক্তিও। হলুদের গুঁড়া শুধু চোখের জন্য নয়, শরীরের জন্যও উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শরীরের ভেতরের ও বাইরের প্রদাহ কমায়। গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও বদহজম দূর করতে সহায়ক। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ফলে খাবার হজম হয় সুষ্ঠুভাবে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। হৃদযন্ত্র ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হালকা গরম পানিতে এক চিমটে হলুদের গুঁড়া ও অল্প মধু মিশিয়ে খেলে দীর্ঘমেয়াদে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। এটি নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

তবে এই হলুদের ট্রেন্ডের বিস্তার এখন মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত। এই ‘ইয়োলো গ্লোয়িং ওয়াটার’ ট্রেন্ডটি প্রথম ছড়িয়ে পড়ে মালয়েশিয়ায়, এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

হলুদের গুঁড়ার ট্রেন্ডের বিস্তারের কারণে এখন টিকটকে লক্ষাধিক ভিডিও, ইনস্টাগ্রামে রিলসের বন্যা, ফেসবুকে লাখ লাখ ভিউ, ইউটিউবে টিউটোরিয়াল ও প্রতিক্রিয়া ভিডিও।

একটি ভিডিওতে, যার শিরোনাম ‘তাথৈ গ্লো ট্রিক’, সেখানে এক শিশু হলুদের পানি খেয়ে ফেলে আনন্দে লাফাচ্ছে—এ ভিডিওর ভিউ ইতোমধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে!

এই ট্রেন্ডে শিশুরা যেমন মুগ্ধ হচ্ছে, তেমনি বড়রাও খুঁজে পাচ্ছেন নির্মল আনন্দের উপাদান। অনেক শিক্ষক-অভিভাবক একে ব্যবহার করছেন বিজ্ঞান শেখানোর ঘরোয়া উপকরণ হিসেবে। “শেখা, খেলা আর চোখ জুড়ানো একসঙ্গে”—বলছেন অভিভাবকরা।

যদিও এই ট্রেন্ড ক্ষতিকর নয় বলে মনে করা হচ্ছে, তারপরও বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন—

খাবার উপযোগী হলুদ ব্যবহার করতে, খুব গরম পানিতে মেশানো থেকে বিরত থাকতে, শিশুদের পর্যবেক্ষণে এই কার্যক্রম করাতে।

এই ট্রেন্ড একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসচেতনতার বার্তা দিচ্ছে, তেমনি বৈজ্ঞানিক কৌতূহল ও নান্দনিক আনন্দও জাগিয়ে তুলছে। সোশ্যাল মিডিয়ার এমন সুন্দর এবং নিরাপদ ট্রেন্ডের জনপ্রিয়তা তাই স্বাভাবিকভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে।

(ঢাকাটাইমস/২৩ জুন/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইসরায়েলের গোপন পারমাণবিক ভাণ্ডার: মদদে আমেরিকা, শঙ্কায় বিশ্ব
আত্মাহুতি দিয়ে স্কাউটিংয়ের নজির বিশ্বের ইতিহাসে নেই: প্রধান উপদেষ্টা
নুসরাত ফারিয়া ২৪ সেকেন্ডে প্রেমের উত্তাপ ছড়ালেন!
Thirty Seconds to Silence — The Tragedy of Air India 171
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা