আত্মঘাতী বাঙালি!

মিনার মনসুর
  প্রকাশিত : ৩০ মার্চ ২০২০, ১৪:২৬| আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২০, ১৪:৩৮
অ- অ+

বিশ্বখ্যাত পণ্ডিত নীরদ সি. চৌধুরীর ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ যখন পড়ি, তখন লেখকের ওপর আমার এত রাগ হয়েছিল যে ভেবেছিলাম এ নিয়ে লিখবো। বাঙালিকে ঢালাওভাবে আত্মঘাতী বলার জন্যে লেখক যে যুক্তিগুলো দেখিয়েছেন, সেগুলো যে যথার্থ নয় তার একটি দীর্ঘ খসড়াও তৈরি করেছিলাম।

আমার ইচ্ছে ছিল সংবাদ-এ লেখাটি ছাপতে দেব। কিন্তু ‘সংবাদ সাময়িকী’র তৎকালীন সম্পাদক হাসনাত ভাই লেখাটি ছাপতে অনাগ্রহী হওয়ার কারণে আমার উৎসাহে ভাটা পড়েছিল। বহু বছর পরে নানা অভিজ্ঞতার আগুনে পুড়ে, এখন মনে হয়, লেখকের পর্যবেক্ষণ অযথার্থ ছিল না।

চোখের সামনে গোটা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে পড়েছে কল্পনাতীতভাবে। আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে। অবিরাম সতর্কবার্তা উচ্চারণ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছেন না ‘বীর বাঙালি’। তারা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কারণে-অকারণে জটলা পাকাচ্ছেন এখানে-সেখানে। হাসিঠাট্টা করছেন করোনা নিয়ে। যথারীতি যথেচ্ছ ফতোয়াও দিয়ে যাচ্ছে একটি মহল।

আবার কেউ কেউ সাফাইও গেয়ে যাচ্ছেন তাদের পক্ষে। কিন্তু যেটা বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হলো, বুক ফুলিয়ে যারা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নানা ফতোয়া দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে তথাকথিত শিক্ষিত ও সচ্ছল মানুষের সংখ্যাই বেশি। দুর্যোগের শুরুতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলায় বিদেশফেরত একজনকে ইংরেজিতে অকথ্য গালাগাল করতে দেখেছি দেশ ও দেশের মানুষকে।

গতকাল সামাজিক মাধ্যমে প্রবীণ এক ধার্মিক ব্যক্তিকে দেখলাম, সর্দি মুছতে মুছতে একইভাবে ইংরেজিতে গালাগাল করতে। যার সার কথা হলো, তিনি মৃত্যুকে ভয় পান না এবং কোনো নিয়মকানুনের পরোয়া করেন না।

সকালে ইতালীয় এক ঔপন্যাসিকের মর্মস্পর্শী একটি পোস্ট পড়লাম। তিনি লিখেছেন, ‘উহানে যখন মানুষ মরছিল, ইতালিতে বসে আমরাও তখন হাসাহাসি করছিলাম।’ নিজে করোনাক্রান্ত হয়েও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অসামান্য ধৈর্য ও দূরদর্শিতার সঙ্গে দেশবাসীর উদ্দেশে যে-চিঠিটি লিখেছেন তার মর্মবাণী হলো, আরও খারাপ পরিস্থিতির জন্যে তাদের তৈরি থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনো কেন জানি একটি ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব কাজ করছে।

সরকার ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মাসের পর মাস বসে খাওয়াতে পারলে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় লাখ লাখ মানুষের কাছে বিভিন্ন ভাতা পৌঁছে দিতে পারলে--করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকেও নিশ্চয় খাওয়াতে পারবে। সেখানে নাগরিক হিসেবে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাই সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে পারে।

সেটাই কর্তব্য। কিন্তু এত ভয়াবহ একটি দুর্যোগকালে আমি নিজের ন্যূনতম কর্তব্যটুকুও পালন না করে নিজের পরিবার, দেশ ও দেশের মানুষকে নিশ্চিত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেব--তাতো মেনে নেওয়া যায় না। কে তাদের বোঝাবে যে চোখ বন্ধ করলেই প্রলয় বন্ধ হবে না।

[ফেসবুক থেকে নেওয়া]

ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্যেই ইসরায়েলে ইরানের ‘ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি’, নিহত ৩
ক্রীড়াপ্রেমীদের ঢল, অলিম্পিয়ানদের সম্মাননা দিলেন সেনাপ্রধান
আ.লীগ আমলের তিন নির্বাচন কমিশনের সিইসিসহ সবার পাসপোর্ট বাতিল
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ৩- একটি অসমাপ্ত সকাল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা