সবজি ও মৌসুমি ফলের বিক্রি নিশ্চিতে নানান সুপারিশ

বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের শাকসবজি ও মৌসুমি ফলসহ কৃষিপণ্যের পরিবহন এবং বাজারজাতকরণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। এ অবস্থায় সবজি ও মৌসুমি ফলসহ কৃষিপণ্যের বিক্রি নিশ্চিতে নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নেয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
শনিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে অনলাইনে (জুম প্ল্যাটফর্মে) মতবিনিময় সভায় এসব সুপারিশ দেয়া হয়।
এতে অংশগ্রহণ করেন, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্রিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, চাঁপাই নবাবগঞ্জের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ এবং জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিপণ্য পরিবহন শেষে ট্রাক খালি ফেরার আশঙ্কায় ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে বেশির ভাগ ফল ও সবজি। চাষিরা উৎপাদিত তরমুজের অধিকাংশই বিক্রি করতে পারেনি। ইতোমধ্যে আম, লিচু, আনারস, কাঁঠালসহ মৌসুমি ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এসব ফল সঠিকভাবে বাজারজাত না করা গেলে চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে, দেশের অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।
এ ব্যাপারে সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ভাড়া কমাতে ট্রাকের জ্বালানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে। পুলিশ ব্যারাক, সেনাবাহিনীর ব্যারাক, হাসপাতাল, জেলখানাসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে কৃষকের কাছ থেকে আম কিনে সরবরাহ করা গেলে আমের বাজারজাতকরণে কোন সমস্যা হবে না বলেও তিনি মনে করেন।
খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পরিচয়পত্র ইস্যু এবং ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়াতে হবে। এই মধু মাসে বিদেশি ফল আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
করোনার সময়ে সকল ধরনের কার্গো লঞ্চ চালু আছে জানিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে হবে, তা নাহলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্রিয়ার আলম বলেন, ভাল দাম না পাওয়ায় রাজশাহীতে আম চাষ কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ব্যবস্থা নেয়া। এছাড়া, আমে ফরমালিন বা ক্ষতিকর কিছু নেই মর্মে জনগণকে সচেতন ও আশ্বস্ত করতে হবে বলে তিনি জানান। ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে সকল গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর পরামর্শও প্রদান করেন তিনি।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর ‘এক শপ’ অ্যাপস চালু করা হবে যার মাধ্যমে সারা দেশের চাষিরা পণ্য বেচাকেনা করতে পারবে। এর মাধ্যমে চাষিদের পণ্য এনে মেগাশপের পাশাপাশি ডোর টু ডোর গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, কৃষিখাতে অতিরিক্ত বাজেটের প্রয়োজন হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, এই সংকটের সময় তারা পাশে থেকে কাজ করবে। আম-লিচু পরিবহণের কোন সংকট হবে না বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
সভায় বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করা হয়-
১. হাওরে ধান কাটা শ্রমিকদের যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠানো হয়েছে, তেমনি অন্যান্য জেলা হতে ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, প্রয়োজনে তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রত্যয়নপত্র প্রদান ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা নেয়া;
২. মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, পরিবহণের সময় যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মাধ্যমে কোনরূপ হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা।
৩. বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহারে উদ্যোগ।
৪. স্থানীয়ভাবে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো।
৫. পার্সেল ট্রেনে মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহনের আওতা বাড়াতে হিমায়িত ওয়াগন ব্যহার করা যায় কিনা।
৬. ফিরতি ট্রাকের বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল হ্রাস।
৭. ত্রাণ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল অন্তর্ভূক্ত করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অনুরোধ জানানো।
৮. অনলাইনে এবং ভ্যানযোগে ছোট ছোট পরিসরে কেনাবেচার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ।
৯. প্রাণ,একমি, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যারা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে জুস, ম্যাঙ্গোবার,আচার, চাটনি প্রভৃতি তৈরি করে, তাদেরকে এবছর বেশি বেশি আম-লিচু কেনার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
১০. মৌসুমি ফলে যেন কেমিক্যাল ব্যবহার করা না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা।
সুপারিশগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বাস্তবায়নরে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুর রাজ্জাক।
(ঢাকাটাইমস/১৬মে/জেআর/ইএস)

মন্তব্য করুন