পরিচালক সমিতিকে সেলিম খানের পাল্টা আল্টিমেটাম

চলচ্চিত্রের মন্দা অবস্থার মধ্যেও একের পর এক সিনেমা প্রযোজনা করে যাচ্ছে শাপলা মিডিয়া ও তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সেলিম খানকে সতর্ক করে একটি চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। ‘আগস্ট ১৯৭৫’ ছবির পোস্টার রিলিজ অনুষ্ঠানে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে আমন্ত্রণ করায় এই সতর্কবার্তা পাঠানো হয়।

সেই চিঠির বিপরীতে এবার তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়ে পরিচালক সমিতিকে পাল্টা চিঠি পাঠালেন সেলিম খান। ইতিহাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তিনি এই রোষানলে পড়েছেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেলিম খান।

পরিচালক সমিতিকে পাঠানো চিঠিতে তিনি লিখেছেন, গত ১২ আগস্ট একটি সতর্কীকরণ পত্র পেয়েছি। যার কোনো স্মারক নাম্বার নেই। যা প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই কার্যকর পত্র হতে পারে না। পত্রটি আপত্তিকর ও দুঃখজনকও বটে। সতর্কীকরণ পত্রে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন বয়কট করেছে বলে উল্লেখ করেছে। এ বিষয়ে আমাকে এবং আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়নি।’

তাকে সতর্কবার্তা পাঠানোর কারণ উল্লেখ করে সেলিম খান চিঠিতে লেখেন, ‘গত ৬ আগস্ট এফডিসির জহির রায়হান ভিআইপি প্রজেকশন হলে আমার প্রযোজনায় ‘আগস্ট ১৯৭৫’ ছবিটির টিজার ও পোস্টার রিলিজ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করি। সেখানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি ও পরিচালক সমিতিসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের নেতা ও কলাকুশলীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন ডিপজল, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অভিনেতা রুবেল, প্রযোজক সমিতির সদস্য আরিফুর রহমান টিটু, সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহীন সুমন, অভিনেত্রী অঞ্জনা সুলতানা, দিলারা এবং অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন অংশগ্রহণ করেন।’

সেলিম খান লেখেন, ‘অনুষ্ঠানে জায়েদ খান উপস্থিত থাকায় আমাকে সতর্কীকরণ পত্র দিয়েছে পরিচালক সমিতি। ভেবেছিলাম ছবিটির পোস্টার ও টিজার মুক্তি অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার স্বপক্ষের সবাই অংশ নেবেন। কিন্তু আপনারা অংশগ্রহণ করেননি। জাতির পিতাকে হত্যা ও হত্যা পরবর্তী দাফন নিয়ে ইতিহাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কারণেই কী আমাকে পরিচালক সমিতির রোষানলে পড়তে হচ্ছে? এই প্রশ্নই এখন আমার কাছে বড় হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী চক্র এখনো বেশ তৎপর বলে ইঙ্গিত পাচ্ছি।’

যারা সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েও উপস্থিত হননি, তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষে নন বলেও মনে করেন সেলিম খান। চিঠিতে তিনি দাবি করেন, ‘ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার ও সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুর কমিটির সম্মানিত সদস্য, ছাত্রলীগ নেতা জায়েদ খান সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন চেতনার টানে। এতে আমি সংগঠনবিরোধী কাজ করেছি বলে মনে করি না। তবে যারা সংবাদ সম্মেলনে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেও আসেননি, অথচ নেতিবাচক মন্তব্য বা ষড়যন্ত্র করছেন, তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের নয় বলেই আমি মনে করি। সেই সঙ্গে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিএফডিসি ধ্বংস করতে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র উঠেপড়ে লেগেছে।’

পরিচালক সমিতিকে দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে সেলিম খান লেখেন, ‘আগামী তিনদিনের মধ্যে উক্ত পত্রের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ ও তা প্রত্যাহার করতে বলা হলো। তা না হলে আমি এবং আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটিই নতুন কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করব না। এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। সতর্কীকরণ পত্র প্রত্যাহার করা না হলে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করব।’

ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/এসকেএস