যদি নির্বাসন দাও
বাহ! কী রাজসিক মৃত্যু
কী রাজকীয় অগস্ত্য যাত্রা!
কী স্বল্প যন্ত্রণায় জীবনের যবনিকা!
হীরার খনির মতো কী রত্নগর্ভা
ঈর্ষণীয় প্রেম!
‘যদি নির্বাসন দাও,আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!’
বাহ্ ! দণ্ড ভোগের কী সরল সমীকরণ?
অপরাধের আত্মস্বীকৃতি নেই,
আত্মপক্ষ সমর্থন নেই, বেকসুর খালাসের কসরত নেই
দ্রোহ বিবাদ বিরোধ আপত্তি প্রতিবাদ প্রতিরোধ
প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা যুক্তিতক্ক, কিচ্ছু নেই।
অগ্রজ কবির এ শর্তারোপ কি রুদ্ধ অভিমানের
অনুরাগ হুমকি নাকি কাতর নিবেদন
ভাবোদ্দীপক আবেগের উচ্ছ্বাস
সুগভীর প্রেম নিবেদন
নাকি ভালোবাসার অধিকারের ?
সে প্রশ্নের বার্তা নিয়ে চৌকস গুপ্তচর বাজপাখি
রাজ্য রাজ্যান্তর চষে বেড়িয়ে শেষতক
সর্বসম্মত ফিরতি বার্তায় জানিয়েছে,
কবিতার অন্তর্গত বার্তা থাকে পাঠকের বোধে;
কবির ভাব আর ভাষায় তা হাতড়ে বেরানোটা তুল্য হতে পারে
অতলান্তিকে হারিয়ে যাওয়া
বাগদানের হীরের অঙ্গুরি খুঁজে পেতে ডুবুরি সাজা
কিংবা আলকাতরায় খাবি খাওয়া তেলাপোকার
জীবন বাঁচানোর জন্য প্রাণিপ্রেমির মহতি উদ্যোগ।
তবে আমিও জানান দিয়ে যাই;
যদি নির্বাসন দাও,
আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো না;
ওষ্ঠে ছোঁয়ায়ে মরে যাবার মতো যথাযোগ্য হীরক খচিত বিষাক্ত অঙ্গুরি
সাত জনমেও আমার জোগাড়ে আসবে না।
ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়ালে বিষক্রিয়ায় মরবার
বৈজ্ঞানিক সত্যাসত্য নিয়ে বিতর্ক বাহুল্য।
বিজ্ঞানের বেগ যদি কাব্য-আবেগ কেড়ে নেয়
তবে প্রেম হবে শেয়াল ও শকুনের খাদ্য।
যদি নির্বাসন দাও, আমি বিষ পান করে মরে যাবো না;
‘এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি’
আমি ভালোবাসার অধিকারে এখানেই রয়ে যাবো,
প্রেমের দাবিতেই থাকবো
আঁচলের আশিসে আর হৃদিরাগের উষ্ণ আলিঙ্গনে।
তুমি নির্বাসন দিলে নির্বাসনেই যাবো আমি
তবে সে দণ্ড ভুগবে আমার নশ্বর দেহ
আর আমার দেহাতীত অনশ্বর প্রেম রয়ে যাবে এখানে
যেখানে বাবুইর বাসা বুননের স্বর্ণতৃণের মতো আছো তুমি।
‘এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি’
আমার প্রেমের বীজতলা
যেখানে অঙ্কুরিত পল্লবিত পুষ্পিত ফলিত ও সমর্পিত
আমার আজন্ম লালিত স্বপ্নের বীজ;
সে হিসেব করবার সাধ্য নেই কোনো সূত্র বা গণিতের
যার সঙ্গে আছে দশ দিশিতে নন্দিত চিত্রণ
স্বেদ আর শোণিতের।
যদি নির্বাসন দাও
আমি রয়ে যাবো
যেখানে সোনা ফসলের শিষে শিষে
অন্তরঙ্গ লাজরাঙা চুপকথা,
যাকে ঘিরে জন্মান্তরে আমার আদি-অন্তের রূপকথা।