কালিকার চোখের দিকে তাকালে পৃথিবীর সব মায়া এসে বুকে জমাট বাঁধে!

এত হিংস্র, অসভ্য মানুষ এখনো এই দেশে! এত দু:খ হয় মাঝে মাঝে।এদের সাথে এই দেশে বাঁচতে গিয়ে দিনদিন নিজেই অচেনা হয়ে যাচ্ছি নিজের কাছে।নিজের আচার আচরণও নিজের কাছে অপরিচিত হয়ে উঠছে! প্রতিটা মুহুর্ত কাটে মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে।
আজ সকালে আমার পোষা কুকুর কালিকাকে নিয়ে বাসার নিচের রাস্তায় বেরিয়েছ্লাম।ডেডএন্ড এই গলিটার শেষ বাড়িটায় গার্ড ছাড়া কেউ থাকে না। বিশাল বাউন্ডারির ভেতর অনেকগুলো গাড়ি, পিকআপ পার্ক করা থাকে।বাড়ির গার্ডরা বাউন্ডারির বাইরের লাগোয়া রাস্তায় পুঁইশাক লাগিয়েছে, আর সিটি কর্পোরেশন নিমগাছ। সাধারণত গাছ দেখলেই কুকুরেরা শুঁকতে থাকে, সেরকম কালিকাও করছিল। অমনি এক গার্ড তেড়ে এসে বলল কুকুর যেন এখানে না আসে, এই শাক তারা খায়।আমি বললাল রাস্তায় তো কুকুর আসবেই, আপনি বেড়া দেন।ব্যাস সে তার পুরুষত্বের দম্ভে পাশের রাখা একটা সিমেন্টের পিলার উঠালো কালিকাকে মারবে বলে।
১মাসের একটা কুকুরছানাকে রাস্তা থেকে তুলে নিজের কোলে কোলে বড় করেছি যে ধীরে ধীরে আমার সন্তান হয়ে উঠেছে। তার প্রতি কারো এমন আচরণ সহ্য করা কতটা কষ্টের সেটা যেকোনো সন্তানের মা বলতে পারবে।আমার কষ্টের হিংস্রতা চেপে হয়ে আমি শুধু বললাম সোসাইটির কল্যাণ সমিতির কাছে গিয়ে কমপ্লেইন করেন, কুকুর রাস্তায় আসবেই।আমি সবার সাথে কথা বলব না।
এর আগেও ২/১বার এরকম হয়েছে।কুকুর নিয়ে নিচে যায় বলে আমার অফিস এসিসট্যান্টকে বকাঝকা করেছে এই লোক, আমি কিছু বলিনি।
এই গলিতে আরো দুটো কুকুর থাকে এবং এই বাড়ির সামনের রাস্তায় হাগু-হিসু করে।এই কুকুরগুলো আমার কুকুরটাকে সহ্য করতে পারে না, বেশ কয়েকবার কামড়িয়েছে।এরাসহ নিকেতনে এত বেশি কুকুর যে কালিকাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া এক ভয়ংকর পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যাওয়া।তাই বেশিরভাগ সময় আমরা শুধু এই গলিতেই মিনিট দশের জন্য কালিকাকে বের করি। তাও প্রতিদিন না। বাড়িটার উল্টো দিকের রাস্তার ময়লার স্তুপও আছে। কিন্তু সমস্যা শুধু আমার কুকুর নিয়েই কেন জানি না।
যে বাড়িটায় আমি থাকি সেই বাড়ির লোকেরাও কেউ কুকুর সহ্য করতে পারে না। কেউ ভয় পায়, কেউ ঘৃণা করে, কেউ বিশ্বাস করে নামাজ হবে না। যার জন্য সবার সাথে একরকম যুদ্ধ করে, সতর্ক হয়ে কুকুরটা নিয়ে মুভ করতে হয়।
একটা বোবা প্রাণী তার প্রতি মানুষের এত হিংসা-আক্রোশ ! অবাক লাগে।কুকুর পোষার পর থেকে আমি দেখছি মানুষরত অমানবিক হয়।ওরা একবার ভাবেনা এটাও একটা জীব, প্রকৃতিই ওকে সৃষ্টি করেছে।
কুকুর, বিড়াল বা কোনো প্রাণীর প্রতি পোষার মতো বাড়তি টান আমার কখনো ছিল না।বিদেশি কুকুর বাড়িতে এনে পোষার মতো বিলাসিতা আমার মতো একা মানুষের পক্ষে সম্ভব না।কোনো এক শীতরাতে দেশি কুকুরের এই বাচ্চাটাকে কুড়িয়েছিলাম।ওর বাকী ভাইনবোনগুলো দৌড়ে সরে গেলেও ও আমার কোলে ওঠে পড়ল। আমার শরীরের ওম পেয়ে বাচ্চাটা কোল থেকে নামছিল না। সেই থেকে সে আমার সাথে।এখনতো আমার প্রতি মুহুর্তের সাথী।ওর চোখের দিকে তাকালে পৃথিবীর সব মায়া এসে বুকে জমাট বাঁধে! ওকে আনার পর আমি এখন বুঝতে পারি রাস্তার কুকুরগুলো কত কষ্টে জীবন যাপন করে।এবং আমি নিজেকেই ধন্যবাদ দেই দেশি প্রজাতির একটি প্রাণকে আমি লালন পালন করে কষ্টের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি।
আমার সন্তানের মতো এই কুকুরটাকে আঘাত করতে চাওয়া এবং আমাকে সাথে বাজে ব্যাবহার করা লোকটার নামে কমপ্লেইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আর মানুষ যেন প্রাণীদের প্রতি আরেকটু সদয় হয় সেই কামনা করি।
লেখক: অভিনয়শিল্পী
ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/এসকেএস

মন্তব্য করুন