ছোট গোলমরিচের বড় গুণ, ঠেকাবে করোনাও

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৪৬ | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:১৫

প্রাচীন বৈজ্ঞানিক ও ঔষধিক শাস্ত্রে গোলমরিচ বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যসম্মত মসলা। গোলমরিচের বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো পিপার নিগ্রাম, যা পুষ্টিতে ভরা ঝাঁঝালো, শুকনো ঝাল স্বাদের ফল।

মসলার রাজ্যে গোলমরিচ একটি অতি পরিচিত নাম। মসলার রাজা বলা হয়ে থাকে ভারতীয় এ মসলাকে। প্রাচীনকাল থেকেই এটির ব্যবহার।

খাদ্যের স্বাদ বাড়াতে যেমন গোলমরিচের ডাকনাম তেমনি ভেষজ গুণে।

বর্তমানে সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা। এ মহামারি থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত গোলমরিচ খেয়ে ইমিউনিটি বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন আধুনিক পুষ্টিবিদরা। রোজ পরিমিত পরিমাণে গোলমরিচ খেলে একাধিক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

গোলমরিচে রয়েছে শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও ফাইবার।

জেনে রাখা ভালো, নানা রকমের সুগন্ধি তেল তৈরি হয়ে থাকে গোলমরিচ থেকে। কী কাজে লাগে এসব সুগন্ধি তেল? তাহলে শুনুন, এসব তেল থেরাপি, শরীরের পেশিতে মালিশ, আর্থ্রাইটিসের ফোলাভাব ও হজমে কাজ করে খুব।

গোলমরিচে রয়েছে আরো অনেক গুণ। এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল থাকে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ও জ্বরনাশ হিসেবে কাজ করে।

সংক্রমণের বিরুদ্ধে গোলমরিচ

আমাদের শরীরে নানা রকমের সংক্রমণ হয়ে থাকে। গোলমরিচের এন্টিব্যাক্টিরিয়াল উপাদান সেসব সংক্রমণের বিরুদ্ধে দারুণ ভূমিকা পালন করে। এরকম প্রমাণ মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পরীক্ষায়। দেখা গেছে, গোলমরিচে থাকা পিপারাইন শরীরে যেকোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ে। বিশেষ করে শরীরে কোনো জীবাণু প্রবেশ করে প্রজনন শুরু করলে সেটি প্রচণ্ড লড়াই করে জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে গোলমরিচ

আমরা জেনে আসছি যে স্বাস্থ্য সুখের মূল। কিন্তু এটা বলা ভালো যে সুস্বাস্থ্যই সুখের মূল। আর সে সুস্থাস্থ্যের জন্য আমরা কত কিছুই না করি। এটা কি জানি, সুস্বাস্থ্যের জন্য অ্যান্টি অক্সিডেন্ট খুবই প্রয়োজন? হ্যাঁ, এবং গোলমরিচে রয়েছে উচ্চ পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়া যাদের অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে হয়, এজন্য মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন, তাদের জন্য গোলমরিচ দারুণ ঔষধির কাজ করে।

গ্যাসের জন্য গোলমরিচ

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কমবেশি ভোগেন প্রায় সকলেই। অনেক নিয়মিত ওষুধও সেবন করেন। আবার ওষুধ খেয়েও আশানুরূপ কাজ করে না- এমনও হয়ে থাকে। তখন মাত্রা বা ওষুধ পাল্টানোর পরামর্শ দিযে থাকেন চিকিৎসকরা। এ বিড়ম্বনায় পড়েছেন? এখন উপায়? উপায় আছে নিশ্চয়ই। গোলমরিচ। আদতে মসলা হলেও এর রয়েছে দারুণ ভেষজ গুণ। গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে এর ভূমিকা খুবই কার্যকর।

গোলামরিচে এমন কিছু কিছু উপাদান রয়েছে, যা পেট ফাঁপা বা টক ঢেকুর থেকে মুক্তি দেবে নিমিষেই। পেটে গ্যাস হলে এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ গোলমরিচ মিশিয়ে পান করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায়

আধুনিক মানুষের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে কোলেস্টেরল একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ কোলেস্টেরলের সম্যসায় ভুগছেন। তাদের জন্য ভালো তথ্য হলো- রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে গোলমরিচ। তাই রোজ গোলমরিচ খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে গোলমরিচ

একটা সময় ক্যানসার ছিল বিরল অসুক। দুরারোগ্য তো ছিলই। বর্তমানে ক্যানসারে বিস্তৃতি বেড়েছে অনেক। সাধারণ্যে হানা দেয়া এ রোগের চিকিৎসা অনেকটাই ব্যয়বহুল। এ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায় জানা থাকা সবার জন্য্ জরুরি। এজন্য নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে গোলমরিচ।

ক্যানসার প্রতিরোধকারী উপাদান সেলিনিয়াম, কারকিউমিন, বেটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন বি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে গোলমরিচে। কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রেকটামে চাপ কমাতে সাহায্য করে গোলমরিচ। প্রোস্ট্রেট ক্যানসারের জন্যও এটি বিশেষভাবে উপকারী।

আরও চমকপ্রদ তথ্য হল- ক্যানসারের জন্য যেসব ডোক্টাক্সেল বা কেমো থেরাপির ওষুধ ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর অনেকগুলোই তৈরি হয় গোলমরিচ দিয়ে।

সর্দি কাশি ও ঠান্ডায় গোলমরিচ

সাধারণত সর্দি কাশি ও ঠাণ্ডার জন্য কোনো মৌসুম লাগে না। সারাবছর হয়ে থাকে এই স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই এই সাধারণ রোগটি থেকে বাঁচতে সহজলভ্য গোলমরিচ ভরসা করা যেতে পারে। দারুণ কাজ দেয় এই মসলা।

কিভাবে খেতে হবে? কিভাবে কাজ করবে? জানুন তাহলে-দুই চামচ গোল মরিচের গুঁড়ার সাথে এক চামচ মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে তা সর্দি সারাবে সহজেই। খুলে দেবে বন্ধ নাক। এটি দিনে তিন বার পান করতে হেবে। যাদের অ্যাজমা বা সাইনাসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য গোলমরিচ উপকারী ভেষজ মসলা।

দাঁত ও মুখের জন্য গোলমরিচ

দাঁত ব্যথা ও মুখের জন্যে খুব উপকারী গোলমরিচ। এজন্য কিছু কিছু টুথপেস্ট তৈরিতেও গোলামরিচের ব্যবহার করা হয়। গোলমরিচের এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান দাঁত ও মুখের জন্যে বিশেষভাবে উপকারী।মাড়ির সমস্যা হলে বা ফুলে গেলে এক চিমটি লবণের সাথে একটুখানি গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে মাড়িতে হালকা করে মালিশ করুন। ভাল ফল মিলবে অবশ্যই।

ওজন কমাতে গোলমরিচ

মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে স্থলতার সমস্যা এখন শুধু উন্নত বিশ্বেই নয়, বাংলাদেশেও এর কমতি নেই। মোটা হয়ে গেলে বা ওজন বেড়ে গেলে তা কমানো খুব কষ্টসাধ্য। ব্যায়াম, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, এমনকি ওষুধও খেতে হয়। এসবের ঝামেলা যারা এড়াতে চান তাদের ভরসা রাখুন ছোট্ট এ গোলমরিচে। জেনে রাখুন, শরীরে যেসব কোষ মেদ সৃষ্টি করে, গোলমরিচ সেগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। সাহায্য করে মেদ ঝরাতে। তাই ওজন কমানোর খাদ্য তালিকায় গোলমরিচ যোগ করতে অবশ্যই হেলা করবেন না। যেকোনো সুস্বাদু খাদ্যকে অন্য কোনো মশলাপাতি দিয়ে ম্যারিনেট না করে, লেবু ও গোল মরিচ ব্যবহার করুন। কারণ এতে রয়েছে মাত্র ৮ ক্যালোরি।

হজমের জন্য গোলমরিচ

আমরা বেঁচে থাকার যেসব খাদ্য গ্রহণ করি এমনি এমনিই হজম হয়ে যায়না। এজন্য দরকার হয় প্রয়োজনীয় এনজাইম বা হরমোন। তা গোলমরিচের দ্বারা ভালোভাবে তৈরি করা যায়। খাওয়ার সময় গোলমরিচ খেলে তা প্যানক্রিয়াস ও লিভারের হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। খাদ্যকে ছোট ছোট করে ভেঙে এনজাইম দ্বারা হজম করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস এক নীরব ঘাতক। যাকে একবার ধরেছে আজীবন থেকে যাচ্ছে সাথে। হাঁটা, কম খাওয়া, এটা খাওয়া যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না- এরকম দুর্বিষহ অবস্থায় আশার আলো হচ্ছে গোলমরিচ। গোলমরিচে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে ও হাইপারগ্লাইসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত, গোলমরিচের তেলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান দুই রকমের এনজাইম সৃষ্টি করে যা স্টার্চকে গ্লুকোজে পরিণত করে। করে। এর ফলে ডায়াবেটিসের প্রবণতা অনেক কমে আসে।

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/আরজেড/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :