ওসি প্রদীপ, লিয়াকত চাকরি থেকে পুরোপুরি অপসারিত হয়েছেন কি?

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:০৯| আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:২৬
অ- অ+

কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যায় প্রাণে দণ্ডিত হয়েছেন পুলিশের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী। আলোচিত মামলাটির রায়ের পর এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি থেকে পুরোপুরি অপসারিত হয়েছেন কি না সেই প্রশ্ন এখন জনমনে। তবে আদালতে দণ্ডিত পুলিশের এই দুই সাবেক কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হলেও আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের পর তাদের চাকরি থেকে ডিসমিস করা হবে।

২০২০ সালের ৬ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ব্যাপক আলোচনা ওঠার পর ওই বছরের ৬ আগস্ট আদালতের মাধ্যমে সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ কারাগারে যান। পরদিন ৭ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী। তাদের দুজনই পুলিশ থেকে বরখাস্ত হন। আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় তাদের দুজনকে স্থায়ী বরখাস্ত করবে পুলিশ সদরদপ্তর।

পুলিশ সদরদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, সরকারি চাকরি বিধানুযায়ী কোনো ব্যক্তি সরকারি চাকরিতে থাকাকালে কোনো ফৌজদারি অপরাধে জড়িয়ে কারাগারে গেলে তিনি সাময়িকভাবে বরখাস্ত হবেন। পরে ওই অভিযোগে তার দুই বছরের বেশি সাজা হলে তিনি চাকরি হারাবেন। তবে ওই সাজার কপি আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যেতে হবে। পরে তাকে চাকরি থেকে ডিসমিস করা যাবে।

পুলিশ সদরদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো. হায়দার আলী খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী ওনারা (প্রদীপ ও লিয়াকত) এখনো সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন। এখন ওনারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কিন্তু এখনো তাদের সাজার রায়ের কপি আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। অফিসিয়ালি তাদের সাজার কপি আমাদের কাছে এসে পৌঁছালে তাদের চাকরি থেকে ডিসমিস করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।’

আলোচিত ওসি প্রদীপের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। নিজ জেলা চট্টগ্রাম দিয়ে পুলিশের চাকরিজীবন শুরু করা প্রদীপ বারবার অপরাধে জড়িয়ে চট্টগ্রাম নগরীর তিন থানা থেকে প্রত্যাহার এবং সাময়িক বরখাস্তসহ পাঁচবারের বেশি বিভাগীয় শাস্তি পেয়েছিলেন।

তবে প্রতিবারেই প্রদীপ নিজেকে বাঁচিয়ে নেন অজ্ঞাত খুঁটির জোরে। বারবারই তিনি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে লোভনীয় সব থানার পোস্টিং বাগিয়ে নিয়েছেন। আর ওসি পদে থেকে নানাভাবে অনৈতিক পথে অর্থ উপার্জন করে চট্টগ্রামে রীতিমতো সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না এবার।

বোয়ালখালী উপজেলার সরোয়াতলী ইউনিয়নের ছেলে প্রদীপ ১৯৯৬ সালে এসআই পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। বিএনপি সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া প্রদীপ মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরিদর্শক থেকে ওসি পদটি বাগিয়ে নিতেও ওসি প্রদীপের খুব বেশিদিন সময় লাগেনি। ঘুরেফিরে চট্টগ্রামের সব থানাতেই ওসি পদে চাকরি করেছেন তিনি।

২০১২ সালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পতেঙ্গা থানা, ২০১৩ সালে পাঁচলাইশ থানা এবং ২০১৫ সালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসির দায়িত্ব পালন করেন প্রদীপ কুমার দাস। তবে একটি থানাতেও তিনি স্বস্তিতে বিদায় নিতে পারেননি। প্রতিবারই হয় সাসপেন্ড অথবা প্রত্যাহার হয়েছে নানা অপরাধে জড়িয়ে। সব থানা থেকে সাসপেন্ড হওয়ার রেকর্ডও গড়েছেন। এরপর চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে কক্সবাজার। প্রথমে মহেশখালী থানা হয়ে টেকনাফ। তবে সিনহা হত্যার পর প্রদীপের ঠিকানা হয় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগারে। ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর প্রদীপ কুমার দাস ও লিয়াকত আলীকে কক্সবাজার কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।

প্রদীপের সঙ্গে প্রাণে দণ্ডিত সিনহা হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলীর বাড়িও চট্টগ্রামে। পটিয়া উপজেলার ছেলে লিয়াকত পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর তার এলাকার মানুষের কাছেই মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তবে প্রদীপের চেয়ে তার দাপট ছিল কিছুটা কম। তার বিরুদ্ধেও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০২ফেব্রুয়ারি/এএ/ডিএম/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বিরাট উল্লম্ফন, ৩০ বিলিয়নের মাইলফলক
খুলনায় গুলিতে যুবক নিহত, আরও দুজন গুলিবিদ্ধ
গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী
ইরান থেকে দেশে ফিরতে পাকিস্তান সীমান্তে ২৮ বাংলাদেশি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা