সুবর্ণচরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়ি বহরে হামলা, আহত ২৭

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণাকালে আ.লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ওমর ফারুকের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নে চরহাসান ভূইয়ারহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার মার্কা আনারস।

হামলার ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ২৭ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটজনকে আটক করে।

আহতদের মধ্যে কয়েকজন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে চেউয়াখালি বাজারে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে গাড়ি ও মোটরসাইকেল বহর নিয়ে চরহাসান ভূইয়ারহাটের দিকে যাচ্ছিলেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক। তাদের বহরটি চরহাসান ভূইয়ারহাট বাজারে প্রবেশ করার সময় আগ থেকে ওইস্থানে থাকা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তরিকুল ইসলামের সমর্থকরা স্লোগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়ি বহরে হামলা চালায়। এ সময় গাড়ি বহরে থাকা অন্তত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২৭ জন আহত হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের নির্দেশে পুলিশ ৫৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চরহাসান ভূইয়ারহাট বাজারে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি প্রশাসন থেকে কাউকে দেওয়া হয়নি।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে চেউয়াখালি বাজারে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে গত কয়েকদিন ধরে তার প্রতিপক্ষ নৌকা প্রার্থীর লোকজন তার দুটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। বিভিন্ন স্থানে তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে। হাসপাতালে ভর্তি আছেন কয়েকজন।

লিখিত বক্তব্যে ওমর ফারুক আরও বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি চর হাসান ভূঁইয়ারহাটে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছেন নৌকার সমর্থকেরা। এ সময় তার সমর্থক ইসমাইলকে মারধর করে ডান হাতের কবজি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি জনতা বাজারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তরিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা হয়। এ সময় তার সাত কর্মী আহত হন।

এ ছাড়া ৩ ফেব্রুয়ারি চর হাসান ভূঁইয়ারহাটে ওমর ফারুকের লিফলেট বিতরণের সময় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাহিম উদ্দিনকে তরিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা মারধর করেন। সবশেষ গত শুক্রবার চেউয়াখালী বাজারেও তার কর্মী সুমনকে রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওমর ফারুক। ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, মো.ওমর ফারুকের কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগগুলো মিথ্যা বানোয়াট। ওমর ফারুক নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে তার উপর নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তার কোনো কর্মী ওমর ফারুকের কোনো নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা করেননি। নির্বাচনে ভোটারদের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করতেই এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তিনি বলেন।

চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, এই ঘটনায় তৎক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে আটজনকে আটক করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৫ফেব্রুয়ারি/এআর/এলএ)