১৭ লাখ ঢেলে সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১৬:৪৫ | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১৬:৩৩
সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিব ইমরান (বাঁয়ে) ও সাধারণ সম্পাদক হাছানুর জামান (ডানে)।

ছাত্রলীগের সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখার অনুমোদন পাওয়া আংশিক কমিটির সভাপতি রাজিব ইমরান ও সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বলাবলি হচ্ছে, কমিটিতে তার টাকার জোরে পদ বাগিয়েছেন। এই দুই নেতাই জেলা সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের ‘ম্যান’ বলে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৮এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. সুমন হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটির কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

কমিটির অনুমোদনের বিষয়টি শুক্রবার প্রকাশ পাওয়ার পরই সভাপতি রাজিব ও সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা দুজনই জেলা সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের লোক।

ছাত্রলীগেরই বেশ কিছু নেতাকর্মীর দাবি, এই কমিটির অনুমোদনের পেছনে ১৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনের বিরুদ্ধেই শিবির সম্পৃক্ততা রয়েছে।

অভিযোগ ওঠার পর আলোচনায় এসেছে রাজিব ইমরানের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলের (https://facebook.com/rajib.spi) আগের কিছু অ্যাক্টিভিটি। তার ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একটি পোস্টও ছড়িয়ে পড়েছে।

যেখানে রাজিব ইমরান তার দা হাতে একটি শিশুর ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে লেখা আছে, ‘আমি লেংটা মনির, নৌকায় ভোট চাইতে আইলে ঠ্যাং কাইট্টা রাইখা দিমু।’

ওই প্রোফাইলে ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি শেয়ার করা আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে লেখা আছে, ‘হালার-পো হালা, আজ তোর একদিন, কি আমার একদিন! ভোট না দিয়ে যাবি কৈ?’

এছাড়া ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কাদের সাহেব, “যারা হেলমেট পড়ে বা মুখ ঢেবে ছাত্রদের মারধর করে এবং লাঠি, চাপাতি নিয়ে পুলিশের সাথে ঘুড়ে বেড়ায় তাদেরকে কি বিএনপি জামাত শিবির বলে, আপনার চাইতে মখা ভাল ছিলো।”

২০১৮ সালের ৮ আগস্ট তিনি তার প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মেজর অব শাহ আলম যা বলছিলেন সেটা এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার, Make yourself prepared be stronger, অনেক অস্র দেবো পরিশিক্ষণ হবে, prepared to remain ready to fight our common enymy. ce ce ce hasina lojjai বাঁচিনা।

এদিকে কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়ার পর শনিবার তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ধন্যবাদ দিলে আপনাকে ছোট করা হবে ভাই, অনেক আগে থেকে আপনার সাথে আমার পরিচয়, সব সময় নিজের ছোট ভাইয়ের মত ভালবাসা দিয়েছেন, ভুলগুলো সব সময় ধরায় দিবেন, আর যে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন তার সঠিক ব্যবহার যেন করতে পারি তার জন্য দোয়া করবেন।’

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া হাসানুজ্জামান সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ-সম্পাদক। জাহানাবাজ গ্রামের কাওছার আলীর ছেলে হাছানুজ্জামান আগে কখনো আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য, বিগত সময়ে পকেট কমিটির মাধ্যমে হাসানুজ্জামানকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ-সম্পাদক করা হয়। এই নিয়ে আপত্তি ছিলো তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।

রাজিব ইমরানের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে সরকারবিরোধী পোস্ট।তারা বলছেন, হাসানুজ্জামানকে সরকার দলীয় কোনো প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বরং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিল। কিন্তু টাকা দিয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ম্যানেজ করে তার মাধ্যমে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়েছেন তিনি।

ধুলিহর ইউনিয়ন আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বোরহান উদ্দীন, সাধারণ-সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ একাধিক নেতারা দাবি করেছেন, হাসানুজ্জামান আওয়ামী পরিবারের সন্তান নন। বিগত সময়ে ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে তাকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ-সম্পাদক করে পকেট কমিটি গঠন করে তৎকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ-সম্পাদক। বিগত সময়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউপি নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিল।

সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান দাবি করেন, তিনি উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছিলেন, দলের বিপক্ষে নয়। ওই ঘটনাকে পুঁজি করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা নানা রকম অবান্তর তথ্য ছড়াচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রলীগের এক সভাপতি প্রার্থী জানান, জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক সুমন হোসেন তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। তবে রাজিব ইমরান ৮ লাখ টাকা দেওয়ায় তাকে সভাপতি করা হয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার হাত দিয়েই।

এদিকে সম্প্রতি তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব জেলা সাধারণ সম্পাদক সুমনের পরামর্শের টর্চার সেল খুলে এক ছাত্রকে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনায় আসে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের কর্মকান্ড।

তবুও বেপরোয়া এই ছাত্রলীগ নেতার দলের পরিপন্থী কর্মকাণ্ড যেন থেমে নেই। দলের বিরুদ্ধে কাজ করা দুই শিবিরকর্মীকে বানালেন সভাপতি-সম্পাদক। কাদেরকে দেওয়া হলো সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের পদ? এমন প্রশ্ন এখন ছাত্রলীগেরই ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মুখে।

এতসব অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য অনুমোদিত কমিটির সভাপতি রাজিব ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

টিকটকে পরিচয়-প্রেম, অতঃপর কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার

যে কথা বলায় এমভি আব্দুল্লাহ’র নাবিকদের কিছু করেনি জলদস্যুরা

উখিয়ায় আরসার আস্তানা থেকে বিপুল অস্ত্র গ্রেনেড ও রকেট শেল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২

বগুড়ায় হত্যা মামলার আসামিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

রোহিঙ্গাদের জন্য ইরানের খাদ্য সহায়তা

শেরপুরে এক হাজার ২৯২ বস্তা ভারতীয় চোরাই চিনিসহ গ্রেপ্তার ১

উপজেলা নির্বাচন: ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাইয়ের মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ হাইকোর্টের

মাগুরায় কৃষকদের মাঝে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ

কালীগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত বৃদ্ধের মৃত্যু

ত্রিভুজ প্রেমের জেরে কলেজছাত্র খুন, যুবকের যাবজ্জীবন 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :