গুলশান ভবনে আগুন: ‘ঝুঁকিমুক্ত’ ঘোষণা হয়নি, এখনই বাসিন্দারা উঠতে পারছেন না
গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের বহুতল ভবন ‘জাকির মোশাররফ স্কাইলাইন’-এর বাসিন্দারা এখনই সেখানে উঠতে পারছেন না। তাছাড়া ভবনটি এখনও ‘ঝুঁকিমুক্ত’ কি-না তা জানতে ফায়ার সার্ভিস কিংবা রাজউক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে ভবন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বসবাসের উপযোগীতা না থাকায় অনেক বাসিন্দা সেখান থেকে তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ গুলশানের ২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের ২ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১৪ তলা ভবনের ১১ তলায় আগুন লাগে। আস্তে আস্তে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা এখনও জানা যায়নি। এদিকে আগুনে দুইজনের মৃত্যু এবং অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
মঙ্গলবার রাতে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আগুনে পোড়ার কারণে বর্তমানে ভবনে বসবাস করার মতো অবস্থা নেই। বিশেষ করে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইসগুলোও বিচ্ছিন্ন আছে। এ পরিবেশে বাসবাসের অবস্থা নেই। তবে আমরা (পুলিশ) ভবনের বাইরে নিরাপত্তা দিচ্ছি।’
আগুনে পোড়া জিনিসপত্র অনেকে সরিয়ে ফেলছেন জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, রাজউক, ফায়ারসহ অনান্য সংস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত করছে; এখনও ভবনটি ‘ঝুঁকিমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়নি। ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করলেই বাসিন্দারা ফ্ল্যাটে ফিরতে পারবেন।’
ফায়ারের পাশাপাশি, সেনা-নৌ-বিমান:
প্রথমে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এসময় ভবন থেকে বাসিন্দাদের নামিয়ে আনতে থাকে তারা। আগুন নেভানোর চেষ্টার মধ্যেই ভবনের ১২ তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে আরও ১৩ ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। মোট ১৯ ইউনিটের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ভবনের বাসিন্দাদের উদ্ধার কাজ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও সেখানে কাজ করে। সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে অংশ নেন। আগুন লাগার পর ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে ২২ জনকে উদ্ধার করে আশপাশের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সোমবার ভোর থেকে ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালানো হয়। পরে আগুনের কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিরুপায় হয়ে ভবন থেকে ঝাঁপ: ভবনটির ফ্ল্যাটে কর্মরত ছিলেন কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেন ও বাবুর্চি রাজিব পাইরিস রাজু। আগুন লাগার পর কোনো উপায় না পেয়ে জীবন বাঁচাতে এ-১২ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে নিচে সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেন রাজু। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনেরই মৃত্যু হয়। আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় একইভাবে সুইমিং পুলে ঝাঁপিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেন শামা রহমান সিনহা। তিনি বিসিবি পরিচালকের স্ত্রী। তবে তিনিও শঙ্কামুক্ত নন।
শামা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। অগ্নিকাণ্ডের সময় লিফটে আটকা পড়েছিলেন। একপর্যায়ে ৭ তলায় লিফট থেকে বের হন। পরে দিশেহারা হয়ে ভবনের নিচের সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেন। এতে তিনি শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান।
মামলা: আগুনে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় গুলশান থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। সোমবার একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের এরিয়া ম্যানেজার রাকিব হাসান এ মামলা করেন।
(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/এসএস/কেএম)