সিদ্ধিরগঞ্জে আলো-আঁধারের সড়ক, বাড়ছে ছিনতাইয়ের ঘটনা

একপাশে সাদা বাতির আলোতে আলোকিত সড়ক। অন্যদিকে ঘুনঘুনে অন্ধকারে নিমজ্জিত পথ। এমনই দৃশ্যের দেখা মিলেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) আওতাভুক্ত সিদ্ধিরগঞ্জ-জালকুড়ি সড়ক (দশ পাইপ রোড) সড়কের।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি-জালকুড়ি সড়কের কিছু অংশে সড়কবাতি জ্বললেও বেশিরভাগ অংশে নেই আলোকবাতি। অথচ ব্রিজের এপাশ-ওপাশ দুদিকেই রয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। খুঁটি থাকা সত্বেও বাতি না জ্বলার ফলে নানারকম অপকর্মের শিকার হন জনসাধারণ। সড়কটি অন্ধকারছন্ন হওয়ায় অনিরাপদে চলাফেরা করেন পথচারীরা।
দশ পাইপ সংলগ্নের ডাম্পিং ব্রিজের পরের অংশ অর্থাৎ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কমুখী থেকে সড়কবাতি থাকলেও ক্যানেলপাড়ের অংশে বাতির ছিটাফোঁটাও নেই। যা অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি এখানকার বসবাসরত মানুষের।
নারায়ণগঞ্জ সিটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণে এই সড়ক মানুষের কাছে অন্যরকম একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। দিবারাত্রি মানুষকে এখানে ছবি তোলা থেকে শুরু করে আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ আবার শর্ট ফিল্মও করেন সিদ্ধিরগঞ্জ -জালকুড়ি সড়কে।
এ সড়ক দিয়ে জনসমাগম তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট থাকলেও ব্যস্ত এ সড়কেটিতে সন্ধ্যা হলেই আতঙ্কে থাকতে হয় পথচারীদের। সড়কটি চালু হবার পর থেকে বিনোদনের জন্য দিবারাত্রি সড়কের উভয় পাশে আড্ডায় মেতে থাকে মানুষেরা। তবে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয় তাদের।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আনন্দে সময় কাটালেও সন্ধার পর অন্ধকার হওয়া বিভিন্ন সময় মানুষ সহসাই ছিনতাই, ডাকাতির শিকার হন। লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস, মাদকের মহড়ারর সড়ক এটি।
দেখা যায়, সন্ধ্যা হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মাদকসেবন থেকে শুরু করে মাদক বিক্রির কাজও হয় অন্ধকার এ সড়কটিতে।এতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এখানে হাটতে বা ঘুরতে আসা মানুষদের।
জীবিকার তাগিদে খেটে খাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে রিকশাচালকদের পড়তে হয় ছিনতাইকারীদের কবলে। প্রায় সময় অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে সড়কটিতে।
কথা হয় মদনপুর থেকে ভ্রমণে আসা ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন ভিডিও দেখে এখানে ঘুরতে আসলাম। রাস্তাঘাট ভালোই সুন্দর। আবার একটি পার্কের মতোও দেখলাম সেটাতে নাকি বিদুৎ উৎপাদন হবে। যার কারণে পার্কের ভেতরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। সারা বিকাল ভালোই কাটালাম। তবে সন্ধ্যার পর মনে হয় এলাকাটি বিপজ্জনক। যে পরিমাণ অন্ধকার এখানে মানুষকে মেরে ফেললেও টের পাবে না কেউ।
১০ পাইপ এলাকার এক ফুচকার দোকানি জানান, ঈদের দুদিন আগে রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ৪ জন ছিনতাইকারী একজন অটোরিকশা চালকের গাড়িটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে আটক করে। পরবর্তী উক্ত চাকলকের চিৎকারে আশপাশের মানুষজন চলে আসলে অটোরিকশাসহ চালকে ময়লা ডোবার ভেতর ফেলে স্থান ত্যাগ করে ছিনতাইকারীর দল।
মিজমিজি দক্ষিণ পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, একটা সময় আমাদের এখানকার মানুষজন ভয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতো না। তবে সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় একটি সুন্দর সড়ক করা হয়েছে। আমাদের সবার জন্য এটি উপকারী। এখন খুব সহজেই আমরা রিকশা নিয়েও এ সড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ যেতে পারি। তবে ডাম্পিং এর পর থেকে রাতের সড়কটা অসাধারণ লাগে। সিটি করপোরেশন যদি আমাদের এলাকার বাতিও জ্বালিয়ে দিতেন অন্তত ভয় থেকে রক্ষা পেতাম।
রিকশাচালক আলমাছ মিয়া বলেন, আমি এখান দিয়ে গাড়ি চালাই তবে দিনে খ্যাপ মারলেই গভীর রাতে এখানে খ্যাপ মারি না। কারণ এখানে অনেক আজেবাজে পোলাপানের বাজে আড্ডা। কোনো কোনো সময় ভাড়ায় আসলেও ভাড়া না দিয়ে আরও খারাপ ব্যবহার করে পোলাপান।
ছিনতাইকারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, এখন পর্যন্ত অনেক ছিনতাইকারীকে আমরা গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। আমরা সর্বক্ষণ চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন কোনো সাধারণ মানুষ ছিনতাইকারী দ্বারা ক্ষতির শিকার না হয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সড়কে বাতি কেনো লাগানো হচ্ছে না তা জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ-জালকুড়ি সড়কের বাতি জ্বলে না সেটা আমার জানা ছিলো না। যেহেতু সড়কে বাতি না থাকার কারণে পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, তার জন্য আমরা খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেব।
(ঢাকাটাইমস/৭জুলাই/এআর/এসএ)

মন্তব্য করুন