বিলাইছড়িতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে শিম-বাদাম

রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে করা হয়েছে শিম চাষ। এছাড়া বাদামসহ বিভিন্ন জাতের সবজিও চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার সদর ইউনিয়ন ও ৫০ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে ফারুয়া ইউনিয়নে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো এই বছরও বিলাইছড়িতে বিশেষ করে ফারুয়া ইউনিয়নে শিম-বাদামসহ বিভিন্ন সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় র্যাইখ্যাং নদীর দুই পাড়ে শিম চাষের ফলে গড়ে উঠেছে সবুজের সমারোহ। সারি সারি বাঁশের খুঁটি ‘গিল’ (যেখানে শিমের লতাটা বেয়ে উঠে শিম ধরে) হিসেবে দেয়া হয়। রাইংখ্যাং নদী যেভাবে এঁকে বেঁকে চলে গেছে, ঠিক সেভাবে দুই পাড়ে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ করা শিমের সবুজের সমারোহও বয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ফরাস শিম তোলা হচ্ছে এবং মণপ্রতি ৩ হাজার বা তারও অধিক বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া দেশীয় শিমের ফুলও আসা শুরু করেছে। মাসখানেকের পরে ফসল তোলা যাবে। শিমছাড়াও সমন্বিতভাবে চিনাবাদাম, ফরাস শিম, ভুট্টা ও নানা ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে।
এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগেও তামাকের চাষ করা হতো এই ফারুয়া ইউনিয়নে। তবে তামাক কোম্পানি থেকে অগ্রিম টাকা নেওয়ার কারণে উত্তোলনের পর সেই কোম্পানিকে দিতে হত। যার কারণে জমিতো ক্ষতি হতোই এবং কৃষকও আর্থিকভাবে কিছুটা কম লাভবান হতো। তাই প্রশাসনসহ বিভিন্ন সচেতন মহলের প্রচেষ্ঠায় তামাক চাষে যে ক্ষতি হয়, সেটা তারা বুঝতে পেরে আস্তে আস্তে অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করে এবং বর্তমানে তারা শিম, বাদামসহ বিভিন্ন জাতের সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে। তারা এখন আগের থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে এবং সেই টাকা দিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি কেউ কেউ ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছে।
বিলাইছড়ি কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই মৌসুমে বিলাইছড়িতে প্রায় ৭৫ হেক্টর শিম, ৬৫ হেক্টর চিনাবাদাম, ৩০ হেক্টর ফরাস শিম, ২৬ হেক্টর ভুট্টা ও অন্যান্য সবজি ২২৬ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গোয়াইনছড়ি পাড়ার শিমচাষি বিশ্বান্ত তঞ্চঙ্গ্যার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই বছর রাইংখ্যাং নদীর পাড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে শিম চাষ করেছেন। বর্ষার সিজনে জমিগুলোতে পলি জমার কারণে জমি অনেকটা উর্বর থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিনও রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তিনি ভালো ফলনের আশা করেছেন।
তক্তানালা গ্রামের রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, তিনি এই বছর প্রায় ৩ একরের বেশি জমিতে এই শিমের চাষ করেছেন। ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে এবং প্রয়োজন মত কীটনাশক দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এই বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গতবছরের চাইতে ভালো ফলন পাওয়ার আশা আছে।
তিনি আরও বলেন, তার দুই ছেলের মধ্যে একজন তার সাথে কাজ করে, এবং আরেকজন রাঙ্গামাটিতে পড়াশোনা করে। তার ছেলের পড়াশোনার খরচ তিনি এই শিম চাষ করে যোগান দেন।
গোয়াইনছড়ি পাড়ার হেডম্যান বিমল তঞ্চঙ্গ্যার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার এলাকায় প্রায় ১০০ পরিবারের মত এই শিম এবং বাদাম চাষ করছেন। তিনি নিজেও প্রায় ২ একরের মতো জায়গায় শিম চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, মণপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত শিম বিক্রয় করা হয়।
ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ফারুয়া এলাকা একটি কৃষি নির্ভর ইউনিয়ন। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এক সময় এখানে প্রচুর তামাক চাষ হতো। ২/১টি তামাক কোম্পানি কৃষকদেরকে বিনাসূদে ঋণ দিয়ে তামাক চাষ করাতো। প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে আর এখানে তামাক চাষ হচ্ছে না। বর্তমানে এখানে শিম এবং চিনাবাদাম প্রচুর চাষ হচ্ছে। এই ইউনিয়নে বিশেষ করে ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপকভাবে এই শিম ও বাদামের চাষ করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য সবজি ও চাষ করা হয়।
তিনি বলেন, এক-দেড় মাস পরেই শিমের ফলন আসা শুরু করবে, এখনো পর্যন্ত শিমের ফলন ভালো দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না আসে তাহলে শিমের ফলন ভালো হবে বলে আশা করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান খান জানান, উপজেলায় ১২ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও আছে ৬ জন। তার মধ্যে ফারুয়া ইউনিয়নে দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুর্গম এলাকা হিসেবে কম জনবল দিয়ে কাজ করা খুবই কঠিন। তারপরও সাধ্যমত মাঠে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সঠিকভাবে কাজ করতে হলে পর্যাপ্ত জনবল প্রয়োজন।
(ঢাকা টাইমস/০৭জানুয়ারি/এসএ)

মন্তব্য করুন