সামরিক শক্তিতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে কে এগিয়ে?

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য এক গভীর অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে, যেখানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা সামরিক সংঘর্ষের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এই দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে যে উত্তপ্ত সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে, তা এখন এক ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে উভয় দেশের সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা কাঠামো এবং কৌশলগত অবস্থান তুলনা করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক সামরিক শক্তি বিশ্লেষণকারী সংস্থা গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার (GFP)-এর ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সামরিক র্যাংকিংয়ে ইরান ১৪তম আর ইসরায়েল রয়েছে ১৭তম অবস্থানে। অর্থাৎ সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতায় ইরান কিছুটা এগিয়ে।
তবে সামরিক বাজেট ইস্যুতে ইসরায়েল অনেক বেশি শক্তিশালী।
- ইসরায়েলের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট: ২৪৪০ কোটি ডলার
- ইরানের প্রতিরক্ষা বাজেট: ৯৯৫ কোটি ডলার
সেনা সংখ্যা: জনশক্তিতে এগিয়ে ইরান
নিয়মিত ও রিজার্ভ সেনা সংখ্যা:
- ইরান: মোট ১১,৮০,০০০ (রিজার্ভ ৩,৫০,০০০)
- ইসরায়েল: মোট ৬,৭০,০০০ (রিজার্ভ ৪,৬৫,০০০)
আকাশ শক্তি: আধুনিকতায় আমেরিকার সহযোগিতায় এগিয়ে ইসরায়েল
- মোট বিমান সংখ্যা:
- ইরান: ৫৫১টি
- ইসরায়েল: ৬১২টি
- যুদ্ধবিমান:
- ইরান: ১৮৬টি
- ইসরায়েল: ২৪১টি
- অ্যাটাক হেলিকপ্টার:
- ইরান: ১৩টি
- ইসরায়েল: ৪৮টি
ইসরায়েলের বিমান প্রযুক্তি অত্যাধুনিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বহু F-35 এবং F-16 এর মতো জেনারেশন ৫ যুদ্ধবিমান পরিচালনায় সক্ষম।
স্থলশক্তি: সংখ্যায় ইরান, গুণমানে ইসরায়েল
- ট্যাংক:
- ইরান: ১৯৯৬টি
- ইসরায়েল: ১৩৭০টি
- সাঁজোয়া যান:
- ইরান: ৬৫,৭৬৫টি
- ইসরায়েল: ৪৩,৪০৩টি
- আর্টিলারি (Self-Propelled + MLRS):
- ইরান: ১,৩৫৫টি
- ইসরায়েল: ৮০০টি
ইরান যদিও সংখ্যায় এগিয়ে, তবে ইসরায়েলের ট্যাংকগুলো (বিশেষত Merkava সিরিজ) আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত।
নৌশক্তি: ইরান সংখ্যায় এবং বিস্তারে এগিয়ে
- মোট যুদ্ধজাহাজ:
- ইরান: ১০১টি
- ইসরায়েল: ৬৭টি
- সাবমেরিন:
- ইরান: ১৯টি
- ইসরায়েল: ৫টি
- ফ্রিগেট ও টহল জাহাজ:
- ইরান: ৭টি ফ্রিগেট, ২১টি টহল জাহাজ
- ইসরায়েল: ৪৫টি টহল জাহাজ, কোনো ফ্রিগেট নেই
ইরানের নৌবাহিনী পারস্য উপসাগরে কৌশলগত অবস্থানে থাকায় আঞ্চলিক প্রতিপত্তিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
পারমাণবিক শক্তি: ইসরায়েলের গোপন অস্ত্র
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) অনুযায়ী, বিশ্বের ৯টি দেশের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে ইসরায়েলের নাম রয়েছে। যদিও দেশটি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি।
অন্যদিকে, ইরানের কাছে কোনো স্বীকৃত পারমাণবিক অস্ত্র নেই, তবে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং সম্ভাব্য অস্ত্র উন্নয়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ রয়েছে।
কৌশলগত মূল্যায়ন
- ইসরায়েল আধুনিক প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট সাপোর্ট, সাইবার সক্ষমতা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তা পায়।
- ইরান উচ্চসংখ্যক সেনা, আঞ্চলিক মিত্র (যেমন হিজবুল্লাহ, হুথি) এবং আত্মনির্ভরশীল ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে অগ্রগতি অর্জন করেছে।
সংখ্যায় ইরান এগিয়ে থাকলেও, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির মান এবং কৌশলগত গভীরতায় ইসরায়েল আমেরিকার সহযোগিতায় অনেক বেশি আধুনিক ও কার্যকর। তবে আঞ্চলিক সংঘাতে ইরানের ভূখণ্ড বিস্তার ও মিত্রদের উপস্থিতি এক বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। এই দুই পরাশক্তির সংঘর্ষ শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/১৫ জুন/আরজেড)

মন্তব্য করুন