জামায়াতের দুর্গ সাতক্ষীরায় হানা দিতে কাদের নিয়ে লড়বে বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪২| আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২০
অ- অ+

দেশে বইছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর ক্ষমতার পালাবদলে বর্তমানে রাজনীতির মাঠে নেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। এতে আগাম নির্বাচনী মাঠে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। অন্যতম প্রধান দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সামনে আসছে জামায়াতে ইসলামী।

নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই দুটি দলের শক্ত অবস্থানের আসনগুলোর দিকে সবার চোখ। তার একটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা। ভোটের রাজনীতিতে এই একটি জেলাকে বলা হয় জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরার পাঁচটি আসনের ভোটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবারই জামায়াতে ইসলামী তিন-চারটি আসনে জয় পেয়েছে।

২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত নির্বাচনগুলোতে সাতক্ষীরা জেলায় ছিল পাঁচটি সংসদীয় আসন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পাঁচটির মধ্যে চারটিতেই জয় পান জামায়াতের প্রার্থীরা। ভোটপ্রাপ্তির দিক থেকেও ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির চেয়ে এগিয়ে ছিল জামায়াতে ইসলামী। ২০০১ সালে বিএনপির সাথে জোট গঠন হলে পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দেওয়া হয়। সেবার পাঁচটি আসনেই জয় পেয়েছিল বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে চারদলীয় জোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাসে সাতক্ষীরা জেলায় একটি আসন কমে যায়। সেই নির্বাচনেও চারদলীয় জোট থেকে চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া হয়।

একসময়কার সেই জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী এখন বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক বেশি জোরদার করেছে ধর্মভিত্তিক দলটি। এরই মধ্যে সাতক্ষীরার চারটি আসনে তারা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এই দুর্গ রক্ষা করতে জামায়াতে ইসলামী যে মরিয়া, তা তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতিতেই স্পষ্ট।

অন্যদিকে সাতক্ষীরার প্রতিটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন একাধিক নেতা। জামায়াতের ঘাঁটি বলে পরিচিত এই উপকূলীয় ও ভারত সীমান্তবর্তী জেলায় আগের নির্বাচনগুলোতে ভালো না করলেও এবার সেখানে হানা দিতে চায় বিএনপি। নিজেদের পুরনো ভোটব্যাংকের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভোটারদের দিকে নজর তাদের।

এখানে আসনভিত্তিক কেমন হতে পারে বিএনপি-জামায়াতের লড়াই, সেটা দেখে নেওয়া যাক।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ। এই আসনে বিএনপির শক্তিশালী মনোনয়নপ্রার্থী ২০০১ সালের সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব। আরও আছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতারুল ইসলাম ও সাংবাদিক সাইদুর রহমান।

এই আসনে ১৯৯১ সালে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন জামায়াতের আনসার আলী। ১৯ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেয়ে বিএনপির অবস্থান ছিল তৃতীয়।

১৯৯৬ সালে এখানে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। ২৩ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয় জামায়াতে ইসলামী। প্রায় সমান ভোট পেয়ে জাতীয় পার্টি ছিল তৃতীয় স্থানে। আর ১৮ শতাংশ ভোট নিয়ে বিএনপির অবস্থান চতুর্থ।

সদর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। তার বিরুদ্ধে লড়তে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমত উল্লাহ পলাশ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম চেয়ারম্যান, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাসকিন আহমেদ ও আব্দুর রউফ চেয়ারম্যান। এই আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর কাজী শামসুর রহমান সংসদ সদস্য হন। দুবারই বিএনপির অবস্থান ছিল চতুর্থ। ২০০১ সালেও চারদলীয় জোট থেকে নির্বাচিত হয় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী।

আশাশুনি-দেবহাটা ও কালীগঞ্জের আংশিক এলাকা নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মুহাদ্দিস রবিউল বাশার। বিএনপির মনোনয়ন লড়াইয়ে আছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ডাক্তার শহিদুল আলম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরিকুল হাসান ও ইঞ্জিনিয়ার আইয়ুব আলী। ১৯৯১ সালে এই আসনে জামায়াত প্রার্থী জয়ী হন, সেবার বিএনপির অবস্থান ছিল পঞ্চম। অবশ্য ১৯৯৬ সালে বিএনপি এক ধাপ এগিয়ে চতুর্থ হয়, প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

শ্যামনগর ও কালীগঞ্জের বাকি অংশ নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ইফতেখার আলী ও যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির।

১৯৯১ সালে এই আসনে প্রায় ৩২ শতাংশ ভোট নিয়ে জামায়াত ছিল দ্বিতীয়। আর ২০ দশমিক ছয় শতাংশ ভোট নিয়ে বিএনপির অবস্থান ছিল তৃতীয়। তবে ১৯৯৬ সালে এগিয়ে যায় বিএনপি, ২১ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃতীয় হয়। আর ১৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোট নিয়ে জামায়াতের অবস্থান ছিল চতুর্থ। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ছিল জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাতক্ষীরায় জামায়াতের শক্তির জায়গা হলো তাদের গোছানো সংগঠন ও নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক। অন্যদিকে বিএনপির শক্তি তাদের জাতীয় পর্যায়ের জনপ্রিয়তা এবং সাধারণ ভোটারদের সমর্থন। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে তাদের ভোটও নিজেদের বাক্সে টানার সুযোগ রয়েছে। কট্টর জামায়তবিরোধী ভোটাররাও বিএনপিকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে পারেন।

(ঢাকাটািইমস/২০আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রবি এলিট গ্রাহকদের জন্য স্যাভয় আইসক্রিমে সর্বোচ্চ ১৫% ছাড়
৭৮ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ
ঢাকা কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চোরাচালান ও দুর্নীতির অভিযোগ
শকুনিরা দেশের মানচিত্র খুবলে খাওয়ার চেষ্টা করেছে: রিজভী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা