বংশগত ক্যানসারের ঝুঁকি কাদের বেশি, যেভাবে সতর্ক থাকবেন

সারা বিশ্বে ক্যানসারের প্রকোপ দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ক্যানসার হলো এমন একদল রোগের সমষ্টি, যার বৈশিষ্ট্য অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি। এ ধরনের অস্বাভাবিক কোষ পরবর্তীতে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জেনেটিক মিউটেশনের কারণে স্বাভাবিক কোষের আচরণ ব্যাহত হলে টিউমার তৈরি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও এটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয় এবং পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকিও থেকে যায়।
পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে অনেকেই আতঙ্কে থাকেন—পরবর্তী প্রজন্মও কি আক্রান্ত হবে? বাস্তবেই মা-বাবা বা ঘনিষ্ঠ রক্তসম্পর্কীয় কারও ক্যানসার থাকলে সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ, অস্কারজয়ী অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি পরিবারের তিনজনকে ক্যানসারে হারানোর পর জিন পরীক্ষা করিয়েই জেনেছিলেন, তাঁরও স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। পরে তিনি প্রতিরোধমূলক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।
গবেষণায় যা বলছে
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্যানসার রোগীদের প্রায় ৯ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি বংশগত। এই বংশগত ক্যানসারে জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। যাঁদের জিনে ‘পজ়িটিভ ফ্যাক্টর’ থাকে, তাঁদের ঝুঁকি আরও বেশি। তবে সব ক্যানসার বংশগত নয়।
কোন কোন ক্যানসার বংশগত হতে পারে
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কয়েক ধরনের ক্যানসার জেনেটিক মিউটেশনের কারণে ছড়াতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে—
স্তন ক্যানসার
জরায়ুর ক্যানসার
কোলন ও রেক্টাম ক্যানসার
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার
রেটিনোব্লাসটোমা
মেলানোমা (ত্বকের এক ধরনের ক্যানসার)
পাকস্থলীর ক্যানসার
‘ক্যানসার রিসার্চ ইউকে’-এর তথ্যমতে, শরীরে BRCA1 ও BRCA2 জিন সক্রিয় থাকলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আবার CDH1 জিন সক্রিয় হলে পাকস্থলীর ক্যানসারের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
যেসব পরীক্ষা করা জরুরি
পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলেই অন্য সদস্য আক্রান্ত হবেন, এমন নয়। আবার একেবারেই ঝুঁকি নেই, তাও বলা যায় না। এজন্য বিশেষ কিছু পরীক্ষা করানো যেতে পারে—
জেনেটিক টেস্ট: পরিবারের একাধিক সদস্য আক্রান্ত হলে করানো শ্রেয়।
সার্কুলেটিং টিউমার সেল টেস্ট (CTC): কোষ বিভাজন শুরু হয়েছে কি না তা জানা যায়।
ব্লাড কেমিস্ট্রি টেস্ট: লিভার, কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গে অস্বাভাবিকতা শনাক্ত হয়।
ইমিউনোফেনোটাইপিং টেস্ট: ক্যানসার প্রোটিন শনাক্তে কার্যকর।
লিক্যুইড বায়োপসি: রক্তের নমুনায় ক্যানসার কোষ চিহ্নিত করা যায়।
টিউমার মার্কার ব্লাড টেস্ট: শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি নির্দেশ করে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এসব পরীক্ষা না করানোই ভালো।
সতর্কতার উপায়
বংশগত ঝুঁকি থাকলেও জীবনধারার পরিবর্তনে ক্যানসারের আশঙ্কা কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমান
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন
প্রদাহ-বিরোধী খাবার (ফল, শাকসবজি, মাছ) খান
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন
ক্যানসার একটি জটিল ও ভীতিকর রোগ হলেও সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে এর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। বিশেষ করে পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে সতর্কতা ও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণই বাঁচার সম্ভাবনা বাড়ায়।
(ঢাকাটাইমস/২০ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন