চট্টগ্রাম-৫: বিএনপির মনোনয়ন লড়াইয়ে দুই পরিবারের ব্যারিস্টার সন্তান হেলাল-ফারজানা

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাজনীতি। এই উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম-৫, অর্থাৎ হাটহাজারী আসন। একসময়ের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসনে এবার ধানের শীষের কাণ্ডারি হতে চান অনেকেই, কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে দুই রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরাধিকার ব্যারিস্টার তরুণ-তরুণী।
একদিকে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
অন্যদিকে এই আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, যিনি শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে কারাবন্দি হয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন।
ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। বাবা মীর নাসির শারীরিকভাবে অসুস্থ। তারুণ্য, পারিবারিক ঐতিহ্য আর কেন্দ্রের সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ- এই তিনে মিলে মীর হেলাল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে।
সাম্প্রতিক সময়ে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সক্রিয় হেলাল। হাটহাজারীর বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন, নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছেন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াচ্ছেন। তার সমর্থকদের মতে, মীর হেলালই হতে পারেন বিএনপির আগামীর কাণ্ডারি, যিনি পারবেন এই গুরুত্বপূর্ণ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।
ছাত্রদল ও যুবদলকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে মীর হেলালের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রভাব এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তিনি মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তার বাবা মীর নাসিরউদ্দিনের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও প্রভাবও তার জন্য একটি বড় প্লাস পয়েন্ট।
কিন্তু লড়াইটা একপেশে নয়। এই আসনের রাজনীতির মাঠে আরেক হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। তিনি এই আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে।
বাবার মৃত্যুর পর হাটহাজারীর মানুষের কাছে বিএনপি ও তার পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছেন। শাকিলা ফারজানা কেবল রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানই নন, তিনি একজন সক্রিয় আইনজীবী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক।
বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দিয়ে ইতিমধ্যে তাদের কাছাকাছি পৌঁছেছেন শাকিলা ফারজানা। সরকারের রোষানলে পড়ে তাকে দশ মাস কারাগারেও থাকতে হয়েছে, যা তার রাজনৈতিক জীবনে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
শাকিলা ফারজানার সমর্থকরা বলছেন, তার বাবা ছিলেন হাটহাজারীর মাটি ও মানুষের নেতা। সেই উত্তরাধিকার এবং নারী নেতৃত্ব, এই দুইয়ের মেলবন্ধনে তিনি হতে পারেন বিএনপির তুরুপের তাস। হাটহাজারীর মতো আসনে তিনিই হতে পারেন বিএনপির প্রথম নারী প্রার্থী, যা একটি নতুন ইতিহাস গড়তে পারে।
হেলাল ও শাকিলা দ্বৈরথের বাইরে কি মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে পারেন অন্য কেউ? আলোচনায় আছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হকের নামও। তিনিও এলাকায় গণসংযোগ করছেন এবং তারও রয়েছে শক্ত বলয়। ফলে লড়াইটা মূলত ত্রিমুখী হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
চট্টগ্রাম-৫ আসনের রাজনীতিতে একটি বড় ফ্যাক্টর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। কওমি মাদ্রাসা অধ্যুষিত এই এলাকায় হেফাজতের নীরব সমর্থন যেকোনো প্রার্থীর জন্যই জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। কাকে সমর্থন দেবে হেফাজত? নাকি তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে? এসব হিসাব-নিকাশও সামনে আসবে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নের বেলায়।
বিএনপির হাইকমান্ড কি তারুণ্য ও মাঠের সক্রিয়তাকে পুরস্কৃত করে মীর হেলালের হাতে তুলে দেবে ধানের শীষ? নাকি বাবার জনপ্রিয়তা ও ত্যাগের রাজনীতিকে সম্মান জানিয়ে বেছে নেবে শাকিলা ফারজানাকে? উত্তরাধিকারের এই লড়াইয়ে কার হবে জয়? অথবা এই দুই তরুণের লড়াইয়ের মাঝে অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে বাজিমাত করবেন এস এম ফজলুল হক?
চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির ধানের শীষের কাণ্ডারী কে হচ্ছেন- হাটহাজারীর রাজনৈতিক আকাশ যে এক নাটকীয় লড়াইয়ের অপেক্ষায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন