মালয়েশিয়ায়
জনশক্তি রপ্তানী সিন্ডিকেটের প্রধান রুহুল আমিন স্বপনের ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে সিআইডি

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানীর নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রুহুল আমিন স্বপন ও তার স্বার্থ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বুধবার বিকালে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রুহুল আমিন স্বপন মালয়েশিয়ায় জনশক্তি প্রেরণের সিন্ডিকেট পরিচালনা করে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। অবৈধ অর্থের মাধ্যমে ঢাকার উত্তরা, বনানী ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একাধিক বাড়ি ও জমি ক্রয় করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। এই সম্পদের মধ্যে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ৭টি দলিলভুক্ত জমির মোট পরিমাণ ২৩১ কাঠা, যার দলিল মূল্য ১৫ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। উক্ত জমিসহ অন্যান্য অবকাঠামোর মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
সিআইডি জানায়, রুহুল আমিন (স্বপন) এই সম্পত্তির মাধ্যমে জঘন্য মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছে এবং দেশে-বিদেশে এই অবৈধ অর্থ পরিচালনা করে সাধারণ মানুষকে ফাঁকি দিয়েছে।
সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ঢাকার ঢাকার অনুসন্ধানী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ উক্ত সম্পত্তির উপর ক্রোকাদেশ জারি করেছেন।
সিআইডি আরও জানিয়েছে, রুহুল আমিনের সিন্ডিকেটের অপর সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলমান। মানিলন্ডারিং আইন ও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী সকলকে দৃষ্টান্তমূলকভাবে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কে এই রুহুল আমিন স্বপন?
বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নামে বিপুল টাকা পাচারের অভিযোগ আছে ক্যাথারসিজ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের বিরুদ্ধে।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকার জায়গায় গড়ে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা নেয় মেসার্স ক্যাথারসিজ ইন্টারন্যাশনাল। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে চক্র গড়ে অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে তিনি বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন- এমন কথা প্রচলিত আছে এই সেক্টরে।
অভিযোগ উঠেছে, ‘চক্র ফি’ হিসেবে কর্মীপ্রতি এক লাখ টাকা নেয় ক্যাথারসিজ ও তাদের চক্র। এর মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। ভিসা ‘বাণিজ্যের’নামে পাচার হয়েছে আরও ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পাচারের পরিমাণ অন্তত ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
চক্রটির হোতা আমিনুল ইসলাম বিন আমিন নূর, যিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক। বাংলাদেশে তার প্রতিনিধি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ওরফে স্বপন।
চক্র গড়ে শ্রমিক পাঠানো, ঘুষ লেনদেন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দেশের বড় শ্রমবাজারগুলোর একটি মালয়েশিয়ার দরজা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বারবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগ সরকার মালয়েশিয়া চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত ৫ আগস্ট তাদের পতনের পর অন্তর্বতী সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বায়রার একাধিক সদস্য।
২২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো বায়রার সদস্য মোস্তফা মাহমুদের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ২০১৭ সালেও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর চক্র গড়ে তুলেছিলেন আমিনুল ইসলাম বিন আমিন নূর ও রুহুল আমিন স্বপন। তখন ও এবার দুই দফায় ১৭ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা লুট করেছে চক্রটি।
সংবাদ সম্মেলনে হামলা
গত ১৯ মে বায়রার সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রিয়াজ উল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব-১ মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, প্রবীণ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোস্তফা মাহমুদের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটমুক্ত সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়া শ্রমবাজার উন্মুক্তের দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে ক্যাথারসিজ ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার পলাতক রুহুল আমিন স্বপনের সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলা চালায়। এতে মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, নজরুল মনির, জহিরুল ইসলামসহ ১০-১২ জন বায়রার সদস্য আহত হন।
রুহুল আমিন স্বপনের সন্ত্রাসীদের হামলায় রিপোর্টার্স ইউনিটির গুরুত্বপূর্ণ কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা দেয় ক্যাথারসিজ।
এদিকে সিআইসি অনুসন্ধানে নেমে দেশের ভেতরে স্বপনের সাকুল্যে ৯০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পায়। এর মধ্যে সবশেষ ২০২২-২৩ করবর্ষে ৬২ কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ১৯৩ টাকার সম্পদ আয়কর বিবরণীতে দেখান স্বপন; বিপরীতে কর দেন ৫৩ লাখ টাকা।
অথচ আয় ও সম্পদের তথ্য গোপন করে তিনি ফাঁকি দিয়েছেন সরকারের প্রায় ৯ কোটি ২২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৭ টাকা। ফাঁকি দেওয়ায় জরিমানা হওয়ার কথা আরও ৪ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ৬১ কোটি টাকা।
(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/এলএম)

মন্তব্য করুন