প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক বছরের অগ্রগতি কী? জানালেন আসিফ নজরুল

সরকার বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বুধবার সচিবালয়ে এক বছরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, এক বছরের মধ্যে প্রবাসী কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স সংগ্রহে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। যা ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে দৃশ্যমান প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে মাল্টিপল ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি করবে। সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপদ ও কম খরচে শ্রমিক প্রেরণের বিষয়ে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়ায় যেসব প্রবাসীকে বিভিন্ন দেশে আটক করা হয়েছিল, তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং যারা দেশে ফেরত এসেছিলেন, তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে পুনরায় পাঠানো হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, আগামী পাঁচ বছরে জাপানে এক লাখ শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে এবং জাইকার সহযোগিতায় জাপানি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত এক বছরে দেশের বাইরে মোট ১০ লাখ ১৫ হাজার কর্মী প্রেরণ করা হয়েছে এবং এ সময়ের মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মালয়েশিয়ায় যারা আগের চুক্তির আওতায় যেতে পারেননি, তাদের মধ্য থেকে প্রথম ধাপে ৮ হাজার শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। আগের সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়া নিজস্বভাবে তালিকা থেকে শ্রমিক নির্বাচন করছে, এবং এই চুক্তি এখনো বলবৎ রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসীদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে আইন সহায়তা নিশ্চিত করতে ল ফার্ম স্থাপন করা হয়েছে। নারী শ্রমিকদের নিয়মনীতির আওতায় আনার কাজও চলমান রয়েছে। সৌদি আরবে জুলাই অভ্যুত্থানকে সমর্থনের অভিযোগে আটক ১,৮৭৬ জন বাংলাদেশিকে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন প্রবাসীরা এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে সুদের হার ১ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেয়ার গিভারদের জন্য ৬ মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব আমিরাত নির্ভরশীলতা কমিয়ে নতুন শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্যও কাজ করছে সরকার।
আইনগত সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে পুরো সংস্কার সম্ভব না হলেও ভিত্তি তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব হবে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে স্বচ্ছতার আওতায় আনতে কাজ করা হচ্ছে, তবে ফেইক ডকুমেন্টেশন বন্ধের প্রক্রিয়া একদিনে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপদেষ্টা জানান, মধ্যপ্রাচ্য আর আরব আমিরাতে আমরা আটকে থাকবো না, বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে। নারী শ্রমিকদের নিয়মিত করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। সৌদি আরবের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সেপ্টেম্বরে হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/এলএম)

মন্তব্য করুন