লংগদুতে পাহাড়ের সৌন্দর্য ও কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ঝাড়ুফুল

দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ফোটে উলুফুল। ভিন্নধর্মী এ ফুল ঘরে সাজিয়ে রাখা হয় না, খোঁপাতেও এর হয় না ঠাঁই। সাধারণত এই উলু ফুল দিয়ে বানানো হয় ঝাড়ু। সেই ঝাড়ু বাজারে বিক্রি করেন স্থানীয়রা।
মাঘ মাসের শুরু থেকে রাংগামাটির লংগদু উপজেলার উত্তর ইয়ারিংছড়িসহ বেশ কিছু এলাকার সড়কের যেদিকে চোখ যায়, শুধু ঝাড়ুফুলের সমারোহ। ফুল থাকবে চৈত্র পর্যন্ত।
গুলশাখালী ইউনিয়নের তেমাথা এলাকায় ও পাহাড়ের পরতে পরতে রয়েছে উলু ফুলের সমারোহ, উঁচু উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় দেখা যায় মনোমুগ্ধকর উলু ফুলের বিশাল বাগান।
পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে ফোটা এ ফুলের ১০ থেকে ১৫টি দিয়ে আঁটি বেঁধে ঝাড়ু বানানো হয়। সেই ঝাড়ু স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
শুধু স্থানীয় বাজারে নয়, সারা দেশে রয়েছে এ ঝাড়ুর চাহিদা। তাই অনেকে বাড়তি আয়ের উপায় হিসেবে নেন ঝাড়ু বানানোর কাজ।
ঝাড়ুফুল বাগিচার মালিক গুলশাখালী এলাকার হারাধন চাকমা জানান, গত বছর ঝাড়ু বিক্রি করে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। তার আশা, এ বছর ঝাড়ু থেকে আয় হবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। হারাধন চাকমার ইচ্ছা বাণিজ্যিকভাবে ঝাড়ফুলের বাগান করবেন।
ঝাড়ুফুলের চাষি নিপন চাকমা বলেন, এটা পাহাড়ের প্রাকৃতিক নিয়মে বেড়ে ওঠে, ফলে এর জন্য অন্যান্য চাষাবাদের মতো ঝামেলা পোহাতে হয় না এবং মুনাফাও ভালো পাওয়া যায়।
ঝাড়ুফুলের বাগানি অতুল চাকমা বলেন, এই ঝাড়ুফুলের বাগান দেখতে বেশ সুন্দর হয়। শুধু গরু আর আগুন এই বাগানের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া আর কোনো পোকামাকড়ের বালাই নেই। তাই বিষ কিংবা সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য ফসল ফলানোর মতো যত্ন-আত্তি কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলা নেই।
অন্য এক ঝাড়ুফুলের বাগান মালিক জুনায়েদ বলেন, ঝাড়ুফুল উঁচু টিলায় হয়, সাধারণত যেসব পাহাড়ে অন্যান্য পাহাড়ি গাছ ছাড়া চাষাবাদ করা মুশকিল, ফলে এটি মাটি পাহাড় কোনোটিই নষ্ট করতে পারে না। অতি দ্রুত সময়ে ভালো একটি মুনাফা দেয়।
ঝাড়ুফুল প্রতি বছর রোপণ করার ঝামেলা নেই। কেটে নেওয়া গোড়া থেকে সে নিজেই প্রতি বছর বেড়ে ওঠে। এ বছর ভালো মুনাফা পেলে আগামী বছর ব্যাপকভাবে সম্পূর্ণ টিলায় এর গোড়া ছড়িয়ে দিবেন বলে জানান জুনায়েদ।
এ বিষয়ে উল্টাছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বলেন, উলু ফুল বেশ লাভজনক। এই ফুলের চাষাবাদের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা রক্ষা করে ও মাটি ধসের হাত থেকে পাহাড় রক্ষা করে। এসব অঞ্চলে উলু ফুলের চেয়ে তামাক চাষ বেশি হয়। সবার উচিত তামাক চাষ থেকে বের হয়ে উলু ফুলসহ অন্যান্য লাভজনক চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হওয়া।
(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/মোআ)

মন্তব্য করুন