ও তুই উল্টা বুঝলি রাম...

বিশেষ প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৮
অ- অ+

‘ও তুই উল্টা বুঝলি রাম

আমি আম চাহিতে জাম দিলে, আর জাম চাহিতে কি-না আম।।

আমি চড়বার ঘোড়া চাইতে শেষে, ওগো ঘোড়া-ই ঘাড়ে চড়লো এসে,

ও বাব্বা-

আমি প্রিয়ার চিঠি চাইতে এলো কিনা ইনকাম ট্যাক্সের খাম।।’

এটি একটি জনপ্রিয় নজরুল সঙ্গীতের কয়েক লাইন। দৈনন্দিন জীবনে এখনো এই গানের কথা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে, যখন কেউ বলে একটা, আর অন্যজন করে আরেকটা। ঠিক সে ঘটনা-ই যেন ঘটলো আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বেলায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন এক রকম। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন বুঝেছেন অন্যরকম। হয়তো একারণেই প্রতিবেশিদের চাইতেও বেশি রপ্তানি শুল্কের বোঝা চেপে বসেছে বাংলাদেশের ঘাড়ে।

ব্যাপারটা তাহলে খোলাসা করেই বলা যাক। গেলো জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছিলেন কিভাবে বাংলাদেশের মাত্র দুজনের একটি এনজিওকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান ইউএসএআইডি। তাঁর একথায় বড়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। কারণ বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন করার কলকাঠি নাড়তেই নাকি দেওয়া হয়েছিলো সেই টাকা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই মন্তব্যকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের নেতিবাচক মনোভাব হিসাবেই দেখেছেন সবাই।

সেই ঘটনার পরপরই ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের মনোভাব নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রশ্ন করেছিলো দ্য গার্ডিয়ান। এর জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশের সাথে ব্যবসার ডিল বা চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি শুধু ট্রাম্পকে সেই আমন্ত্রণ জানিয়েই বসে থাকেননি। ট্রাম্পের অতিঘনিষ্ঠ আরেক বড় ব্যবসায়ী ইলন মাস্ককে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবসা করার সুযোগও করে দেন। হয়তো আশা ছিলো ব্যবসা পেলে বাংলাদেশের প্রতি সদয় থাকবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানকে সেই নজরুল সঙ্গীতের মতই উল্টা বুঝেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশি পণ্য আমদানির উপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। অথচ আগে এই শুল্ক ছিলো মাত্র ১৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। শুধু এই দেশটিতে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত। চীনের উপর শুল্ক আরোপ হয়েছে ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে ভিয়েতনামের উপর আরোপ করা শুল্কের হার ৪৪ শতাংশ আর ভারতের উপর ২৬ শতাংশ। তবে এসব দেশের মধ্যে চীন মূলত বেশি দামের পোশাক রপ্তানি করে। তাই চীনের পণ্যের সাথে বাংলাদেশি পণ্যের খুব একটা প্রতিযোগিতা হয়না। ভিয়েতনামি পণ্যের উপর বাংলাদেশের চেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ হয়েছে, তাই ভিয়েতনাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ার বদলে স্বস্তি পেতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু ভয় ভারতকে নিয়ে। কারণ এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের ঠিক পরেই ভারতের অবস্থান। ফলে ভারত বাড়তি শুল্ক সুবিধা পেয়ে গেলে তাদের কাছে বাজার হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এমনিতেও বাংলাদেশের এই বাজার নষ্ট করার ষড়যন্ত্র হিসাবে প্রায়ই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে পরোক্ষভাবে ভারতকে দায়ী করেন অনেক ব্যবসায়ী।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই পণ্য আমদানির উপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই বাড়তি শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে এনিয়ে সতর্ক মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাদের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর শুল্ক বেড়ে যাওয়াতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর খুব একটা প্রভাব না-ও পড়তে পারে।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঈদের আগেই আসছে নতুন নোট, নকশায় থাকছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি
টাঙ্গাইলে ৫ বছরেও অসমাপ্ত ব্রিজের নির্মাণকাজ! ঠিকাদার লাপাত্তা ৬ মাস 
সাবেক এনআইডি ডিজি সালেহ উদ্দিনের এনআইডি ‘ব্লকড’
যে কারণে স্থগিত হয়ে গেল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা