লিবিয়ায় ২৭ বাংলাদেশিকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, মূলহোতা গ্রেপ্তার

লিবিয়ায় ২৭ বাংলাদেশিকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনার মূলহোতা জাহিদ হোসেনকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
শুক্রবার র্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর র্যাব-৫ এর একটি দল নওগাঁর রানীনগর উপজেলার সিংগারাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে জাহিদকে গ্রেপ্তার করে।
জাহিদের বাবার নাম এহরাম সরদার। এই ঘটনার অন্যতম ভুক্তভোগী ইয়াকুব আলী (৩৮) দেশে ফিরে মামলা দায়ের করলে তার অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব অভিযানে নামে। ইয়াকুব কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগরা গ্রামের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক জানান, প্রায় দু বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ইয়াকুব আলীর সঙ্গে পরিচিত হন জাহিদ। তখন তিনি ইয়াকুবকে ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বলেছিলেন, ইতালিতে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং সেখানে চাকরির জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে।
ইয়াকুবের আগ্রহের পর জাহিদ তাকে তার বাবা এহরাম সরদার ও চাচা বাবু মোল্লার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট তারা দেখা করার পর ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যাওয়ার বিষয়ে চুক্তি করেন। পাঁচ লাখ টাকা আগাম পরিশোধ করার পর ইয়াকুবকে ফ্লাইটের সময় জানানো হয়।
এরপর ইয়াকুবের পাসপোর্ট নিয়ে জাহিদ তাকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটে করে আরও ২৬ জনের সাথে দুবাই পাঠান। ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা দুবাই পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে নাইজার এবং আলজেরিয়া নেওয়া হয়। সেখানে ২৭ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তারা কিছুদিন জেলও খাটেন। পরে তাদেরকে তিউনিশিয়া এবং লিবিয়ায় নিয়ে যায় চক্রটি।লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাদেরকে একটি বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয় এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠানো হয় এবং মুক্তিপণ আদায় করা হয়। ইয়াকুবের পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। ইয়াকুবের পরিবার ৩৫ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠায়। এ ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রচারের পর লিবিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাসের মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মো. খাইরুল বাশারের উদ্যোগে তাদের উদ্ধার করা হয়। ৯ জানুয়ারি ইয়াকুব দেশে ফিরে আসেন এবং ২৫ মার্চ কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা করেন।
র্যাব অধিনায়ক জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া জাহিদ নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন, বিদেশগামীদের সঙ্গে চুক্তি করে তাদেরকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করতেন। র্যাব বর্তমানে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
(ঢাকা টাইমস/২৬এপ্রিল/এসএ)

মন্তব্য করুন