রায় ঘোষণার পরও মিলছে না কপি, পাবনায় ভোগান্তিতে শতাধিক বিচারপ্রার্থী

পাবনা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের শতাধিক নিষ্পত্তিকৃত মামলার রায় ঘোষিত হলেও এখনো পর্যন্ত রায়ের নকল কপি হাতে পাননি বিচারপ্রার্থীরা। এতে করে উচ্চ আদালতে আপিল বা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিতে না পারায় ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
স্থানীয় আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আদালতের সাবেক বিচারক একরামুল কবির রায় ঘোষণা করলেও অনেক মামলার রায় এখনো লিখিত আকারে দেননি। উপরন্তু, বদলির সময় তিনি সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর মূল নথি নিজ হেফাজতে রেখে আইন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে যোগদান করেন। ফলে বিচারপ্রার্থীরা আইনি প্রক্রিয়ায় এগোতে পারছেন না।
ভুক্তভোগী হোসেন আলী বলেন, ‘আমার বাবা তজিম উদ্দিন বাদী হয়ে দেওয়ানি মামলা নম্বর ২৪৬/১৫ দায়ের করেন। মামলাটি চলাকালে তার মৃত্যু হলে আমি দেখাশোনা করি। রায় হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কপি হাতে পাইনি।’
আরেক বিচারপ্রার্থী গোলাপজান নেছা বলেন, ‘রায় হয়ে গেছে বহুদিন, কিন্তু কপি পাওয়ার জন্য বারবার আদালতের চক্কর কাটলেও কিছুই মেলে না।’
আদালতের পেশকার বলেন, ‘মামলাগুলোর মূল ফাইল এখনো সাবেক বিচারকের কাছেই রয়েছে। স্যার রায় লিখলে তখনই কপি সরবরাহ সম্ভব হবে। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮১/১৫, ৯৬/১৭ সহ অর্ধশতাধিক মামলা।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিচারক একরামুল কবির পাবনা আদালতে প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় কিছু মামলার রায় লিখিত আকারে সরবরাহ করলেও শতাধিক মামলার রায় এখনো অনুলিপি আকারে পাওয়া যায়নি। বারবার অনুসন্ধান চালানো হলেও নথিগুলোর হদিস মেলেনি।
এই অবস্থায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন পাবনা জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)। তিনি বলেন, ‘রায় ঘোষণা করলেই চলবে না, লিখিত রায় আবশ্যক। কারণ, সেটা না পেলে উচ্চ আদালতে আপিল করা যায় না। এটি বিচারপ্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি। আমরা জেলা জজ এবং উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলা জজ আদালতে বর্তমানে লোকবল সংকট আছে। রায় লিখতে দেরি হওয়ার এটিও একটি বড় কারণ। তবে সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
বিচারপ্রার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রায়ের নকল না পাওয়ায় তারা কার্যত ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন আইনি প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আদালতের ওপর আস্থা কমছে বলেও মন্তব্য করেন আইন সংশ্লিষ্টরা।
(ঢাকা টাইমস/২৯মে/এসএ)

মন্তব্য করুন