আমরা এবং ওরা
বর্তমান সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর সঙ্গে নয়াদিল্লি গিয়েছিলাম। গত বছরের প্রথম দিকের ঘটনা। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে চমৎকার বক্তব্য রাখলেন বাংলাদেশের মন্ত্রী। দারুণ প্রশংসা পেলেন উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের। পরের দিন তন্ন তন্ন করে ভারতের জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে চোখ বোলালাম। না, কোথাও কোনো খবর ছাপা হয়নি। সকালে প্রাতরাশে এসে বাংলাদেশের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। যিনি এক সময় ঢাকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। এই কূটনীতিকের কথায়ও বাংলাদেশের মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রশংসা। শুধু প্রশংসা নেই সেখানকার মিডিয়ার। এটাই ভারতীয় মিডিয়া!
ভারতের লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার বাংলাদেশে এলে ফলাও করে খবর হয়। আমাদের গণমাধ্যম সাক্ষাৎকার নেয়, বিস্তার প্রচার করে। ছাপায়। আর বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ভারত সফরে গেলে সেখানকার গণমাধ্যম কার্যত না দেখার ভান করে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদে কমপক্ষে চারজন করে নেতা পদে আছেন। সর্বশেষ বিজেপির একজন সাধারণ সম্পাদক রামমাধব কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। আমাদের গণমাধ্যমে প্রচার পেয়েছেন তার ছিটেফোঁটাও ভারত সফরে আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক, বিএনপির মহাসচিব গেলে পান না। আমরা এমন। ওরা অমন কেন!
কিসের কমতি আমাদের?
আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। ছিলেন পদস্থ কর্পোরেট চাকুরে। পরে রাজনীতিক হয়েছেন। পার্থ চ্যাটার্জির বিরাট সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকে। শিরোনাম : বাংলাদেশের পাশে আছি- পার্থ চ্যাটার্জি। আমার প্রশ্ন, তাই যদি হয় তাহলে মনমোহন সিংহ যখন প্রধানমন্ত্রী তখন তো তিস্তা চুক্তি হয়েই গিয়েছিল। বাধা দিলেন এই পার্থ চ্যাটার্জিরাই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বললেন, তিনি থাকতে তিস্তা চুক্তি হতে দেবেন না। ব্যস! তিস্তা চুক্তি আটকে গেল। উত্তরবঙ্গের কৃষক এর ফল পাচ্ছে! পার্থ চ্যাটার্জি যদি বলতেন, তিস্তা চুক্তি আটকে দিয়ে ভুল করেছেন তারা, তাহলে এটা বিরাট শিরোনাম হতে পারত। আমরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতাম। কই সে পথে তো হাঁটলেন না। আমরাও সেই প্রশ্ন জোরেশোরে করলাম না। একটি রাজ্যের মন্ত্রীর যেনতেন সাক্ষাৎকার প্রচার, প্রকাশ করা কি খুবই জরুরি? সেই বাস্তবতা কি আর আছে? আমাদের গুরুত্ব কি আমরা তুলে ধরতে পারছি? নাকি যেনতেনভাবে নিজেদের কাজ করতে গিয়ে অন্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের গুরুত্বহীন করে ফেলছি? এই বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে।
ভারতের জিডিপি ৭ দশমিক ৬ ভাগ। বাংলাদেশের ৭ দশমিক ১১ ভাগ। গত মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) আমাদের জিডিপি অর্জনের এই হিসাব দিয়েছেন। স্যানিটেশনে ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে আমরা। দারিদ্র্য বিমোচনেও এখন এগিয়ে আমরা। এমন আরো অনেক কিছুতেই। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব চিরদিন থাকুক। আরো মজবুত হোক। সম্প্রীতির মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা আরো প্রসার লাভ করুক। পাশাপাশি আমাদের মর্যাদা আমাদেরকেই বুঝতে হবে। অন্যকে বেশি তুলে ধরতে গিয়ে নিজেদের অবস্থানটাই যদি নড়বড়ে হয়ে যায় সেটাও বোধহয় ঠিক হবে না। অন্তত আমাদের মিডিয়া যেন এটা বোঝে।
লেখক: আরিফুর রহমান দোলন, সম্পাদক, ঢাকাটাইমস ও এই সময়
মন্তব্য করুন