মানিকগঞ্জে তিন বছরে কুকুরে আক্রান্ত ৩৫ হাজার মানুষ
কুকুর আতঙ্কে ভুগছে মানিকগঞ্জের মানুষ। শহরের প্রধান প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলিতে-গলিতে এমনকি বড় বড় বিপণিবিতানের সামনে দল বেঁধে বসে থাকে নানা রঙের কুকুর। একেক দলে ১০-১৫টির মতো। ভয়াল দর্শন এসব কুকুর সুযোগ পেলেই কামড় বসায় মানুষের হাত-পায়ে।
সিভিল সার্জনের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৭০-৮০ জন মানুষ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে কুকুরে আক্রান্ত হয়ে। তাদের বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে আগামী আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে ‘অভায়ারণ্য বাংলাদেশ এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’-এর পক্ষ থেকে কুকুর নিধন বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। এর পরিপেক্ষিতে হাইকোর্ট ডিভিশন কুকুর নিধন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কুকুর নিধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দিন দিন বেড়ে চলছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা।
মানিকগঞ্জ শহরবাসী ও শহরে আসা লোকজনের মাঝে এখন কুকুরভীতি বিরাজ করছে বলে জানান শহরের বেউথা এলাকার তারেকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সকালবেলায় রাস্তায় বের হলেই হাতে লাঠি নিতে হয়। বাচ্চারা যখন স্কুলে যায় তখন তারা কুকুর আতঙ্কে থাকে। আমরাও থাকি টেনশনে। এ ব্যাপারে পৌরসভার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
একটি শিশুকে কুকুরে আক্রমণের বর্ণনা দিয়ে পশ্চিম দাশুড়া এলাকার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার বাসার পাশে বছর আটেকের একটি বাচ্চা দোকান থেকে ডিম নিয়ে বাসায় ফিরছিল। পেছন থেকে একটি বেওয়রিশ কুকুর এসে ডিমসহ বাচ্চাটির হাতের কয়েকটি আঙুল কামড়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিই।’
খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সাইফুদ্দীন আহম্মেদ নান্নু বলেন, ‘আমি এই শহরে বড় হয়েছি। কিন্তু এত কুকুরের উৎপাত কখনো দেখিনি। দল বেঁধে কুকুরগুলো শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে, অলিতে-গলিতে মহড়া দেয়। কুকুরের কারণে একটা ভয়ংকর পার করছে শহরবাসী।
বিশেষ করে সকালে ও রাতের বেলায় কুকরের উৎপাত বেশি দেখা যায় বলে জানান এই শিক্ষক। তিনি বলেন, সকালে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন প্রাইভেট পড়তে যায়, তখন কুকুরের ভয়ে তারা আতঙ্কে থাকে। রাত নয়টার পর শহর যখন ফাঁকা হয়ে যায়, তখন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষকে আক্রমণ করে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো।
প্রভাষক সাইফুদ্দীন আহম্মেদ বলেন, আদালতের নির্দেশে কুকুর নিধন বন্ধ থাকলে রাষ্ট্রের উচিত হবে বিকল্প কিছু করা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কুকুর নিধনের বিকল্প হিসেবে জন্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। তার মতে, জন্মনিয়ন্ত্রণের ভ্যাকসিন কুকুরের বংশ বিস্তার কমাতে পারে, কিন্তু কুকুরের কামড়ের ফলে সৃষ্ট জলাতঙ্ক ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে পারবে না।
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইমরান আলী বলেন, মানিকগঞ্জ জেলায় ১৫ লাখ মানুষের বাস। সেই হিসাবে এ জেলায় কুকুর থাকার কথা ১৫ হাজার। কিন্তু এই মুহূর্তে কুকুর রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। তিনি বলেন, ২০১৪ থেকে চলতি নভেম্বর মাস পর্যন্ত সদর হাসপাতালে কুকুরে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ৩৫ হাজার। এর মধ্যে ২০১৪ সালে ছিল ১০ হাজার ৭৯২ জন। ২০১৫ সালে এর সংখ্যা বেড়ে হয় ১১ হাজার ৯১৭। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত কুকুরে আক্রান্ত রোগী এসেছে ১১ হাজার ৫০৪ জন।
সিভিল সার্জনের মতে, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কুকুরের কামড়ে আহত রোগী আসছে ৭০ থেকে ৮০ জন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চাহিদার চেয়ে অনেক কম ওষুধ (ভ্যাকসিন) সরবরাহ পাওয়ায় কুকুরে আক্রান্ত অনেক রোগীকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। বাইরে থেকে ওষুধ এনে তাদের সেবা দিতে হয়।
কুকুরের সংখ্যাবৃদ্ধি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে মনে করছেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম। কিন্তু আদালতের নির্দেশ থাকায় কুকুর নিধন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সবার যৌথ আলোচনায় এ ব্যাপারে সুষ্ঠু সমাধান হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন