আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ

ঐক্যের মাধ্যমে ভারতের আধিপত্য প্রতিহতের ঘোষণা বিএনপির ৩ সংগঠনের

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৯| আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৩২
অ- অ+

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। দীর্ঘ এই লংমার্চে লাখো নেতাকর্মী নিয়ে আখাউড়া সীমান্তে সমাবেশ করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। নেতৃবৃন্দ ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মধ্য দিয়ে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেয়নি, ভারতের প্রভুত্বও মেনে নেবে না। দেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে তা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কর্মীরা প্রতিহত করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই-কমিশনে হামলা, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা, ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে এই লংমার্চ হয়। সকাল ৯টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়ে পল্টন-ফকিরাপুল-ইত্তেফাক মোড় হয়ে ফ্লাইওভার হয়ে সাইনবোর্ড-চিটাগং রোড-কাঁচপুর মোড়-তারাবো-বরফা-ভুলতা, গাউছিয়া-চনপাড়া, মাধবদী-পাঁচদোনা- সাহেপ্রতাব, ভেলানগর-ইটখোলা-মারজাল-বারুইচা হয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় ভৈরব পৌঁছায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে বিকাল সাড়ে ৩টায় আখাউড়ায় পৌঁছায় গাড়িবহর।

এদিকে লংমার্চের গাড়িবহর ঢাকা থেকে বের হওয়ার পর সড়কের দুই পাশে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। তারা হাত নেড়ে, ফুল ছিটিয়ে গাড়ি বহরকে স্বাগত জানান। খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সিলেট, ভৈরব, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল বহর নিয়ে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন। তারা জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং ফেস্টুন নিয়ে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ সময় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ‘ভারতের দালালেরা- হুঁশিয়ার সাবধান’সহ ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেন তারা। লংমার্চে নেতাকর্মীদের হাতে নানা স্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা ওড়াতে দেখা গেছে।

কর্মসূচি ঘিরে সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে সকাল ৯টায় লংমার্চ শুরু হয়।

এই কর্মসূচিতে ঘিরে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় এবং লংমার্চের পথিমধ্যে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশপাশি সাদা পোশাকেও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, এই স্বাধীনতা আমরা বিক্রি করে দেব?

তিনি বলেন, ‘আজকে দিল্লির যারা সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী তারা মনে রেখো, তোমরা একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিয়েছিলে। আজকে ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশের মানুষের রক্তের যে তেজ, আত্মশক্তি, বিরত্ব এটা দিল্লির শাসকরা বুঝতে পারেনি।’

পরে লংমার্চ নিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় ভৈরব মোড়ে পৌঁছান তিন সংগঠনের নেতারা। পৌনে ১টায় পথসভা শুরু হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লংমার্চ করছি। ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণআন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, তার সব দোসরদের আশ্রয় দিয়েছে। আপনাদের (ভারত) জানিয়ে দিতে চাই, এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ না। এই বাংলাদেশ সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার ও তারেক রহমানের বাংলাদেশের। এদেশের এক ইঞ্চির মাটির দিকে তাকালে সেই চোখ উপরে ফেলা হবে।

ভারতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে জিলানী বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু না। বিশেষ করে সেখানে শেখ হাসিনা থাকে, বাংলাদেশের শত্রু থাকে সেই ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।

সভায় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ পাশাপাশি রাষ্ট্র। আমরা বলেছি, ভারত বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু সেখানে আমাদের হাইকমিশনার হামলা হয়েছে, পতাকা পুড়িয়েছে। সীমান্তে আমাদের দেশের নাগরিকদের গুলি করে মারছে, ফেলানিকে হত্যা করে কাঁটাতারের ঝুঁলিয়ে রাখে। এটা কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না।

তিনি বলেন, ভারত একটি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র। ভারতের আশীর্বাদে এদেশে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিতি হয়েছিল। এখন হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভৈরব থেকে লংমার্চ নিয়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় আখাউড়া সীমান্তে পৌঁছান নেতাকর্মীরা। আখাউড়া স্থলবন্দরের ট্রাক স্ট্যান্ডে সমাবেশ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়ে বিকাল ৫টায় শেষ হয়। আগরতলা সীমান্ত থেকে ১০০ মিটার দূরে স্থলবন্দর মাঠে লংমার্চের সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা জাতি। আমরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা সজাগ। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ভারতের। তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমরা ভারতকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখি। আর শেখ হাসিনা সরকারকে ভারত আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আপনারা ভারতকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ তাদের দোসরদের ফিরিয়ে দিতে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, দাসত্ব নয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য জীবনকে বাজি রাখতে হবে। প্রয়োজনে দেশের সম্মান রক্ষায় আবারো রক্ত দেব। তবুও দিল্লির দাসত্ব মানবে না এদেশের জনগণ।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, এই লংমার্চ সফল হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে এই লংমার্চ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি, শেখ হাসিনা আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করেছে। সুতরাং যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, তা সফল হবে না।

লংমার্চে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদল সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম পল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক কামরুজ্জামান জুয়েল, যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মামুন, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, দফতর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ তিন সংগঠনের লাখো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/জেবি/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সোনারগাঁয়ে যুবদল নেতা বহিষ্কার 
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে আরাফাতের পোস্ট
ঘাটাইলে লাল মাটি কাটার অপরাধে ২ লাখ টাকা জরিমানা
নেতানিয়াহুকে গোপনে অস্ত্র দিতেন এরদোয়ান: ইরানের গণমাধ্যম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা