জায়গাটি প্রধানমন্ত্রী চিনতেন বলে দখলে ব্যর্থ ভূমিদস্যু
স্কুলের জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে খালি পেয়ে সুযোগ বুঝে দখলের পাঁতারায় নামে এক ভূমিদস্যু। অত্যন্ত দামি এই জমির জাল দলিল তৈরিসহ নানা দপ্তরের কাজ প্রায় গুটিয়ে এনেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সব গুড়ে বালি।
স্কুলটি ছিল মূক বধির শিক্ষার্থীদের। জাতীয় সংসদ ভবনের ঠিক পশ্চিম পাশে স্বাধীনতার বেশ আগে থেকে স্কুলটিতে মূক-বধির শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে আসছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে স্কুলটি দেখতে যেতেন। নব্বইয়ের দিকে স্কুলটি মতিঝিলে স্থানান্তরিত হলে খালি পড়ে থাকে জায়গাটি।
এই সুযোগে এক ভূমিদস্যু জাল দলিল করে স্কুলটির জায়গা নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়ার পাঁয়তারা করে। কিন্তু বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসায় আর সফল হতে পারেনি ভূমিখেকোর দল। আদালতে গিয়েও ব্যর্থ হয় তারা। জায়গাটির মালিকানা ফিরে পায় গণপূর্ত।
প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, এই জায়গায় হবে মূক-বধির শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ। এর মধ্য দিয়ে নিজেদের জাযগা ফিরে পেল মূক-বধির শিক্ষার্থীরা।
জায়গাটি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ঠিক পশ্চিম পাশে। পরিত্যক্ত পেট্রলপাম্প এবং জাদু মিয়ার কবরের মাঝখানে। সবুজ ঘাস আর লতাপাতায় ঢাকা প্রায় সোয়া দুই একর জায়গাটি এবার বাকপ্রতিবন্ধীদের খেলাধোলা আর আনন্দের কেন্দ্র হবে।
আজ রবিবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘সংসদ ভবনের পাশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জায়গা ছিল একসময়। আমাদের তো ভূমিদস্যুর অভাব নেই। একজন নামকরা ভূমিদস্যু হঠাৎ করে জাল দলিল করে জমিটা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। তখন আমি বলেছি, আমি জমিটা চিনি, এখানে একটি প্রতিবন্ধী স্কুল ছিল, ছোটবেলায় আমরা এই স্কুলে আসতাম, আমার বাবা-মা আমাদের ভাইবোনদের নিয়ে যেতেন ওদের সঙ্গে দেখা করতে, মিশতে। কাজেই এই জায়গাটা আমার খুব চেনা। আমরা তখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে থাকি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা এই জায়গাটা সংসদ ভবনের আওতায় নিয়ে আসি। এখন এই জায়গাটায় আমরা আমাদের প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলার প্র্যাকটিসের জায়গা হিসেবে উন্নত করার ব্যবস্থা করেছি।’
জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পরিচালক (প্রশাসন) ড. আনোয়ার উল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা জমিটি পেতে যাচ্ছি। জমি পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। এখন সংসদ সচিবালয় থেকে অনাপত্তিপত্র দিলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জমিটি প্রতিবন্ধীদের খেলার মাঠের জন্য দেয়া হচ্ছে। এটিতে এখন মাটি ফেলতে হবে। কারণ জায়গাটি অসমতল। আমরা এই জায়গা ঠিক করার জন্য অর্থ বরাদ্দও রেখেছি। প্রায় ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. আনোয়ার বলেন, ‘গত তিন বছর জমিটি পাওয়ার বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত ও সংসদ সচিবালয়ে চিঠি চালাচালি হয়েছে। এখন বিষয়টি দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এখানে প্রতিবন্ধী শিশুরা এসে খেলাধুলা করবে। এখানে কোনো স্থাপনা হবে না। শুধু টয়লেট এবং একটি শেড হবে।’
তবে জমিটি জাল দলিল করে যে ভূমিখেকো নিতে চেয়েছিল তার নাম জানা যায়নি। ড. আনোয়ার বলেন, ‘আমরা শুনেছি কোনো এক লোক এটা বাগিয়ে নিতে চেয়েছিল। এ জন্য জাল দলিল বানিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কারণে ওই চক্র সফল হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের শেরেবাংলা নগরের প্রকৌশলী ফজলুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জায়গাটি কারা দখল করতে চেয়েছিল তাদের নাম জানা নেই। তবে এটি সব সময়ই সরকারের দখলেই ছিল। মাঝখানে কেউ জাল দলিল করে জায়গাটি বাগিয়ে নিতে চেয়েছিল।’
(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/মোআ)