আটকে রেখে তরুণীকে সাত মাস ধর্ষণ, বন্দী আরও অনেকে
রাজধানীর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তরুণীটি। আরও ভালো বেতনে কাজ দেয়া হবে-এক পরিচিত জনের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে তিনি যান চট্টগ্রামে। কিন্তু সেখানে তার ওপর চলে দুঃসহ নির্যাতন। সাতটি মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় তাকে। এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেও চলে তার ওপর নির্যাতন।
অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির সন্তান নষ্ট করারও চেষ্টা করা হয়। এ জন্য তাকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই খাওয়ানো হয় বিভিন্ন ওষুধ। এক পর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি। পরে শনিবার রাতে তাকে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের বিছানায় ওই তরুণীটির সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমসের। এ সময় তিনি তার ওপর চলা দুঃসহ নির্যাতন তুলে ধরেন। বলেন, তিনি যেখানে বন্দী ছিলেন, সেখানে তার মতো আরও অনেক তরুণীকেই দেখেছেন তিনি। এদেরকেও একই কায়দায় এনে আটকে রেখে দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর আগে সবাইকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
ওই তরুণী জানান, বাবা একা সংসারের হাল টানতে পারেন না। তাই তিনি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। তার বাড়ি চাঁদপুর সদরে। এর মধ্যে মুঠোফোনে পরিচয় হয় চাঁদপুর সদর উপজেলা শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মহামায়া গ্রামের এক ছেলের সঙ্গে। সাত মাস আগে ওই ব্যক্তিই তাকে চট্টগ্রামে বেশি টাকা বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরে নিয়ে আসে। খাবারের সঙ্গে নেশা দ্রব্য মিশিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে রেখে তাকে ধর্ষণ করে।
পরে তাকে অচেতন অবস্থায় পরে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে কোনো চাকরিতে না দিয়ে চট্টগ্রাম ঈদগাহ এলাকার ভাই ভাই নামে একটি আবাসিক হোটেলের বড় কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। তরুণীর ব্যবহৃত মোবাইল, সিম কার্ড, সঙ্গে থাকে কাগজপত্রও নষ্ট করে ফেলে। ফলে তরুণীটি বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারেননি।
ওই তরুণী বলেন, ‘ওই হোটেলে আরও মেয়েকে দেখতে পাইছি। তাদেরকে দিয়ে জোরপূর্বক নোংরা কাজ করানো হয়। আমাকেও একাধিক পুরুষের সঙ্গে নোংরা কাজে বাধ্য করা হয়। এতে রাজি না হলে আমাকে খাবার দিতো না। খুব মারধর করতো। তার মারধরের ভয়ে নোংরা কাজে বাধ্য হতাম।’
দুই মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে এই তরুণীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা চালানো হয় বলে জানান তিনি। বলেন, চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো জোর করে নানা ওষুধ খাইয়ে দিতো। এতে টানা কদিন তরুণীর প্রচ- রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে চট্টগ্রাম থেকে সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে শনিবার চাঁদপুর কালীবাড়ি কোর্ট স্টেশনে নিয়ে আসা হয়।
চাঁদপুরে আসার পর তরুণীর প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে প্ল্যাটফর্মের পাশে ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে যায় অভিযুক্ত ব্যক্তি। এরপর তরুণীকে প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন নাসরিন নামের এক পথচারী।
ঢাকাটাইমসকে নাসরিন বলেন, ‘এক বৃদ্ধ লোক রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে হাতজোড় করে সাহায্য করতে অনুরোধ করছিলেন। দেখে আমি আর হাত গুটিয়ে থাকতে পারলাম না। তাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এসেও তার রক্তে হাসপাতালে ফ্লোর ও বিছানা রক্তাক্ত হয়ে যায়।’
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আসিবুল আহসান বলেন, ‘পথচারীরা ওই তরুণীকে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই তরুণী এখন মৃত্যুশয্যায়। রক্তশূন্যতা পূরণে অন্তত চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন এর মধ্যে মাত্র এক ব্যাগ আমরা দ্রুত ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছি।’
ঘটনাটি জানার পর চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার স্থানীয় সাংবাদিক ও মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওলিউল্লাহ ওলিকে নিয়ে হাসপাতালে যান। পুলিশ সুপার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করে মামলা করতে উপপরিদর্শক জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছি।'
(ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস)
মন্তব্য করুন