যে অভিযোগে আওয়ামী লীগের তিন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমসহ তিন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম ছাড়া অন্য দুইজন হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এই তিন নেতা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এসব মামলা করা হয় বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদক কার্যালয়ে ব্রিফিং করেন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি জানান, কমিশনের অনুমোদনক্রমে বৃহস্পতিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

দুদক মহাপরিচালক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, অনুসন্ধানে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে ৬১ কোটি ৪২ লাখ ৫৬ হাজার ৪২৬ টাকা এবং তার ছেলে রাহাত মালেকের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ১৬১ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য উঠে এসেছে।

এছাড়া জাহিদ মালেকের ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে পরস্পর যোগসাজশে ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭ টাকা জমা এবং ১১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৪৬৫ টাকা উত্তোলনসহ সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান মহাপরিচালক।

তিনি আরও জানান, এছাড়া জাহিদ মালেক তার ছেলে রাহাত মালেকের নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে ওই প্রতিষ্ঠান এবং নিজ ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত ব্যাংক হিসাবে মোট ৬৬৮ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৩ টাকা জমা ও ৬৬৬ কোটি ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৬২ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করেছেন।

দুদক জানিয়েছে, ছেলে রাহাত মালেক ছাড়াও মামলায় জাহিদ মালেকের স্ত্রী শাবানা মালেক, পুত্রবধূ সাকিবা মালেক, মেয়ে সাদিয়া মালেক ও সিনথিয়া আকমলকে আসামি করা হয়েছে।

জানা গেছে, জাহিদ মালেকের স্ত্রী শাবানা মালেকের নামে তিন কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৭ টাকা, পুত্রবধূ সাকিবা মালেকের নামে নয় কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪৫ টাকা, মেয়ে সাদিয়া মালেকের নামে এক কোটি ৮৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২ টাকা, সিনথিয়া আকমলের নামে দুই কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার ২৯৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের আলোচিত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধেও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এ বিষয়ে সংস্থার মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) জানিয়েছেন, ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায় পলকের বিরুদ্ধে।

এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৫টি ব্যাংক হিসাবে জুনাইদ আহমেদ পলক ৩২ কোটি চার লাখ ৯৫ হাজার ৩১৪ টাকা জমা এবং ২৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৫ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

অপরদিকে পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিনের নামে নয় কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৩ টাকা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ পাওয়া যায়। তার নামে ৩১টি ব্যাংক হিসাবে ২২ কোটি ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৯ টাকা জমা এবং ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক জানায়, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, মির্জা আজমের নামে-বেনামে এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তার মেয়ে মির্জা আফিয়া আজম অপির নামে তিন কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

মির্জা আজমের স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক। এছাড়াও তার নিজের নামে ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির নামে ৬০টি ব্যাংক হিসাবে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার ২৩২ টাকা জমা ও ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকা উত্তোলনপূর্বক অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। দেওয়ান আলেয়ার নামে ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/এফএ)