পুরান ঢাকায় সোহাগ হত্যা

আনসার সদস্যদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ সত্য নয়: বাহিনী প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৮:৩০
অ- অ+

রাজধানীর পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ৩ নম্বর গেটের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা দায় ছিল না বলে জানিয়েছেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেছেন, ঘটনার দিন আনসার সদস্যরা হাসপাতালের নির্ধারিত রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন। রোস্টারের বাইরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গেটেই দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই, সেখানে গেটের বাইরে স্বপ্রণোদিত হয়ে আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল না।

রবিবার(১৩ জুলাই) বিকালে বাহিনীর খিলগাঁও সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি সেদিনের আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনের পরিধি ও রোস্টার সম্পর্কে বলেন, সোহাগ হত্যার ঘটনা হাসপাতালের তিন নম্বর গেটে। সেদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩ নম্বর গেটে রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন ১ জন আনসার সদস্য। এরপর সেখানে আনসার সদস্যের উপস্থিতি ছিল না।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মোট নিয়োজিত আনসার সদস্যের সংখ্যা ৮০ জন। এরমধ্যে রোস্টার অনুযায়ী, সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ২৪ স্পটে দায়িত্ব পালন করেন ২৫ জন আনসার সদস্য।

হাসপাতালের কোথায় কীভাবে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন সেটা নির্ধারণ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা, ডিরেক্টর ও ডিডি(প্রশাসন)। সোহাগ হত্যার ঘটনা বিকেল ৫ টা ৫০ মিনিটে। তখন ঘটনাস্থল ৩ নম্বর গেটে দায়িত্ব পালন অবস্থায় কোনো আনসার সদস্যকে রাখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুতরাং সোহাগ হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্যদের অবহেলা বা ব্যত্যয় দেখার কোনো সুযোগ নেই।

মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩ নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় এক হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। লালচাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ী স্থানীয় একদল সন্ত্রাসীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় কয়েক’শ লোক সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তাদের কেউ কেউ ভিডিও করছিলেন, তাদের কেউ কিন্তু নিকটস্থ আনসার ক্যাম্পে খবর দেননি, কল করেননি। কেউ ক্যাম্পে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে বলেননি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডারকেও জানান নাই। যখন প্লাটুন কমান্ডার খবর পাইছে তখন তিনি ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসেন, তখন ভুক্তভোগীর বুকের ওপরে উন্মত্ততা চলছিল। তখন তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খবর দেন, বলা হয়, গেটের বাইরে এরকম একটা ঘটনা ঘটছে। এরপরই গেটের ভেতরে টেনে ভিকটিমকে নেয়া হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেননি। হাসপাতালের বাইরের ঘটনা বলে আনসারকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

তিনি বলেন, আনসারের দায়িত্ব দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু ৩ গেট এলাকায় তখন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা নাই। তখন রোস্টার অনুযায়ী, আনসার সদস্যদের ডিউটিও ছিল না। তাহলে আনসার সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা কোথায়? কেউ তো খবর দেননি। যতোক্ষণে প্লাটুন কমান্ডার খবর পাইছেন ততোক্ষণে 'ঠু লেট'। ঘটনা শেষ! তাছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নিতে বলেননি।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের মতো বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্য গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তবে এই ঘটনার পর আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অপেশাদারিত্বের অভিযোগ সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, আনসার সদস্যরা কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন তার রেসপনসেবলিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা না দিলে আনসার সদস্যরা স্বপ্রণোদিতভাবে যাবার সুযোগ নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ডিরেক্টশনই ছিল গেটের বাইরের ঘটনায় আনসার সদস্যদের যাবার সুযোগ নেই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি বলে ওখানে যাবার দরকার নাই। তাহলে আনসার সদস্যরা কি সেখানে যাবে? সে কার নির্দেশনা শুনবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, ‘হাসপাতালের ডিরেক্টরের নির্দেশনাই মানবে আনসার। হাসপাতালের ভেতরে যদি ঘটতো তাহলে সেল্ফ ডিফেন্স হিসেবে আনসার সদস্যরা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে। কারণ আনসারের কাজই কর্তব্যরত এরিয়ায় সিভিলিয়ানদের নিরাপত্তা দেয়া। তারা(হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) যেভাবে নির্দেশনা দেন সেভাবেই দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে রোস্টার, কর্তব্যরত এরিয়ার বাইরে আনসার সদস্যদের যাবার সুযোগ ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নানা সময় পরিদর্শন করি, নিরাপত্তা ইস্যুজ দেখি, পরামর্শ দিই। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কথা বলি। আমরা যদি কোথাও নিরাপত্তা ইস্যুজ দেখি জানাই। দায়িত্ব পালনে সমস্যা হলে আমরা আনসার ডিপ্লয়মেন্ট প্রত্যাহারও করি। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেটা পারি না। যদি সেটা পারতাম তাহলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিতাম।’

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কলা খেলেই সুস্থ-সবল থাকবে কিডনি, ওজন কমবে তাড়াতাড়ি
গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে ট্রল, দিনাজপুরের এএসপি প্রত্যাহার
‘গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি’
“চাঁদাবাজ যতই প্রভাবশালী হোক, পার পাবে না”
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা