সাঁইজির ভীষণ ভক্ত আমি : রেখা

শেখ সাইফ
| আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:১৭ | প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:৫২

সংগীতের হাতেখড়ি ছোটবেলা থেকেই। বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী তিনি। গান করছেন নিয়মিত। তবে মঞ্চেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বলছি লোকসঙ্গীতশিল্পী রেখার কথা। গানের জগৎ নিয়ে আলাপ করেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সাইফ।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতসহ সব ধরনের সঙ্গীতেই দীক্ষা নিয়েছেন, কিন্তু ফোক গানের প্রতি বিশেষ ঝোঁক কেন?

আসলে ছোটবেলা থেকেই গানটা শিখে এসেছি। আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন থেকেই গান শিখছি। আর সহজ সরল ভঙ্গিতে কিছু জানাতে চাইলে তখনই কিন্তু ফোক গানটা চলে আসে। সহজভাবে বোঝানোর যে ভাষা, সেটা ফোক গানের মাধ্যমে মানুষকে যতটা বলা যায়, অন্যান্য সঙ্গীতের চেয়ে ফোকের ভাষাটা মানুষ অনেক সহজে বুঝতে পারেন। আসলে ফোক মাটি ও মানুষের গান। শুরু থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল আমি যেন গান গেয়ে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারি। আর আমি সেটা ফোক গানের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছি।

কোন ধরনের গান ভালো লাগে? আমি ফোক ঘরানার যত গান আছে সবই করার চেষ্টা করি। লোকসঙ্গীতের মধ্যে যত গান আছে, যত শাখা-প্রশাখা আছে, তার মধ্যে কিন্তু আমি লালন সাঁইজির গানটাই বেশি করি। লালন সাঁইজির ভীষণ ভক্তও আমি। আমি ভেতরে তার গান লালন করি। শাহ আবদুল করিমের গানও অসাধারণ। আমি তার গানও করতে পছন্দ করি। তাছাড়া দেখবেন আমাদের দেশে বিভিন্ন আঞ্চলিক গান তুমুল জনপ্রিয়। সেগুলোর প্রতি আমার প্রচণ্ড আগ্রহ আছে। যেমন- চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার কিছু গান, সিলেট অঞ্চলের কিছু গান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের কিছু গান আছে। এ ধরনের জনপ্রিয় আঞ্চলিক গান আমি গাইতে চেষ্টা করি।

প্রথম একক অ্যালবাম বের হয়েছে ২০১০ সালে, অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? প্রথম অ্যালবাম আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। পড়াশোনার পাশাপাশি এটা করেছি। যদিও তখন মাথার ভেতরে শুধু একটা ব্যাপারই কাজ করেছে, অ্যালবাম বের করব। প্রথম অ্যালবাম বেরিয়েছে ‘গোপন ভালোবাসা’ ২০১০ সালে। এটা বেরিয়েছে গাঙচিলের ব্যানারে। প্রথম অ্যালবাম করার সময় খুব একটা বুঝিনি। বলতে পারেন- না বুঝেই বের করেছি। তবে এটাকে আমি এভাবে মূল্যায়ন করি, যদি এটা না হতো তবে হয়ত আমি শুরুই করতে পারতাম না। তবে প্রথম ভোকাল দেওয়ার অনুভূতি দারুণ ছিল।

তাই দ্বিতীয় অ্যালবামটা বের করতে ৫ বছর সময় নিয়েছেন? গত বছরে বের হলো দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘রঙের মানুষ’। এটি বেরিয়েছে রিংগারের ব্যানারে। প্রথম অ্যালবামটা করার পর এটি করার জন্য প্রায় দু’বছর ভেবেছি। আর কাজ করেছি প্রায় সাড়ে তিন বছর। এটা বের হয়েছে কিন্তু কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে ভালো হয়েছে বলা চলে। যদিও সেখানে কিছু টেকনিক্যাল প্রবলেম ছিল। আমি চেষ্টা করেছি আমার মতো করে গানগুলো করতে। কিন্তু আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়েছি তা নয়, তবে কিছুটা পেরেছি। হয়ত সামনে আরও ভালো হবে। আমার তিনটি মিশ্র অ্যালবাম বেরিয়েছে, সেগুলোও বেশ ভালো হয়েছে।

বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে তো অনেক আগে থেকেই গান করছেন। টেলিভিশন আর বেতারে আমার শুরুটা অনেক আগে থেকেই হয়েছে। আমি বেতার এবং টেলিভিশনে অ্যানলিস্টেড হই ২০০০ সালে। আর সেখানে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে আমার জন্য সহায়ক হয়েছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা। ছোটবেলায় শিল্পী গোপাল চন্দ্র সরকারের কাছে হাতেখড়ি, তারপর দীর্ঘ প্রায় সাত বছর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ওপর তালিম নিয়েছি শিল্পী অনুপ কুমার দাশের কাছে। ক্ল্যাসিকেলে মিউজিকের ওপর শিল্পী বরকত হোসেনের কাছেও দীক্ষা নেই।

অডিও ক্যাসেটের সময়ে শিল্পীদের দারুণ সময় গেছে, ক্যাসেটগুলো মার্কেটে হিট হতো। সে সময়টা আপনারা পাননি। এখনো অডিও বাজার নেই বললেই চলে, এ সম্পর্কে কি বলবেন? এই জায়গাটা আসলে পূরণ হচ্ছে অনেকভাবে। টেকনোলজি আপগ্রেড হচ্ছে। তাই পুরনো জিনিস চলে যাবে, সেটা আবার নতুন ফরম্যাটে আসবে, সেটাই নিয়ম। যেমন আগে ইউটিউব ছিল না, কলার টিউন, রিংটোন, ফোন কোম্পানিগুলো এসেছে, আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে। এই মাধ্যমগুলো দিয়ে সেটা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু ফরমেশন বা সিস্টেমটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। কারণ আমরা এখন চাইলেই আবার সেই ক্যাসেটে যেতে পারব না। এটা সময়ের পরিবর্তন।

গানের পাশাপাশি আর কি করছেন? গানের পাশাপাশি আসলে কিছুই করছি না। তবে সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নিয়েছি সেটাও না। সঙ্গীতকে পেশা হিসেবেও নিতে চাচ্ছি না। আসলে সঙ্গীতকে অনেক বেশি ভালোবাসি। এটা ভালোবাসার জায়গা। এটা আমার হৃদয়ে থাকে। সঙ্গীতকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখি। তাই এটা আমার কাছে পেশা না, পেশন। আমি মনে করি পেশার চেয়ে বেশি কিছু। এই পেশনটাকে পেশা হিসেবে নিতে চাই না। আর ভালোবাসার জায়গাটাকে যদি পেশা হিসেবে নেওয়া হয় তবে আমার মনে হয় ভালোবাসার জায়গাটায় ঘাটতি থাকে।

প্রচুর রিয়্যালিটি শো হচ্ছে, নতুন নতুন শিল্পী তৈরি হচ্ছে, একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে এটাকে কিভাবে দেখেন। এখান থেকে কিছু ভালো শিল্পী বের হয়ে আসছে। এটা হোক। তবে গানের বিষয়ে বলব চর্চা করে আশা উচিত। যারা চর্চা করে আসছে তাদের মূল্যায়ন করা উচিত। আর যারা বের হয়ে আসছে তারা কিন্তু একটা প্লাটফর্ম নিয়ে আসছে। তারা সুযোগও পাচ্ছে। এটা সঙ্গীতের জন্য অনেক ভালো দিক। যে দেশে সংস্কৃতি যত উন্নত হবে, সে দেশের উন্নতি তত হবে। এই রিয়্যালিটি শোর মাধ্যমে ভেতরেও কিন্তু অনেক কিছু থেকে যায়। অনেকেই কিছু করতে পারছে না। সবাই শুধু স্টারদের নিয়ে টানাটানি করে। তারা ছাড়াও কিন্তু অনেক অনেক প্রতিভাবান আছে। সেদিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া উচিত। তাদের মূল্যায়ন করা উচিত।

অনেকে স্টার হয়ে যাওয়ার পর গানের চর্চাটা ছেড়ে দেন, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া উচিত কী? যারা চর্চাটা ছেড়ে দিচ্ছে তারা আসলেই চর্চা করেই আসেনি। আসলে যারা সঙ্গীত চর্চা করে আসে তারা কখনো ছাড়তে পারে না। আমি সঙ্গীত চর্চা করে এসেছি এটা বলব না, তবে আমি ছোটবেলা থেকেই গান করেছি, পরিবারের মাধ্যমেই এটা হয়ে এসেছে। আমার পরিবারের ইচ্ছাও ছিল যেন আমি সঙ্গীতশিল্পী হই। আমাকে নিয়ে তারা অনেক স্বপ্ন দেখেছিল। আমি কতটুকু পেরেছি জানি না। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি সঙ্গীতের সঙ্গেই থাকব। এটাই আমার ইচ্ছা।

সিনেমায়ও প্লেব্যাক করেছেন। হ্যাঁ সিনেমায় প্লেব্যাকও করেছি, তবে ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি। বেশ কয়েকটা গান করেছি। আর একটা বিষয় হলো, আমি যেহেতু ফোক গান করি, তাই ফোক বেশি টানে। ছবিতে প্লেব্যাক কিংবা ফিল্মে গান করা এটা অনেক টাফ। অনেক কঠিন একটা বিষয়। আমি যে ধরনের গান করি, আমার মনে হয়েছে ফিল্মের ভয়েজটা আমার না। প্লেব্যাক করার মতো ভয়েজ আমার না। ফিল্মে বিভিন্ন প্যাটার্ন থাকে। আমার বিশ্বাস, আমাকে যদি ওই জায়গাটায় কাজ করতে দেওয়া হয় তাহলে আমি শতভাগ পারব।

এখন মিউজিক ভিডিও দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে, আপনিও মিউজিক ভিডিও করেছেন, কেমন সাড়া পেলেন? আমার প্রথম অ্যালবামের গানগুলোই মিউজিক ভিডিও করেছি। যদিও ওগুলো অতটা মানসম্পন্ন হয়নি। তবে এখন যে কাজগুলো করব, আগের অভিজ্ঞতা থেকেই করব। তাই এগুলো মানসম্পন্ন হবে।

গান গেয়ে প্রথম উপার্জন করেছেন কখন? আমি যখন ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ি তখন একটা আঞ্চলিক প্রোগ্রামে কিছু সম্মানী পেয়েছি। আমাদের এলাকায় বিটিভির একটা প্রোগ্রাম হয়েছিল। বিটিভিতে কিন্তু আঞ্চলিক গানের অনুষ্ঠান হয়। এরকম একটি অনুষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমাকে একটা চেক দিয়েছিল। চেকটা ছিল আমার নামে। সেটা আমার প্রথম উপার্জন। এটা ২৫ হাজার টাকার। এলাকায় কিছু ছোট ছোট অনুষ্ঠানেও গান করতাম, তখন দেখা গেছে ৫০০ টাকায় অনেক খুশি হতাম। তবে ওটা একটা সম্মানী বা উৎসাহ।

নতুন কি করছেন? এখন আবার সাঁইজির গান শুরু করেছি। আমি বাউল গান খুব পছন্দ করি। আমার কাজের মধ্যে অবশ্যই সেটা থাকবে। এভাবে পরিকল্পনা করছি। তারপর কিছু গান আমি করব যে গানগুলো এখনো আসেনি। যেমন আমার লালন সাঁইজি কিংবা শাহ আবদুল করিমের অনেক জনপ্রিয় গান আমরা শুনেছি, কিন্তু আরও অনেক ভালো ভালো গান আছে যেগুলো এখনো কেউ করেনি, সেগুলোকে নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার। নতুন যারা গান করছি, আসলে আমরা জনপ্রিয় কিছু গান আনতে পারছি না। এখনো অনেক পুরনো গান আছে যেগুলো আমাদের সঙ্গীতকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।

সামনের দিনে আর কোনো স্বপ্ন কিংবা পরিকল্পনা আছে কী? গানের মধ্যেই বড় হয়েছি, জীবনের শেষ অবধি গানের সঙ্গেই থাকতে চাই।

(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/এসএস/টিএমএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :