নরসিংদীতে দখল-দূষণে সংকীর্ণ হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র

এম লুৎফর রহমান, নরসিংদী
  প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০১৭, ১৩:৫১| আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৭, ১৪:১৭
অ- অ+

নরসিংদীতে দখল আর দূষণের কবলে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী ব্রহ্মপুত্র নদ। শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও অব্যাহত দখলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে এ নদটি। এতে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

জানা যায়, নরসিংদী জেলার প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় বইছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে শিল্প-কারখানা ও বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। দীর্ঘদিন ধরে শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা সরাসরি নদের পানিতে ফেলায় পাল্টে গেছে চিত্র। অব্যাহত দখলের কারণে নরসিংদী এলাকায় নদটি এখন খালে পরিণত হতে চলেছে। এতে বিপন্ন হচ্ছে নদের জীববৈচিত্র্য।

অভিযোগ রয়েছে, গড়ে ওঠা বেশকিছু বৃহৎ শিল্প-কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি স্থাপন করা হলেও এসব চালু না রেখে অপরিশোধিত বিষাক্ত বর্জ্য ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলা হচ্ছে। কারখানাগুলোর খরচ কমাতে বেশিরভাগ সময় ইটিপি বন্ধ রাখা হয়। ফলে অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলায় পানি মারাত্মক দূষিত হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদফতর বলছে, নদীদূষণ রোধে দায়ী কারখানাগুলোকে নিয়মিত জরিমানাসহ পর্যবেক্ষণে রাখার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না নদের পানিদূষণ।

স্থানীয়রা জানায়, নদটি এক সময় নরসিংদী সদর, মাধবদী ও আড়াইহাজার এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি ছিল। যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিরাট ভূমিকা ছিল এ নদের। পাশাপাশি নদের দুই পারের কৃষি জমি ছিল ফসলে ভরা, পানিতে ছিল প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ। কিন্তু নদের দুই পাড়ের শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ব্রহ্মপুত্রের পানি দূষিত হয়ে লাল ও কালচে বর্ণ ধারণ করায় সেচ দিয়ে ফসল ফলানো যেমন দুরূহ হয়ে পড়েছে, তেমনি বন্ধ হয়ে গেছে মাছের বসবাসসহ বংশবিস্তার। মাছের প্রাচুর্য হারিয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে অনেক জেলে পরিবার। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীগুলো এখন ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে।

নরসিংদীর মাধবদী থানার রহিমদী গ্রামের ওসমান ভূঁইয়া জানান, তীর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলছেন বড় বড় মিল-কারখানা। এতে নদের আকার ছোট হওয়ার পাশাপাশি গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।

বিনাইরচর গ্রামের জহিরুল ইসলাম জানান, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। এ নদে কোনো মাছ নেই। কেউ এর পানিতে গোসল করলে শরীরে চর্মরোগসহ নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। তাই ব্রহ্মপুত্রের বিষাক্ত পানি ভয়ে কেউ স্পর্শও করে না।

মাধবদী পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক জানান, কারখানাগুলোয় ইটিপি থাকলেও মালিকরা বন্ধ রাখেন। নদীর তীর দখলের পাশাপাশি প্রকাশ্যে ব্রহ্মপুত্রে ফেলা হচ্ছে বর্জ্যসহ ময়লা-আবর্জনা। এরপরও পরিবেশ অধিদফতর কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, নরসিংদীকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্রহ্মপুত্রকে দখলমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি কারখানাগুলোয় ইটিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিশোধিত বর্জ্য নির্গমন নিশ্চিত করতে হবে।

নরসিংদী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান বলেন, যেসব কারখানা রঙমিশ্রিত পানি নদে ফেলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নদ রক্ষা বিষয়ে এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিজয় দিবসে শিশু পার্কে বিনা টিকিটে প্রদর্শনীর নির্দেশ
নদী-বনভূমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: রিজওয়ানা হাসান 
পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ
রাষ্ট্র মেরামতের সময় জানতে চাওয়ার অধিকার জনগণের রয়েছে: তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা