মিলনের পরদিনই মহিউদ্দিন অনুসারী ছাত্রলীগের হামলা
ভাই ডেকে কাছে নিয়ে তিক্ততার অবসানের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্মাণাধীন সুইমিংপুলে হামলা চালিয়েছেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
তবে এ সময় পুলিশের বাধায় সুইমিং পুলের নির্মাণ কাজের কোনো ক্ষতি না হলেও সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন ছাত্রলীগ নেতা এবং কয়েকজন পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের কয়েকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টা নাগাদ সুইমিংপুলের নির্মাণ কাজে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আউটার স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকে পড়েন নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা টিনের বেষ্টনি উপড়ে নির্মাণসামগ্রী ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশের টিয়ারসেলে ছত্রভঙ্গ হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা একপর্যায়ে নগরীর কাজির দেউড়ি থেকে আসকার দীঘির পাড় এবং পত্রিকাপাড়া জামালখানে সড়কে টায়ারে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভাঙচুর করে গণপিরিবহনের কয়েকটি গাড়ি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষে ছাত্রলীগের একজনের পায়ে গুলি এবং কয়েকজনের মাথায় ইটের আঘাত লেগেছে। পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছেন ছাত্রলীগের ১৫-১৬ জন নেতাকর্মী। পুলিশের দুজন সদস্য গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে গেছেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে নগরীর পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন। এ সময় বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষ রাত আটটা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার ঢাকাটাইমসকে জানান, সুইমিংপুলের নির্মাণ কাজে হামলা চালাতে গিয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ১৫-১৬ জন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। দুইজন পুলিশও ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে সুইমিং পুলের নির্মাণ কাজে ছাত্রলীগের হামলা ও সংঘর্ষে হতভম্ব ও হতাশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও নগর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মো. ইসহাক মিয়া বিস্ময় প্রকাশ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গতকালবিকালে দলীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে আয়োজিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে কাছে ডেকে কথা বলেন এ বিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাতে মনে হয়েছিল, সপ্তাহজুড়ে দুই নেতার মধ্যে চলমান তিক্ততার অবসান হয়েছিল। এতে খুশি হয়েছিলেন দলের শুভাকাঙ্ক্ষী নেতারা।’
আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই কী দেখালেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। দশ দিন আগে নগরীর লালদিঘী ময়দানে মেয়র নাছির উদ্দিনকে খুনি, লুটেরা, আখ্যা দিয়ে সুইমিংপুল নির্মাণ কাজ বন্ধে ১০ দিনের আল্টিমেটাম দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। আর গতকাল নাছিরকে বুকে টেনে নিলেও আজ ছাত্রলীগ-যুবলীগকে তিনি সুইমিংপুল ভাঙার নির্দেশ দেন। তাতে এই এ কাণ্ড ঘটায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ।’
এ ব্যাপারে মুঠোফানে যোগাযোগ করা হলে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও সুইমিং পুল বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক আলী আব্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অনুসারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীকে লেলিয়ে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্তে মুঠোফান বন্ধ রেখে আনন্দ-উল্লাস করছেন।’ তিনি বলেন, ‘খেলার মাঠ আর সুইমিংপুল বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। খেলার মাঠ আর সুইমিংপুল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এই জ্ঞানের অভাবে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন সুইমিংপুল নির্মাণের বিরোধিতা করছে।’
বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সব নিয়মনীতি মেনে সিটি মেয়র ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক আ জ ম নাছির উদ্দীনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদানে টেন্ডারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে সুইমিংপুল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মালিকানাধীন জায়গাতেই সুইমিংপুল নির্মিত হচ্ছে। অন্যের কিংবা মূল স্টেডিয়াম থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো স্থানে সুইমিং পুল নির্মাণের কোনো নজির বাংলাদেশে নেই।’
সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘কারণ, এর রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির প্রয়োজনেই সুইমিং পুল নির্মাণের স্থান নির্ধারণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রায় ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০ হাজার ৩৮০ বর্গফুটের ৩০৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৩০ ফুট প্রস্থের এই আধুনিক মানের সুইমিং পুল নির্মাণ করা হচ্ছে। যা আমাদের ক্রীড়াবিদদের উৎকর্ষ সাধনে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম একটি বিভাগীয় শহর হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও এখানে একটি সুইমিংপুল নেই, চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের সাঁতার শেখার সুযোগও নেই। এ লজ্জা আমাদের সবার। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনস্ত প্রায় শতাধিক ক্লাবের খেলোয়াড় ও ক্রীড়াবিদ সাঁতার জানে না। এটি ভাবতেও কষ্ট হয়। সম্প্রতি একজন তরুণ সাঁতার না জানার কারণে অকালেই ঝরে গেছেন। এই দায় আমাদের সবার। দায়মুক্তির এ সুযোগের বিরুদ্ধে যারা বিরোধিতা করছে তারা নিজেদের বিবেককে একবার প্রশ্ন করুন।’
(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/আইকে/জেবি)
মন্তব্য করুন