সরকারি বাস নামানোর বাধা ‘বেসরকারি অনুমতি’

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ থেকে
  প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১০:৩৮| আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৭, ১১:১৯
অ- অ+

বেসরকারি বাস মালিকরা কতটা প্রভাবশালী? মানিকগঞ্জে আরও বিআরটিসি বাস নামানোর দাবি রয়েছে জেলাবাসীর। কিন্তু বাস নামবে কি? সম্প্রতি সফরে আসা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছেও দাবিটি তুলে ধরা হয়েছিল। তার জবাব ছিল এমন- ‘আপনাদের এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান করুন, আমি নতুন বাস দিয়ে দেব। আজকের মধ্যে সমস্যা দূর করতে পারলে আমি আজকেই ঢাকা-আরিচা সড়কে নতুন বিআরটিসি বাস নামিয়ে দেব।’

মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কী সমস্যা, তার অনুসন্ধানে নেমে জানা যায়, আসলে রাজনৈতিক সমস্যা নয়, পরিবহন মালিকরা চান না এই রুটে বিআরটিসির আরও বাস নামুক। ঘটনাচক্রে পরিবহন মালিক সমিতির ওই নেতা রাজনীতিও করেন।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচল করা বাসগুলোর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন টিপুর চারটি, আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন মৌল্লার তিনটি, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এহতেশাম হোসেন ভুনু ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান, জেলা যুবলীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক খান তুষার, যুবলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান সুমন, তারেক, জিয়াউদ্দিন আহমেদ কবীর, শাহেদুল ইসলাম ও পাবেলের একটি করে বাস রয়েছে।

সব মিলিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার গুলিস্থান পর্যন্ত চার শতাধিক বাস চলে। এসব বাস থেকে প্রতিদিন মালিক সমিতি ২০০ টাকা, শ্রমিক সমিতি ৪০ টাকা, টার্মিনাল ভাড়া ৫০ টাকা, টার্মিনাল কমিটি ২০ টাকা ও সুপার ভাইজারদের জন্য ৬০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।

এই হিসাবে বাস থেকে মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামে প্রতিমাসে আদায় করা হয় দেড় লাখ টাকার বেশি। এই চাঁদার ভাগ প্রতিমাসে চলে যায় সরকারি দলের শ্রমিক সংগঠনের স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পকেটে। এই খাত থেকে অবৈধ সুবিধা ভোগ করায় মূলত তারাও চাচ্ছে না ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নতুন বিআরটিসি বাস নামানো হোক।

অপরদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বর্তমানে ৩৫টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তামজিদ-উল্লাহ-প্রধান লিল্টুর রয়েছে ১৬টি বাস। জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল রহিম খানের রয়েছে নয়টি বাস। শিবালয় উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলী আহসান মিঠুর নিজের ও এক আত্মীয়ের রয়েছে একটি করে বাস। আর ঢাকার গুলিস্থানের জনৈক কামাল মিস্ত্রি চালান বাকি আটটি বাস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নতুন বিআরটিসি বাস নামানোর বিপক্ষে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকার। তার সঙ্গে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন টিপু এবং জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও আরিচা ঘাটের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম খান। আরও আছেন দিঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মৌল্লা।

ওই নেতা বলেন, মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ওপর দিয়ে নতুন বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তখনই বাবুল, রহিম খান, টিপু ও মতিনরা বাধা হয়ে দাঁড়ান। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় নতুন বাস নামানো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা শ্রমিক লীগের এক নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, সরকারিভাবে নতুন বিআরটিসি বাস নামানো হলে স্থানীয় পর্যায়ের বাস মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়বে। এ কারণে বিআরটিসি বাস নামানোর বিপক্ষে মালিক ও শ্রমিক সমিতি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানিকগঞ্জের বাস মালিক ও শ্রমিকপক্ষ না চাইলে ঢাকা-আরিচা সড়কে কখনোই নতুন বাস নামাতে পারবে না।

ওই শ্রমিক লীগ নেতা বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে মালিকপক্ষের সাথে কথা না বলে বিআরটিসির এসি নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয় সরকার।

এ ব্যাপারে কথা বলতে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল রহিম খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন টিপু বলেন, ‘বাস মালিকদের বাধার কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নতুন বাস নামানো যাচ্ছে না এটা ঠিক না।…আমরাও চাই ঢাকা-আরিচা সড়কে নতুন বাস নামিয়ে যাত্রী হয়রানি কমিয়ে আনা হোক।

ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাবনায় ফুটপাতে গরম কাপড়ের দোকানে বাড়ছে ভিড় 
শুরুতেই সাজঘরে ফিরে গেলেন তানজিদ তামিম-লিটন দাস, চাপে বাংলাদেশ
মির্জাপুরে অবৈধ ৬ ইটভাটাকে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা 
বিটিআরসির দুই কমিশনারের নিয়োগ বাতিল করল সরকার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা