পাবনার সফল লিচু চাষি নাজমুল
একদিকে আশানুরূপ লিচুর ফলন হয়নি, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফলন বিপর্যয়ে পাবনায় এবার লিচু চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন- ঠিক সেই মুহূর্তে পাবনার ঈশ্বরদীর নাজমুল ইসলামের বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে লিচুর। বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় বেশ লাভবান হবেন তিনি।
জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বড়ইচারা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল করিম বিশ্বাসের ছেলে জিল্লু সেভ এগ্রো ফার্মের স্বত্তাধিকারী মো. নাজমুল ইসলাম জিল্লু বিএ (অনার্স) পাস করে চাকরি কিংবা ব্যবসায় না গিয়ে কৃষিতে জড়িয়ে পড়েন। পরিশ্রম মানুষকে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়- তার বাস্তব প্রমাণ জিল্লু নিজেই। একমাত্র কৃষিই তার প্রধান পেশা। দীর্ঘদিন থেকে তিনি লিচু চাষ করে আসছেন। তার বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় লাল টকটকে লিচু ঝুলে আছে। এবার তিনি লিচুর বাম্পার ফলন পেয়েছেন।
লিচু চাষি নাজমুল ইসলাম জিল্লু বলেন, ২০০৬ সালে মা-মাটিকে ভালোবেসে কোন কিছু না ভেবে কৃষিতে জড়িয়ে পড়ি। কৃষিকে এখন আর ছোট করে দেখার উপায় নেই। আধুনিক কৃষি দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে তুলছে। কৃষকেরা কায়িক পরিশ্রম করে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে কৃষি পণ্য উৎপাদন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সঠিক পরামর্শ ও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। অন্যান্য বাগানের চাইতে তার লিচু বাগানে এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে। সেই সাথে লিচু আকারে বড় এবং মূল্যও পেয়েছেন গতবারের চেয়ে বেশি। এবার তার খামার থেকে ১০ থেকে ১১ লাখ টাকার লিচু বিক্রয় করবেন বলে তিনি এ কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, লিচু বছরে মাত্র একবার ফলন দিয়ে থাকে। প্রতি বছর একইভাবে গাছে লিচু আসে না। একবার বেশি হলে অন্যবার ফলন কম হবে। ঈশ্বরদীতে একটি আধুনিক মানের লিচুর হিমাগার স্থাপন হলে এই লিচু সারাবছর রেখে বিক্রি করা যাবে। এতে লিচু চাষিরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন।
নাজমুল ইসলাম জিল্লু আরো বলেন, তার দুইটি বাগানে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। বাগানে এখনও যে লিচু আছে আরো দুই লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবেন বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক ও বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান কূল ময়েজ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবছর ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। উপজেলার বেশির ভাগ বাগানে এবার লিচু নেই। লিচু চাষ করে উপজেলার কৃষকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। জিল্লুর লিচু বাগান পরিদর্শন করে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। ঈশ্বরদীর সেরা লিচু এখন কৃষক জিল্লুর বাগানে। সঠিকভাবে পরিচর্যার কারণে জিল্লুর গাছের লিচু পরিমাণে বড় রংও সুন্দর হয়েছে। লিচু সংরক্ষণের জন্য ঈশ্বরদীতে একটি আধুনিক মানের লিচুর হিমাগার স্থাপনে সরকারের কাছে তিনি দাবি জানান।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত চাষি কিতাব আলী ওরফে লিচু কিতাব বলেন, এবার একদিকে লিচু গাছে মুকুল কম অন্যদিকে দফায় দফায় শিলাবৃষ্টি এবং ঝড়ে পাবনায় লিচু গাছ ও ফলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় ফলন বিপর্যয় হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রওশন জামাল জানান, এ বছর ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হলেও বৈরী আবহাওয়ায় ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। উপজেলার অনেক বাগানের গাছে মুকুল না আসায় এবার লিচু ধরেনি। উপজেলার অন্য লিচু বাগানের চাইতে জিল্লুর বাগানের গাছে প্রচুর পরিমাণে লিচু এসেছে। একই সাথে লিচু আকারে বড়, দেখতে সুন্দর খেতেও সুস্বাদু, রং টকটকে লাল।
তিনি জানান, শিক্ষিত যুবক জিল্লু কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে লিচু গাছের পরিচর্যা করার কারণে তার লিচু বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর জিল্লু লিচু বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার বলেন, পাবনা জেলায় এবার সাড়ে চার হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। প্রতি বছরই এ জেলায় লিচু চাষ বাড়ছে। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে দাবি করছেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।
(ঢাকাটাইমস/৩১মে/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন