‘ভ্রাম্যমাণ আদালত বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে’
ভ্রাম্যমাণ আদালত বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছে হাইকোর্ট। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ মত দিয়েছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার ৬৪ পৃষ্ঠার রায়টির পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, মোবাইল কোর্ট দেশের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হবে, যা সংবিধানের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং মাসদার হোসেনের মামলার আপিল বিভাগে প্রদত্ত রায়ের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।
রায়ের পর্যাবেক্ষণে বলা হয়, ‘আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ধারণার বিরোধিতা করি না, বরং আমাদের সমর্থন রয়েছে। কারণ হিসেবে বিচারকরা বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিঃসন্দেহে দ্রুত অপরাধ শনাক্ত করা সম্ভব হয়। দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট ও তৃণমূল পর্যায়ে বিচার সহজতর করতে মোবাইল কোর্টের মতো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা। এ ধরনের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট দেশের ক্রমবর্ধমান মামলা জটের ঢেউকে কমানোর কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলে, ‘একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিল সংশোধন করতে সরকার কেন এবং কীভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলো, তা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১৫ ধারা বলে এ আইনের তফসিল সংশোধনের ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ নিঃসন্দেহে ক্ষমতা পৃথককরণের ধারণাকে লঙ্ঘন করেছে।’
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ করে সংক্ষিপ্তভাবে রায় দিয়েছিল।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ইতিমধ্যে আপিল করেছে। আপিলের শুনানি আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল বিভাগ। ওই দিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সংবিধানের লঙ্ঘন এবং তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সম্মুখ আঘাত।
রায়ে বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ বাংলাদেশ কর্মকমিশনের সব সদস্য প্রশাসনিক নির্বাহী। প্রশাসনিক নির্বাহী হিসেবে তারা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন না।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ৫, ৬ (১), ৬ (২), ৬ (৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০, ১১, ১৩ ও ১৫ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব ধারা-উপধারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার পৃথক্করণ-সংক্রান্ত সংবিধানের দুটি মৌলিক কাঠামোর বিরোধী। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা ও বিতর্ক এড়াতে হাইকোর্টের রায়ে বিগত দিনে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া সব আদেশ, সাজা ও দণ্ডাদেশ মার্জনা করা হয়েছে।
রায়ে রিট আবেদনকারী দুই ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া সাজা ও জরিমানার আদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ লাখ টাকা জরিমানার অর্থ ৯০ দিনের মধ্যে আবেদনকারী মজিবুর রহমানকে ফেরত দিতেও বলা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০৭জুন/এমএবি/ডব্লিউবি)
মন্তব্য করুন