প্রতারণা: জ্বীনকে সোনার হার দিলে সন্তান মেলে!
কুমিল্লায় জ্বীন চিকিৎসক আফিয়া বেগম নামে এক ভণ্ড কবিরাজের প্রতারণার শিকার শতাধিক সন্তান প্রত্যাশী নারী। ওই ভণ্ড কবিরাজ জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ২নং উজিরপুর ইউনিয়নের সামুকসার গ্রামের মৃত বাচ্ছু মিয়ার স্ত্রী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জ্বীন চিকিৎসক আফিয়া বেগমের স্বামী দীর্ঘ ১৫ বছর আগে মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার কয়েক বছর পর পারিবারের জীবিকার তাড়নায় জ্বীন চিকিৎসা নামে কবিরাজী ব্যবসা শুরু করেন। তার এই প্রতারণা ব্যবসার শিকার হয়েছেন বেশিরভাগ গ্রামের সহজ সরল নারীরা। কারণ তার জ্বীন চিকিৎসার মধ্যে ছিল মহিলাদের সন্তান হয় না, তাদের জ্বীনের মাধ্যমে সন্তান ব্যবস্থা করা। ঘর ও বাড়ি বন্ধ করা, পানি পড়া দেয়াসহ সকল প্রকারের চিকিৎসা।
আরো জানা যায়, জ্বীন চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান ব্যবস্থা দেয়ার কথা শুনে সন্তানবিহীন মহিলারা স্বামীর অজান্তে ভণ্ড কবিরাজ আফিয়া বেগমের কাছে ছুটে আসতেন। আফিয়ার কাছে যাওয়ার পর তিনি সমস্যাগ্রস্তদের বলতেন- তোমার সন্তান হবে, কিন্তু তোমার দেহের, স্পর্শের সোনা, কানের দুল এবং গলার হার, নাকের ফুল- এই তিন প্রকারের সোনা জ্বীনদের এক সপ্তাহ বা একুশ দিনের জন্য দিতে হবে্ পরে তারা আবার পরিয়ে দেবে। কিন্তু অনেকের সোনা ফেরত দিত না। আর জ্বীনদের খরচ বাবদ প্রথম সপ্তাহে একুশ হাজার পাঁচশ টাকা অথবা পরের সপ্তাহে এগারো হাজার এক টাকা আদায় করতেন আফিয়া। এমনকি তিনি হুঁশিয়ারি দিতেন, লেনদেন তৃতীয় পক্ষ শুনলে জ্বীনেরা তোমাদের ক্ষতি করবে।
চৌদ্দগ্রাম মিয়াবাজার এলাকার রেহেনা বেগম নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তার পাঁচ বছর আগে কোন সন্তান হয়নি। তিনি পাশের এক মহিলার কাছে জানতে পেরে চৌদ্দগ্রাম উজিরপুর সামুকসার গ্রামের আপিয়া নামে এক ব্যক্তি জ্বীন চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান জন্মের ব্যবস্থা করেন। তার কথা শুনে কাউকে না জানিয়ে আফিয়া বেগমের কাছে ছুটে যান তিনি। তারপর আফিয়া বেগম সন্তান দেয়ার নাম করে রেহেনা বেগমের কাছ থেকে ৬ ভরি সোনা ও ২ লাখ বিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
আরেক ভুক্তভোগী কাশিনগরের ছালমা বেগমের চার ভরি সোনা এবং ৮০ হাজার টাকা, সামুকসার গ্রামের রহিমা বেগমের দুই ভরি সোনা এবং ৩১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া ভুক্তভোগী বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক সহজ সরল মহিলারা তাদের সোনাগুলো আর ফিরে পাননি এবং ক্ষতির কথা ভেবে জ্বীনের ভয়ে কারো কাছে বলতেও সাহস পান না।
আফিয়া বেগমের প্রতারণার শিকার আহছান উল্লাহ তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা জজকোটে একটি মামলা করেন।
আহছান উল্লাহ জানান, আফিয়ার দুই ছেলে, বড় ছেলে মো. মহাসিন মাদক, গাজা, ইয়াবার ব্যবসায় জড়িত। ছোটো ছেলে মো. মাছুম ধর্ষণের মামলার আসামি এবং সন্ত্রাসের সাথে জড়িত। তাদের ভয়ে গ্রামের কেউ ভণ্ড কবিরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কবিরাজ আফিয়া বেগমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। আফিয়া বেগমের মেয়ের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, আমার আম্মা এখন আর জ্বীনের মাধ্যমে মানুষের চিকিৎসা করে না, আগে করত।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. রুবেল হোসেন এবং ২নং উজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম জানান, ভণ্ড কবিরাজ জ্বীন চিকিৎসার নামে অনেক মা-বোনের সাথে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অনেক ভুক্তভোগী আমাদের অনেক অভিযোগ করেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু সব সময় আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ফয়সাল বলেন, আমি এই থানায় নতুন এসেছি। সেই কারণে এধরনের অভিযোগ কেউ আমার কাছে করেনি এখন পর্যন্ত। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন