রাঙামাটিতে দ্বিগুণ দামেও মিলছে না জ্বালানি তেল
পাহাড়ধসের ঘটনার ছয় দিন পর রাঙামাটির দুর্যোগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। বেশি দাম দিয়েও মিলছে না জ্বালানি তেল।
এদিকে রাঙামাটি-কাপ্তাই নৌপথে নৌযান চালু হওয়ায় কিছুটা কমতে শুরু করেছে দ্রব্যমূল্য। রাঙামাটি শহরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে সরবরাহ নেই জ্বালানি তেলের। ৮৯ টাকার অকটেন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে রাঙামাটি শহরে ৫ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। জ্বালানি তেলের অভাবে অনেক যানবাহন রাস্তায় নামেনি।
শনিবার পর্যন্ত রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা যায়নি। চট্টগ্রাম থেকে আসা যানবাহন রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের শালবাগান এলাকায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে যায়। এরপর যাত্রীরা শালবনের ধসে পড়া সড়ক পায়ে হেঁটে পার হয়ে পরে অটোরিকশায় রাঙামাটি শহরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে এখনো কোনো যান চলাচল করছে না।
যাতায়াতের বিকল্প হিসেবে চালু হয়েছে রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই নেভি ক্যাম্প পর্যন্ত নৌযান। অনেকে এই রুট ব্যবহার করে কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য এলাকায় যাচ্ছে। অন্যান্য এলাকা থেকেও কাপ্তাই হয়ে রাঙামাটি আসছে লোকজন।
ত্রাণ বিতরণে ধীরগতি
আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া অনেক মানুষ এখন আছে এক কাপড়ে। বাড়িঘর মাটির নিচে চলে যাওয়ায় কেউ কোনো কাপড় সঙ্গে আনতে পারেনি। তাদের অভিযোগ, পানি ও খাবার বিতরণ করা হলেও তাদের কাপড় দেওয়া হয়নি। রাঙাপানি ভাবনা কেন্দ্র, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বেতার এলাকায় আশ্রয় নেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের আবার অভিযোগ, যে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে গতকাল শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ শিং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, এটি প্রাথমিক সহায়তা। খাবার ও চিকিৎসা তাদের দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যা যা করণীয় তা সরকার করে যাচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সড়ক ও জনপদ, এলজিইডি সবাই একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
গত মঙ্গলবার ভোর ও সকালে রাঙামাটি জেলা বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসে সেনাবাহিনীর চার সদস্যসহ ১১৩ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে রাঙামাটি শহর এলাকায় মারা যায় ৬৭ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, বিলাইছড়িতে ৩ জন এবং জুরাছড়ি উপজেলায় মারা গেছে দুজন। নিহত সেনাবাহিনীর সদস্যরা হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, ল্যান্স কর্পোরাল আজিজুল এবং সিপাহী শাহিন।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। নিখোঁজদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর উদ্ধার কর্মীরা।
রাঙামাটি আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপাপ্ত কর্মকর্তা মো. কাজী হুমায়ন বলেন, গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রাঙামাটিতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৪৩.৪ মিলিমিটার। এটি রাঙামাটি ইতিহাসের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/মোআ)
মন্তব্য করুন