সিলেটের মতো রাজশাহীতেও জামায়াতের চাপে বিএনপি

রিমন রহমান, রাজশাহী
| আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৮, ১১:৪৩ | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০১৮, ০৯:২৯
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বুলবুল

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করেও পিছিয়ে এসেছে বিএনপির শরিক জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সমর্থন দিচ্ছে না দলটি। তারা জানিয়ে দিয়েছে, কিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে তাদের প্রার্থী আছে। তাদেরকে সমর্থন দিলেই কেবল মেয়র পদে বুলবুল তাদের ভোট পাবে।

আগামী ৩০ জুলাই হতে যাওয়া তিন সিটি নির্বাচন দিয়ে ১৯ বছর ধরে জোটবদ্ধ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই জমে উঠেছে সিলেট নিয়ে। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ওই মহানগরে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পাশাপাশি জামায়াতও প্রার্থী দিয়েছে এহসান মাহবুব জুবায়েরকে।

বিএনপি জানিয়েছে, অন্য দুই মহানগরের পাশাপাশি সিলেটেও ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী থাকবে। আর জামায়াত জানিয়ে দিয়েছে, জোটের একক প্রার্থী দিতে হলে সরে দাঁড়াতে হবে বিএনপিকেই।

জামায়াত ভোট করতে এতটাই অটল যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুরোধও তারা উপেক্ষা করেছে। ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে বৈঠকের সময় শরিক দলের নেতাদের অনুরোধকেও পাত্তা দেয়নি তারা। আবার গণমাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্য সত্য নয় জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতিও দিয়েছে দলটি। জানিয়ে দিয়েছে, সিলেটে তাদের প্রার্থী জুবায়েরই থাকছে।

বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সিলেট নিয়ে এই মুখোমুখি অবস্থানের প্রভাব রাজশাহীতেও পড়েছে। দলের নেতারা সিলেট নিয়ে বিএনপিকে চাপ দিতে যেসব কৌশল নিয়েছেন তা হলো রাজশাহীর নির্বাচন নিয়ে দর কষাকষি করা।

মহানগর বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, নগরীর ১৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪টি ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে দুটি। জামায়াত বলছে, এই ১৬ জনকেই সমর্থন দিতে হবে বিএনপিকে।

এই সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড আছে ৩০টি, সংরক্ষিত নারী আসন আছে ১০টি। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধেক ছেড়ে দেয়ার দাবিকে জামায়াতের ‘অতিরিক্ত আবদার’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। কিন্তু এই জামায়াতের মনোভাবের কারণে তাদেরকে কড়া ভাষায় কিছু বলতে পারছেন না নেতারা।

দর কষাকষিতে বিএনপির পিছিয়ে থাকার আরেকটি কারণ হলো তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে ভোটের দিন বিএনপি বা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের আশপাশে সেভাবে অবস্থান নেন না। তবে এ ক্ষেত্রে দলের প্রতি জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা বেশি। চাপের মুখেও তারা কেন্দ্র ছেড়ে যান না। আর কেন্দ্রে কর্মী না থাকলে ভোটে প্রভাব পড়ে। এজন্যও জামায়াতকে অসন্তষ্ট করতে চাইছে না বিএনপি।

তবে জামায়াতের নেতারা যেসব ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন, সেগুলোর একাধিক কাউন্সিলর বর্তমানে বিএনপি দলীয়। এবারের নির্বাচনে তারাও প্রার্থী হয়েছেন। জোটের শরিক দলের আবদারে সরে যেতে হবে, এটি মেনে নিতে পারছেন না তারা। আর বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ হলে মেয়র নির্বাচনে প্রভাব পড়ে কি না, সেটি নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে দলে। সব মিলিয়ে বিএনপির অবস্থা অনেকটা শাঁখের করাতের (উভয় সংকট) মতো।

দেশের যেসব মহানগরে সিটি করপোরেশন করা হয়েছে তার মধ্যে জামায়াতের অবস্থান সবচেয়ে শক্তিশালী নিশ্চিতভাবেই রাজশাহীতে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সেখানে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী দলটিরই একজন প্রার্থী। পরে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে দলটির প্রভাব কমিয়েছেন বটে, তারপরও এখনও তাদের পক্ষে সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট আছে।

জামায়াতের ধারণা, বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান হলেও তাদের সমর্থন ছাড়া সেখানে মেয়র পদে লিটনের সঙ্গে বিএনপির বুলবুল পেরে উঠবেন না। আর এই বার্তাটা বিএনপিকে পৌঁছে দিতে চান তারা।

রাজশাহীতে জামায়াতকে কয়টি কাউন্সিলর পদে সমর্থন দেয়া হবে এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে চলছে দর কষাকষি। দুই দলেরই একাধিক নেতাকর্মী বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু তারা কেউই নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি।

এ নিয়ে বুধবার রাতে নগরীর উপশহরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির হোসেনের বাসায় বৈঠকে বসেন বিএনপি নেতারা। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির মেয়র প্রার্থী বুলবুল, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে জামায়াতের সঙ্গে দ্রুতই বিষয়টি মীমাংসার তাগিদ দেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আর এরপর যেসব ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী রয়েছে, সেসব ওয়ার্ডের নিজেদের দলের প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন মহানগর বিএনপির নেতারা। কোনোভাবে প্রার্থীদের বুঝিয়ে আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো যায় কি না তার চেষ্টা করছেন তারা।

জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিলন বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি। বলেন, ‘কাউন্সিলর পদে তো দলীয় নির্বাচন হচ্ছে না। সেখানে যে কেউ প্রার্থিতা করতে পারেন। এ নিয়ে জামায়াত বা বিএনপির মাথাব্যাথা নেই। আর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ২০ দলের প্রার্থী। তার পক্ষে শুধু জামায়াত কেন, ২০টি দলের নেতাকর্মীরাই থাকবেন। এখনও সবার নির্বাচনী মাঠে নেমে কাজ করার মতো সময় আসেনি। সময় হলে সবাই কাজ করবেন। জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে, দেখা হচ্ছে। কোনো সমস্যা নেই।’

তবে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, ‘কেন্দ্র বলেছে রাজশাহী ও বরিশালে আমাদের কোনো মেয়র প্রার্থী থাকবে না। তবে সিলেটে হারি-জিতি আমাদের প্রার্থী শেষ পর্যন্ত থাকবে। এই কারণে আমরা রাজশাহীতে সব প্রস্তুতি নিয়েও প্রার্থীর মনোনয়নপত্র তুলিনি। পেপার-পত্রিকায় দেখছি, ঢাকায় ২০ দলের মিটিং হচ্ছে। ২০ দল বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’

আগামী ৩০ জুলাইয়ের ভোটের জন্য রাজশাহী মেয়র পদে জামায়াত তাদের মহানগর কমিটির সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেনকে আগেই প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছিল।

তবে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটির পক্ষে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ না থাকায় তারা আগাচ্ছিল ‘রাজশাহী নাগরিক পরিষদের’ ব্যানারে। সিদ্দিক হোসেনের ছবি দিয়ে নগরীর মোড়ে মোড়ে পোস্টার-ফেস্টুনও সাঁটানো হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত কারাবন্দী সিদ্দিকের পক্ষে আর মনোনয়নপত্র তোলেননি স্থানীয় নেতারা।

নিজেদের প্রার্থী না থাকায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের এখন পর্যন্ত মেয়র নির্বাচন নিয়ে কেনো রকম চিন্তা ভাবনা দেখা যায়নি। তবে কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের ঘিরে তাদের। তৎপরতা দৃশ্যমান।

মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আবু ইউসুফ সেলিম। তিনি বলেন, ‘কী হচ্ছে না হচ্ছে সব সময় হলেই জানতে পারবেন। ১০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।’

এই জামায়াত নেতার ১০ তারিখের কথা উল্লেখ করার কারণ তার আগের দিন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ আছে।

ঢাকাটাইমস/০৬জুলাই/আরআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

সরকার সহিংসতা করে দায় আমাদের ওপর চাপিয়েছে: নজরুল ইসলাম

আ স ম রবের বাসভবনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল

মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল 

সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি

তিস্তা প্রকল্পের সম্প্রসারণের নামে গাছ কাটা নির্মমতা: ন্যাপ 

শহীদ মিনারে আকবর খান রনোকে গার্ড অব অনার, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন

বিভাজন থেকে বেরিয়ে সবাইকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করা উচিত: মির্জা ফখরুল 

এদেশে এসে যারা দাপট দেখাবে তাদের ক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যেই সংকুচিত: ওবায়দুল কাদের 

শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আকবর খান রনোর মরদেহ

শহীদ মিনারে আকবর খান রনোর প্রতি সর্বস্তরের শ্রদ্ধা ১১টায়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :