জোড়া জুতায় উষ্ণতা

চলতে-ফিরতে আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী জুতা। আর হিম হাওয়ার এই সময়টাতে এখনই পোশাকের দিকে নজর না গেলেও পায়ের সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে মানুষ চেনা যায় তার ব্যবহারের জুতা দেখে। একজোড়া সুন্দর জুতা ব্যক্তিত্ব প্রকাশে বিশেষভাবে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, একজোড়া সুন্দর জুতাই একজনের সম্পর্কে অনেক তথ্যও পাওয়া যায়। তবে জুতা নির্বাচনে সৌন্দর্যের পাশাপাশি সবসময়ই আরামের কথা মাথায় রাখতে হয়।

রকমফের...

শীতে ব্যালেরিনা জুতার কদর বেড়ে যায়। কারণ এই জুতায় একেবারেই হিল থাকে না। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপারটি হলো বাহারি নকশার কারণে রকমারি ডিজাইন পাওয়া যায়। কখনো একরঙা বা মেটালিক রঙের, আবার কখনো প্রিন্ট। আবার পুঁতি, পাথর বা ব্রোচের মতো নকশাও আছে। আগে শুধু চামড়া দিয়েই তৈরি হলেও এখন সিনথেটিক, আর্টিফিশিয়াল লেদার আর কাপড়ও জুতায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে জিন্স বা ডেনিমের ওপর পোলকা ডট ও ফুলের নকশাও পাওয়া যাচ্ছে ব্যালেরিনার মধ্যে।

আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল থাকতে কেডস বা কনভার্সের ব্যবহারও বেশি। এর সোল রাবার বা নরম প্লাস্টিকের হওয়ায় পায়ের চাপ যেমন কম লাগে তেমনি এর উপরের দিকটা কাপড় বা কৃত্রিম চামড়া জাতীয় উপাদানে তৈরি হওয়ায় জুতার ভেতরে গরম থাকে। হাই কনভার্স, সেমি হাই কনভার্স, শু কনভার্স, স্পোর্টস কনভার্সের ব্যবহার তুলনামূলক বেশি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কনভার্সের মধ্যে এডিডাস, রিবক, গুচি, উডল্যান্ড, জিএমটি, ভ্যালরওয়ালফ, চিং মিং শু, জেনিস, বে এর চাহিদা বেশি।

স্নিকার জাতীয় জুতা খেলা কিংবা জগিংয়ের জন্য উপযোগী। তবে সর্বত্র এখন এর ব্যবহার বেড়ে গেছে। কাপড়ের তৈরি হওয়ায় পরতে বেশ আরামদায়ক। ডেনিম ফেব্রিকসে তৈরি স্নিকারের বেশ ব্যবহার থাকলেও কিছু স্নিকার ডিজাইনে প্রিন্টেড ডেনিম ব্যবহার হচ্ছে। ওয়েস্টার্ন-ক্যাজুয়াল সাজের সঙ্গে মানানসই স্টাইলের স্নিকার্স বেছে নিচ্ছেন মেয়েরা। জিন্স, শর্টস, স্কার্টস বা ড্রেসের সঙ্গে পরতে পারেন স্নিকার্স।

বুট জুতা ওয়েস্টার্ন-ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে অনায়াসেই মানিয়ে যায়। নানা নাম আর নকশার বুট জুতা পাওয়া যায়। হিল বুট, অ্যাংকেল লেন্থ বুট, নি লেন্থ বুটগুলোতে লেদারের পাশাপাশি মেটাল নকশা, চেইন বা স্টোন বসানো রকমারি ডিজাইনের বুট আছে। গোড়ালি থেকে শুরু করে হাঁটু পযর্ন্ত ঢাকা বুট জুতাও আছে। শুধু দেশিই নয় থাইল্যান্ড, চীনের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের বুটের কালেকশন রয়েছে বাজারে।

যখন যেমন জুতা

বেড়ানোর মৌসুম মানেই শীত। আর সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ানোর জন্য চাই মানানসই জুতা। আবার অফিসের পরিবেশে একরকম তেমনি বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা পার্টিতে আরেকরকম, আর এভাবেই বদলে যায় জুতার স্টাইল। তাই কোথায় যাওয়া হচ্ছে এর ওপরও নির্ভর করে নির্বাচন করতে হবে জুতা। ডেনিম প্যান্টের সঙ্গে এ জুতা অনায়াসে পরা যায়। অফিস গেটআপ বা করপোরেট জগতে জুতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ফরমাল পোশাকের সঙ্গে কফি, বাদামি অথবা পোশাকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ লেদার বুট মানিয়ে যায়। অফিশিয়াল শু-র পাশাপাশি রয়েছে ক্যাজুয়াল জুতা। লেদার বা আর্টিফিশিয়াল লেদার ছাড়াও মখমল, ডেনিমসহ বিভিন্ন ফেব্রিকসের তৈরি ফ্যাশনেবল জুতার দেখা মেলে। আর ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে তো ইচ্ছামতো রং আর নকশা নেয়াই যায়। মেয়েদের জন্য উঁচু হিলের পাম্প শু মানিয়ে যাবে যেকোনো দাওয়াতে বা রাতের অনুষ্ঠানে। দেশি পোশাক যেমন শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গেও নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সামনের দিকটা একটু চোখা ধরনের ব্যালেরিনা বেছে নেওয়া ভালো। শাড়ির সঙ্গে অল্প হিলের জুতা মানানসই হবে।

কেনার আগে ভাবতে হবে

সারা দিনের আপনার সঙ্গী যেহেতু জুতা তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। জুতার সোল ভালোভাবে দেখে কিনুন। জুতার সোল খুব শক্ত হওয়া ভালো নয় বরং সহজে বাঁকানো যায় এমন সোল বাছাই করা উচিত। মেয়েদের ক্যাজুয়াল জুতার ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল বিশেষ করে একদম ফ্ল্যাট চটিগুলো কেনাই ভালো। কারণ এ জুতাগুলো বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। ফলে সহজেই পোশাকের সঙ্গে জুতার ম্যাচিংটাও করা যায়। শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে জুতা কিনতে অবশ্যই হালকা হিলসহ পাম্প শু দরকার। তবে হিলের জুতা কেনার পর সেলাইয়ের দোকান থেকে হিলের নিচে অতিরিক্ত একটা সোল লাগিয়ে নিলে অনেক দিন ভালো থাকবে। খুব আঁটসাঁট জুতা না নেওয়াই ভালো। মোজা পরতে চাইলে জুতা কেনার সময় বিষয়টি মাথায় রাখুন। কারণ জুতা যেমনই হোক, হাঁটায় আরামদায়ক হতে হবে। জুতা পরার সময় জোর করে পা ঢোকাবেন না। তাই জুতা কেনার সময় খেয়াল রাখুন পায়ের বড় আঙুলের সামনে অন্তত এক সেন্টিমিটার জায়গা যেন খালি থাকে।

জুতার যতনে

চলতি ট্রেন্ডের কথা মাথায় রাখার পাশাপাশি জুতার টেকসইর ব্যাপারটিও ভাবতে হবে। তাই জুতার প্রয়োজন বিশেষ যতœ। বাইরে থেকে ফিরে প্রথমে জুতা ব্রাশ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করুন। খোলা বাতাসে কিছুক্ষণ রেখে তারপর কাগজে মুড়িয়ে বাক্সে ঢুকিয়ে রাখুন। বুট জুতা পরিষ্কার করতে হবে ভিনেগার ও পানির দ্রবণে ডুবিয়ে রেখে নরম টুথব্রাশ দিয়ে। তুলে রাখার আগে জুতার ভেতরে খবরের কাগজ গুঁজে রাখলে আকৃতি ভালো থাকবে। লেদারের জুতা নরম শু-ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। নরম শু-ব্রাশ না পেলে পুরানো সুতি কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন। কাপড়ের জুতা ময়লা হলে পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ধুয়ে রোদে শুকালেই পরিষ্কার হয়ে যায়। চটি জুতার সোল ক্ষয়ে গেলে সেটা তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করে নিতে হবে। যাদের পা খুব ঘামে, তারা আবরণওয়ালা জুতা না পরলেই ভালো করবেন। আবরণওয়ালা জুতা নিয়মিত পরলে অবশ্যই দিনে কয়েক ঘণ্টা পায়ে যেন বাতাস লাগে সে ব্যবস্থা করবেন। চামড়ার জুতা বেশি দিন বদ্ধ জায়গায় রাখলে রং নষ্ট হয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে চামড়া ওঠে যেতে পারে। তাই চামড়া বা কৃত্রিম চামড়া জাতীয় জুতা আলো-বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় সুতির কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখলে ভালো থাকবে বেশিদিন।

যেখানে মিলবে

জুতা এবং স্যান্ডেলের দাম নির্ভর করে ডিজাইন, ব্যবহার ম্যাটেরিয়াল এবং পণ্যের গুণগত মানের ওপর। এখন দেশে প্রস্তুত জুতা এবং স্যান্ডেল যেমন পাওয়া যায়, তেমনি বাইরে থেকেও আসছে নানা ডিজাইনের জুতা। এ জুতাগুলো শীত নিবারণের পাশাপাশি স্টাইলিশ করে তুলবে দারুণভাবে। এদেশে জুতার সবচেয়ে বড় মার্কেট হলো এলিফেন্ট রোড। পাশাপাশি বাটা, এপেক্স, জেনিস, লিবার্টি, বে এম্পোরিয়াম, স্পার্ক গিয়ার, গ্রেটিংসসহ দেশের বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে পাবেন নান্দনিক ডিজাইনের সব জুতার কালেকশন।

(ঢাকাটাইমস/২০ডিসেম্বর/টিএ/টিএমএইচ)