সংকটে তৃণমূল, তবুও নীতিতে অনড় মমতা

কলকাতা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ জুন ২০১৯, ২১:০৩

লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল আসেনি তৃণমূল কংগ্রেসের। এই ফল বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে টু শব্দটিও করছেন না দলের প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে হঠাৎ করেই উত্থান হয়েছে হিন্দুত্ববাদী কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক দল বিজেপির। ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া নিজের দল থেকে নেতাকর্মীদের বিজেপিতে যাওয়াও থামাতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দলবদলের দলে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন এমপি, এমএলএ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত প্রধানও রয়েছেন। এ ছাড়া বিগত ৩ বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অন্তত ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সহিংসতা থামার পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটেই চলছে দলটিতে। এসবের পরও নিজের নীতিতে অনড় মমতা। আর সব মিলিয়ে সংকটে পড়েছে তার দল তৃণমূল কংগ্রেস।

কলকাতাভিত্তিক কয়েকজন পর্যবেক্ষক জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা ইস্যুর মতো বিভিন্ন বিষয়ের কারণে তার জনপ্রিয়তা কমে গেছে। অন্যদিকে বিজেপি সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও তাই চান। ফলে নতুন সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়াই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি চুক্তি করে ফেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সম্প্রতি রেড রোডে ঈদ উপলক্ষে দেওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণেও কোনো পরিবর্তনের আভাস মেলেনি। মুসলমানদের সমাবেশে বিজেপির বিরুদ্ধে স্বভাবজাত আক্রমণ চালান তিনি। অভিযোগ করেন বিজেপি ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে।

দিল্লির এক পর্যবেক্ষক প্রশ্ন করেন, পশ্চিমবঙ্গের ওই সভায় কতজন অবাঙালি মুসলমান ছিলেন আর কতজন বাঙালি মুসলমান? এখানে প্রায় ৩ কোটি মুসলমান রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই দেশভাগের সময় বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। এ ছাড়াও তার দাবি, কিছু অবাঙালি মুসলমান পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর। তাদের সংখ্যা ১৮ লাখের মতো। তারা পার্ক সার্কাস, রাজাবাজার, মেতিয়া বুরুজ, ওয়াটগঞ্জ, হাওড়া, ব্যারাকপুর এলাকাগুলোতে বসবাস করছে।

প্রথমে বামপন্থীরা এবং পরে কংগ্রেস নেতারা তাদের সহায়তা করে। তারা কংগ্রেসকে ভোটও দেয়। তবে কংগ্রেসের এই বন্ধসুলভ আচরণ তারা বেশিদিন মনে রাখেনি। একসময় তারা বামপন্থীদের ভোট দিতে শুরু করে। ২০১১ সালে বাম দলগুলোর পরাজয়ের পর তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন দিতে শুরু করে। উর্দুভাষী এই মুসলমানরা দিল্লির বিজেপি সরকারকে সমর্থন দিতে চান না।

তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলমান মন্ত্রী ও সাবেক মেয়র ফিরহাদ হাকিম এক সময় সফররত এক পাকিস্তানি দূতকে গর্ব করে বলেওছিলেন পশ্চিমবঙ্গের এক অংশ এখনও করাচির মতো।

পশ্চিমবঙ্গে ১৯৪৭ সালে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ১৫ শতাংশ। আর এখন তা বেড়ে ৩০ শতাংশ। কাশ্মির ও আসামের পরে এখানেই সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস। বাম দল, কংগ্রেস ও তৃণমূলÑ সবাই মুসলমানদের তাদের ভোট ব্যাংক বানানোর চেষ্টা করেছে। এত বছর তৃণমূল কংগ্রেসও তাদের সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক ভাবতো মুসলমানদের। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ধাক্কা খাওয়ার কারণ দলটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিজেপি বা অন্যদলগুলোকে ভোট দিয়েছে মুসলমানদের একটি অংশ। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমান ভোটারদের যে একচেটিয়া সমর্থন পেয়ে আসছিল এবারই তাতে এত বড় আঘাত লেগেছে।

বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ের আগে তৃণমূল কংগ্রেসেরও অনেক উত্থান-পতন ছিল। লোকসভা নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পাওয়ারও রেকর্ড রয়েছে দলটির। তবে ২০০৬ সালে শক্তিশালীভাবে ফিরে আসে দলটি। ২৩০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৫টিতে জয়লাভ করলেও জনসমর্থন তাদেরই বেশি ছিল। পাঁচ বছর পর ২০১১ সালে ক্ষমতায় বসে তৃণমূলই। এরপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে ২০১৯ সালে এসে আবার সবকিছুর পরিবর্তন। বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে এখন দলটি।

অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। খুব বেশি পথ তার জন্য খোলা নেই। দলে অনেক লাগামহীন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। তার দলের নির্ভরযোগ্য সদস্যরা এখন অন্য দলে যাওয়ারও চিন্তা করছে।

ঢাকাটাইমস/১৫জুন/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :