পাপুলকে সহযোগিতা ও অর্থপাচারের অভিযোগ কুয়েতের দুই এমপির বিরুদ্ধে

মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক বাংলাদেশের সাংসদ শহিদ ইসলাম পাপুলকে সহযোগিতা এবং অর্থপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে দেশটির দুই সাংসদের বিরুদ্ধে। ওই দুই সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস।
গতকাল শনিবার কুয়েতি পত্রিকা আল কাবাসের বরাত দিয়ে আবুধাবিভিত্তিক গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
গালফ নিউজে ওই দুই সাংসদের নাম প্রকাশ না করে বলা হয়, বাংলাদেশি সাংসদকে সহযোগিতা এবং অর্থপাচারে জড়িত থাকার কারণে কুয়েতের দুই সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস। খুব দ্রুতই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। সেজন্য সাংসদ হিসেবে যে দায়মুক্তি তারা পান, তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হবে প্রসিকিউশনের তরফ থেকে।
এদিকে প্রসিকিউশনের আবেদনে কুয়েতের সমাজ কল্যাণমন্ত্রী মরিয়ম আল আকিল ইতোমধ্যে দেশটির জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ দিয়েছেন। গালফ নিউজে বলা হয়, মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার আবেদন জানিয়েছিল পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস। সেই প্রেক্ষিতে জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে তিন মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশি সাংসদ পাপুলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কুয়েতের এক নারী ব্যবসায়ীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির বিচার বিভাগ।
অর্থ ও মানবপাচার, ভিসা বাণিজ্য ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে বর্তমানে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে সাংসদ পাপুল। গত ২৪ জুন বাংলাদেশি এই সাংসদকে কুয়েতের অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশে ২১ দিনের জন্য জেলে পাঠানো হয়।
সাংসদ পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত চলছে। কুয়েতের দুই সরকারি কর্মকর্তা ও এক স্থানীয়কে ভিসা বাণিজ্যের জন্য বিপুল পরিমাণ ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি পাপুল জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। ৫০ লাখ কুয়েতি দিনারসহ (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা) পাপুলের পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির ধারণা। কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সেবা খাত, নিরাপত্তা, নির্মাণ, আবাসন, পরিবহন, তেল শোধন প্রভৃতি খাতে কার্যক্রম রয়েছে মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের। কুয়েতের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ব্যবসায় রয়েছে তাদের। পাপুলের বিরুদ্ধে ওঠা মানবপাচারের অভিযোগ তদন্ত হওয়ার বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় কুয়েত সিআইডির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কুয়েতি পত্রিকা আল কাবাস ও আরব টাইমস।
(ঢাকাটাইমস/২৮জুন/এনআই/এমআর)

মন্তব্য করুন